ফুটবল কিংবদন্তির চিরবিদায়
বিশেষ প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুটবল কিংবদন্তী দিয়েগো ম্যারাডোনার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বৃহস্পতিবার এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই আর্জেন্টাইন খেলোয়াড় দিয়াগো ম্যারাডোনা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন এবং যুগে যুগে তার ক্রীড়া নৈপুণ্য ভবিষ্যত ফুটবল খেলোয়াড়দের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রী এই ফুটবল মহানায়কের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
বাংলাদেশ দলের সঙ্গে ম্যারাডোনার বিরল মুহূর্ত : ফুটবলের সর্বকালের সেরাদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় প্রথমদিকে আছেন দিয়াগো ম্যারাডোনা। ফুটবলের কিংবদন্তি তিনি। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী এই ফুটবলার বুধবার রাতে (বাংলাদেশ সময়) না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তার চিরবিদায়ে কাতর ফুটবল বিশ্ব।
কিংবদন্তি এই ফুটবলারের মৃত্যুর আগে ২০১৮ সালের মার্চ মাসে আবুধাবিতে ম্যারাডোনার দেখা পেয়েছিল বাংলাদেশ ইউনিফায়েড দল। বাংলাদেশ দলের সঙ্গে ম্যারাডোনার বিরল সে মুহূর্ত এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেছে। সেদিন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তিকে সামনাসামনি দেখতে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়েছেন যান লাল-সবুজের খেলোয়াড়রা।
ওইদিন আবুধাবিতে অনুশীলনে ব্যস্ত ছিল বাংলাদেশ ইউনিফায়েড দল। এমন সময়ে চমকে উঠেন দলের সকলে। মাঠে তাদের সঙ্গে দেখা করতে হাজির হন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনা।
আবুধাবির ফুটবল ক্লাব আল ফুজাইরাহর কোচের দায়িত্বে ছিলেন ম্যারাডোনা। মঙ্গলবার দলের অনুশীলন শুরুতে দেরি হওয়ায় চলে আসেন পাশের মাঠে। সেখানেই ঘাম ঝরাচ্ছিল বাংলাদেশের ইউনিফায়েড দলের সদস্যরা।
‘আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না আমি কিংবদন্তি ম্যারাডোনার দেখা পেয়েছি’ -এভাবেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন মাহমুদুল হাসান নামের একজন ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড খেলোয়াড়। খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলার ইচ্ছা থাকলেও সময় স্বল্পতায় কেবল ছবি তুলে সেদিন চলে যান ম্যারাডোনা।
ফুটবল কিংবদন্তি ম্যারাডোনার চিরবিদায় : আর্জেন্টিনা ফুটবল লিজেন্ড ডিয়েগো ম্যারাডোনা মারা গেছেন। বুধবার নিজ বাসায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। ম্যারাডোনার আইনজীবী ম্যাথিয়াস মারলাহোস এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, বেশ কয়েক দিন অসুস্থ ছিলেন তিনি। তবে দুই সপ্তাহ আগে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হলেও, ডাক্তাররা বলেছিলেন আশাতীত দ্রুততম সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। যদিও মাদকাসক্তির কারণে তাকে বাড়িতে নয়, পাঠানো হয়েছিল বুয়েন্স আয়ার্সের একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে। এরপর তাকে নেয়া হয় নিজের বাড়ি তিগ্রেতে। সেখানেই আজ হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক করেন তিনি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এই কিংবদন্তি।
আর্জেন্টাইন ক্লাব বোকা জুনিয়র্স থেকে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ম্যারাডোনা। এরপর ইতালিয়ান ক্লাব ন্যাপোলি ছিল তার সোনালি যুগের ক্লাব। খেলেছেন বার্সেলোনার জার্সিতেও। কিন্তু ১৯৮৬ বিশ্বকাপে একক নৈপুণ্যে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতানোর পর থেকেই ফুটবল বিশ্বে অবিসংবাধিত কিংবদন্তিতে পরিণত হন তিনি। ১৯৯০ বিশ্বকাপেও আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তুলেছিলেন তিনি। সেবার জার্মানির কাছে হেরে শিরোপা হাতছাড়া করতে হয় তাকে। এছাড়া ইউরোপিয়ান ফুটবল ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলির অবিসংবাদিত কিংবদন্তি ছিলেন তিনি।
কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যে দুটি গোল করেছিলেন, সে দুটিই ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নিয়েছে। প্রথমটি করেছিলেন হাত দিয়ে। যে কারণে এটাকে বলা হয় ‘দ্য হ্যান্ড অব গড’। অন্যটি করেছিলেন মাঝমাঠ থেকে এককভাবে টেনে নিয়ে গিয়ে। সেই গোলটারই নাম হয়ে যায় ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’।
মাদকাসক্তির কারণে বারবার শিরোনামে আসেন ম্যারাডোনা। তবে সর্বশেষ মস্তিষ্কে জমাটবাঁধা রক্ত অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর গত ১১ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে রিলিজ দেয়ার পর তিনি ওলিভোস ক্লিনিক থেকে বের হয়ে আসেন। এ সময় শত শত ভক্ত-সমর্থক এবং ফটোগ্রাফার চেষ্টা করেছিলেন তার একটি ছবি তোলার জন্য। কিন্তু সঠিকভাবে কেউই ছবি তুলতে পারেনি কিংবা ভিডিও’ও করা যায়নি।
ম্যারাডোনার আইনজীবী ম্যাথিয়াস মারলাহোস ওই সময় জানিয়েছিলেন, মাদকাসক্তি থেকে ফেরাতে তাকে নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে। তিগ্রের একটি নিরাময় কেন্দ্রে কয়েকদিন থাকার পর নিজের বাসায় নেয়া হয়। যেখানে তার বড় মেয়ে থাকতেন। আজ বিকেলেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। কিন্তু কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই সব শেষ হয়ে যায়।