শীতের পোশাক কেনায় ধূম

এইমাত্র জাতীয়

আহমেদ হৃদয় : দেশের উত্তরাঞ্চলে শীত এসেছে বেশ আগেই। ষড়ঋতুর দেশ আমাদের বাংলাদেশ। নভেম্বর মাস শেষ, আসছে ডিসেম্বর মাস। শীতের আগের ঋতুটি হচ্ছে হেমন্ত। প্রকৃতিতে চলে বর্ষার বিদায় আর শীতের আগমনের প্রস্তুতি। প্রকৃতিতে শীত আসে একটু একটু করে। শীতের আবহ শুরু হয়ে গেছে। ভোরের নরম রোদে কুয়াশার আঁচল সরিয়ে মুক্তো দানার মতো দ্যুতি ছড়াতে শুরু করেছে শিশিরবিন্দু। বাতাসে হিমের ছোঁয়া, গাঁ শিরশির করে। ঘাঁসের ওপর শিশির জমে থাকে। দিনে হালকা গরম, রাতে শীতল হাওয়া আর ভোরের ঘন কুয়াশা বলে দিচ্ছে শীত আর বেশি দূরে নেই। ইতোমধ্যে দেশের উত্তরের জেলাগুলোতে শীত পড়ে গেছে। সূর্যাস্তের সাথে সাথে শীত পড়তে থাকে। রাত যত গভীর হয় শীতের মাত্রা তত বৃদ্ধি পায়। এদিকে ধীরে ধীরে রাজধানী ঢেকে যাচ্ছে শীতের চাদরে। সন্ধ্যা হলেই হালকা ঠান্ডা অনুভূত হয়। আর রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীত অনুভূত হয়। এজন্য শীতের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে শীতের পোশাকের দোকানে যাচ্ছেন অনেকেই। কেউ কেউ শীতের পোশাক কিনছেন পছন্দ হলেই। শীতের আগমন উপলক্ষ্যে দোকানিরাও মেলাচ্ছেন শীতের পোশাকের পসরা। শীতের আগমন উপলক্ষ্যে রাজধানীর শ্যামলী, ফার্মগেট, গুলিস্তান, বঙ্গ মার্কেট, নিউমার্কেট, নুরজাহান ও ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটসহ ফুটপাতের বিভিন্ন দোকানে শীতের পোশাক বিক্রি হচ্ছে। মার্কেট ঘুরে শীতের কাপড়ের দোকানে লক্ষ্য করা গেছে ক্রেতারা কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন। ক্রেতারা মনে করছেন শীত বাড়লে কাপড়ের দামও বেড়ে যাবে, তাই আগেই কিনে নিচ্ছেন শীতের পোশাক। সন্ধ্যার পর এখন রাজধানীতে অনেককেই দেখা যায় শীতের কাপড় পরে ঘুরতে। শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে দেখা গেছে উপচে পড়া ভীড়। সেইসাথে ব্যস্ত সময় পার করছে লেপ-তোষকের ব্যবসায়ীরা আর কারিগরেরা।
বঙ্গমার্কেটের এক ক্রেতা হাবিবের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এখনো শীত তেমন একটা পড়েনি। তাই দোকানগুলোতে একটু ভিড় কম হবে। এতে ভালোভাবে পছন্দের কাপড় কিনতে পারবো।
আরেক ক্রেতা রাব্বি বলেন, পুরোপুরি শীত আসার আগে শীতের জামা অনেকটা কম দামে কেনা যায়। তাই এখনো যেহেতু পুরোপুরি শীত পড়েনি তাই কেনাকাটার কাজটা এখনই সেরে রাখছি।
রাজধানীর মিরপুরের এক লেপ-তোষক ব্যবসায়ী হুমায়ুনের সঙ্গে কথা হলে তিনি সকালের সময়কে জানান, রাজধানীতে এখন রাতে বেশ ভালই শীত পড়ে। সেজন্য আমার দোকানের তোষকের বিক্রি এখন অনেকটাই বেড়েছে। ক্রেতারা লেপের থেকে তোষক বেশি চাচ্ছে। তাই আমার দোকানের কারিগরেরা তোষক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
নিউমার্কেটের ফুটপাতের বস্ত্র ব্যবসায়ী রাহুল নামের এক যুবকের সঙ্গে কথা হলে তিনি সকালের সময়কে জানান, দিনে তেমন একটা শীত না পড়লেও সন্ধ্যা হতে না হতেই রাজধানীতে এখন কিছুটা শীত পড়ে। সেজন্য আমার দোকানে সন্ধ্যার পর শীতের কাপড় কিনতে অনেকেই ভীড় জমায়। তবে পুরুষদের তুলনায় আমার দোকানে মহিলাদের ভীড় বেশি হয়।
নিউমার্কেটের আরেক ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন বলেন, আমার দোকানে গত কয়েকদিন ধরে যারা আসছেন তাদের বেশিরভাগই তোষক এবং লেপের কাস্টমার। কম্বলের চাইতে লেপের দাম কম এবং বেশি আরামদায়ক হওয়ায় ক্রেতারা লেপের দিকেই বেশি ঝুঁকছেন। বছরের প্রায় ৮মাস অলস সময় কাটে কারিগরদের। এ সময় তাদের কেউ কেউ ব্যস্ত হন ভিন্ন পেশায়। তবে শীত মৌসুমের শুরুতে আবারো ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কারিগরেরা। এবার লেপ-তোষকের বেশি কেনা-বেচায় খুশি ব্যবসায়ী ও কারিগরেরা।
তার দোকানের কারিগর আলী আকবর বলেন, কয়েকদিন ধরে খুবই ব্যস্ত সময় পার করছি। কারণ শীত যত বেশি পড়বে লেপ-তোষকের চাহিদা তত বেশি হবে। একটা লেপ তৈরি করতে মজুরি পাই ২০০ থেকে ৩০০ টাকা।
রাজধানী ঢাকাতে রেডিমেট লেপের ক্ষেত্রে সিঙ্গেল লেপ ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেমি-ডাবল লেপ ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা, ডাবল লেপ পাওয়া যাবে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে।
নিউমার্কেটে কথা হয় এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি একটি তোষক বানাতে এসেছি। আমরা ঢাকায় ব্যাচেলর থাকি। তাই আমাদের ফ্লোরিং করতে হয়। আর এখন রাতে মোটামুটি ভাল রকমের শীত পড়ে। ফ্লোরে ঘুমাতে ঠান্ডা লাগে। তাই একটি তোষক বানাতে এসেছি।


বিজ্ঞাপন