পুলিশ কনস্টেবলের মাদক সেবন-ব্যবসা

অপরাধ এইমাত্র চট্টগ্রাম

পুলিশের কেউ মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকতে পারবে না : এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা

 

 

বিশেষ প্রতিনিধি : চট্টগ্রামে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল রাজিব তালুকদারের বিরুদ্ধে মাদক সেবন ও ইয়াবা ব্যবসার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। আর মাদক সেবন ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে চট্টগ্রাম মহানগর কমিশনারের কাছে তার ডোপ টেস্টসহ তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করা হয়েছে।
উক্ত আবেদন চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশন, আইজিপি, পুলিশ সদর দপ্তর, যুগ্ম সচিব (পুলিশ), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) পুলিশ সদর দপ্তর ও এআইজি, সিকিউরিটি সেল, পুলিশ সদর দপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
উক্ত আবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) এর অধিনে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল রাজিব তালুকদার (কনস্টেবল নম্বর-২০০৭ বিসিএন ৮৪০-৪০৪৪৪৩৮) একজন মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসায়ী। তিনি চট্টগ্রামের পার্শ্ববর্তী জেলা কক্সবাজার এলাকা থেকে তার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করে নিজে সেবন করেন শুধু তাই নয়, তিনি সারাদেশের মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে পাচার করে অতি অল্পসময়ে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছেন।
উক্ত আবেদনে আরো বলা হয়েছে, রাজিব তালুকদার তার গ্রাম দক্ষিণ কাঞ্চনা’তে তিনতলা আলিশান বাড়ি করেছেন। আর তার স্ত্রী কাকলী তালুকদার, শ্বশুর ও শাশুড়ির নামে বিভিন্ন ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা রেখেছেন। আর রাজকীয় স্টাইলে চলাফেরা করছেন। তার অবৈধ অর্থের প্রভাবে বেপরোয়াভাবে প্রভাব খাটাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, তিনি ঠিকমত ডিউটি পালন না করে স্থানীয় মাদকসেবীদের সঙ্গে অধিকাংশ সময় মাদক সেবন করে। ফলে স্থানীয় মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ পড়–য়া বেকার যুবকদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে। উক্ত যুবকদের অভিভাবকগণ রাজিব তালুকদারের ভয়ে মুখ খুলতে পর্যন্ত সাহস পান না। টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাসকেও হার মানিয়ে চলছেন। একজন কনস্টেবল বৈধভাবে চাকুরির বেতনের টাকায় কোন ভাবেই আলিশান বাড়ি করতে পারেন না। আর প্রাইভেট গাড়িসহ আলিশান ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে বসবাস করা এবং ব্যাংক ব্যালেন্স কোনো ভাবেই করতে পারে না।


বিজ্ঞাপন

অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, ২০০৭সালে চাকরিতে যোগদান করার ১৩বছরের মধ্যে এতো সম্পদ অর্জন করা সম্ভব নয়। রাজিব তালুকদারের বাবা অনিল তালুকদার সামান্য একজন দিন মজুর। তার নিজস্ব তেমন কোন সম্পদ নেই। তাই একজন দিনমজুরের ছেলে কিভাবে পৈতৃক কোন সম্পদ না থাকা সত্ত্বেও কোটি কোটি টাকার মালিক হলেন। স্থানীয়রা কানাঘুষা করে বলছেন, পুলিশ কনস্টেবল রাজিব তালুকদার কি আলাদিনের চেরাগ পেয়েছেন? রাজিব তালুকদার দম্ভ করে বলেন তাকে সি.এম.পি থেকে কোথাও বদলি করার ক্ষমতাও কারো নেই। তিনি বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা ধার নেওয়ার পর আর ফেরত দেন না। তার কাছে ধারের টাকা চাইতে গেলেই তিনি বিভিন্ন মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেবার ভয় দেখায়। ফলে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে নারাজ।
মাদকাসক্ত পুলিশ কনস্টেবল রাজিব তালুকদারের ডোপ টেস্ট করাসহ তার বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
আরো জানা যায়, মাখন পালিত, শিবলু দাশ, কামনাশিশ চক্রবর্তী, লিটন দাস এরা সকলেই রাজিব তালুকদার এর কাছে মোটা অংকের টাকা পায়। দীর্ঘদিন যাবত টাকা পাওনা থাকায় ধারের টাকা ফেরত চাইলে পাওনাদারদের বিভিন্ন প্রকার মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিবে বলে পাওনাদারদের হুমকি দিচ্ছে। ফলে পাওনাদারেরা ধারের টাকা চাইতে সাহস পাচ্ছে না। শিবলু দাশ চট্টগ্রাম কোর্টে মামলা করলে রাজিব তালুকদার বলপূর্বক উক্ত মামলাটি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। এ ব্যাপারে রাজীব তালুকদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন।


বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টরা জানান, মাদক নির্মূলে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে ডোপ টেস্ট শুরু হয়েছে। মাদক গ্রহণের অভিযোগে ডোপ টেস্ট এবং পরে বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ১০ সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। ১৮ জন সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে ৭৩ পুলিশ সদস্যকে।

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, পুলিশকে জনবান্ধব করতে আইজিপি ৫টি মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো মাদক। পুলিশের কেউ মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকতে পারবে না। মাদক গ্রহণ কিংবা ব্যবসায় কাউকে সহযোগিতা করবে না। নিজেরাও মাদক সেবন করবে না। যদি কোনো পুলিশ সদস্যকে মাদক সেবনে সন্দেহ হয় তাহলে তাকে ডোপ টেস্ট করে সংশ্লিষ্ট ইউনিট। ডোপ টেস্টে কেউ পজিটিভ হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর মধ্যে অনেককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।