উপজেলা প্রকৌশলী ও ঠিকাদার যোগসাজশে এডিপির টাকা ভাগ ভাটোয়ারা

সারাদেশ

সরিষাবাড়ী (জামালপুর)প্রতিনিধিঃ জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ীতে ২০১৯-২০ অর্থবছরের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার এডিপি প্রকল্পের ব্যাপক অনিয়ম দূনীতি’র মাধ্যমে সরকারী বরাদ্দের টাকা সিংহভাগ হরিলুট হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ হরিলুটে উপজেলা প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট কর্মচারী’ ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে প্রকল্পের কাজ না করে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। অর্থ বছরের দীর্ঘ ৬ মাস অতিবাহীত হলেও প্রকল্পের কাজ না হওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।


বিজ্ঞাপন

উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় ও প্রকল্প পরির্দশন করে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে উপজেলার এডিপি আওতায় ১২টি প্রকল্পের ২৪টি প্যাকেজ বাবদ ৬৪ লাখ ৯১ হাজার ৬০৮ টাকা বরাদ্দ হয়ে ছিল। এর মধ্যে প্যাকেজ ২৪টি’র মধ্যে ভাটারা ইউপির জয়নগর নূর মোহাম্মদ সারের বাড়ী হইতে নওশের মন্ডলের বাড়ীর মসজিদ হয়ে তিতপল্লা ইউনিয়নের সীমানা পর্যন্ত ইটের রাস্তা নির্মাণ ও ভাটারা জয়নগর মেইন রাস্তা হতে আব্দুল হালিমের বাড়ী পর্যন্ত এইচ বিবি দ্বারা রাস্তা উন্নয়ন বাবদ ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা।


বিজ্ঞাপন

ভাটারা ইউনিয়নের চৌখা গ্রামের কবরস্থানের বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ ও কামরাবাদ ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে নলকূপ স্থাপন বাবদ ৩ লাখ টাকা। ডোয়াইল ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ডোয়াইল দক্ষিণপাড়া হাজীবাড়ী জামে মসজিদের উন্নয়ন ও ডোয়াইল বিভিন্ন ওয়ার্ডে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দুস্থ পরিবারের মধ্যে নলকূপ স্থাপন এবং ডোয়াইল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের চর হাটবাড়ী নূরুর মোড় হতে বড়বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা অসমাপ্ত অংশের এইচ বিবি করন বাবদ ৬ লাখ ১০১ টাকা। পোগলদিঘা ইউপির ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে অবস্থিত চকপাড়া মজিবরের বাড়ী হইতে পূর্ব দিকে চকপাড়া মক্তব ঘরের পশ্চিম পাশের্^ পাকা রাস্তা পর্যন্ত হেরিং বন্ড রাস্তা নির্মাণ ও অত্র ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে অবস্থিত বয়ড়া বাজার হামিদ মোল্লার দোকান হইতে উত্তর দিকে গাছ বয়ড়া বাধ পর্যন্ত পাকা রাস্তা সংস্কারকরণ বাবদ ৫ লাখ ৫০ হাজার। পরমানন্দপুর ডোয়াইল কাজী সদর গ্রামের যৌথ ঈদগাহ মাঠের মিনার নির্মাণ ও পিংনা ইউপির বাঘআছড়া আব্দুস সাত্তার বাড়ি হইতে খন্দকার মোতাহার চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তায় প্যালাসাইডিং নির্মাণ বাবদ ৫ লাখ ১ হাজার ৩২২ টাকা। মহাদান ইউপির বন গ্রাম ঈদগাহ মাঠের পূর্ব পার্শে গাইটওয়াল নির্মাণ ও নলদাইর কাদের ফকির, হোসনাবাদের লতিফ, বিলবালিয়া শাহিন, খাগুরিয়া ম্যালেটারি বাড়ি সংলগ্ন মসজিদ বাবদ ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। উপজেলা কৃষি অফিস ও সকল ইউনিয়ন পরিষদের জন্য কীটনাশক ছিটানোর জন্য স্প্রে মেশিন ও ফুট আপ মেশিন ক্রয় ও মুজিব বর্ষ উপলক্ষে বৃক্ষ রোপন বাবদ ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্ধের সিংহভাগ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে। আওনা ইউনিয়নের এডভোকেট মতিয়র রহমান কলেজে শহিদ মিনার নির্মাণ বাবদ ১২ লাখ টাকা। আওনা ইউনিয়নের কাবারিয়াবাড়ী কবর স্থানের শেড ঘর নির্মাণ বাবদ ৩ লাখ টাকা। চর জামিরা সরকারি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষার্থীদের জন্য মিনি খেলাধূলার পার্ক স্থাপন বাবদ ৩লাখ ৪০ হাজার টাকা। উত্তর চুনিয়াপটল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শহিদ মিনার নির্মাণ ও ছাত্রছাত্রীদের দোলনা স্থাপন বাবদ ৪লাখ টাকা।আওনা ইউনিয়ন কাবারিবাড়ী স্কুলের সামনে ঝিনাই নদীতে বাংলা মাছ প্রজননের জন্য মাছের অভয় অরন্য নির্মাণ ও কামরাবাদ ইউপির ঝিনাই নদীর রেল কুটি ব্রিজ সংলগ্ন মাছের অভয়ারণ্য নির্মাণ বাবদ ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

এডিপির কাজ না করেও এডিবির প্যাকেজ-৬-এর অধীন নলদাইর কাদের ফকিরদের সমাজের মসজিদের উন্নয়নের জন্য ২৭ হাজার টাকা, হোসনাবাদ লতিফদের সমাজের মসজিদ সংস্কার বাবদ ২২ হাজার টাকা, বিলবালিয়া শাহীনদের সমাজের মসজিদের ২২ হাজার টাকা ও খাগুরিয়া মেলেটারী বাড়ি সংলগ্ন মসজিদের ২৩ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটির কমিটি সূত্রে জানা যায়। সরেজমিন লক্ষ্য করা গেছে, এডিবির প্রকল্পের তালিকায় সাতপোয়া ইউনিয়নের জামিরা সরকারি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষার্থীদের জন্য মিনি খেলাধুলার পার্ক স্থাপন, উত্তর চুনিয়াপটল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীদের দোলনা স্থাপন। আওনা ইউনিয়ন কাবারিবাড়ি স্কুলের সামনে ঝিনাই নদীতে বাংলা মাছ প্রজননের জন্য মাছের অভয়ারণ্য নির্মাণ ও কামরাবাদ ইউনিয়নের ঝিনাই নদীর রেলিকুটি ব্রিজ সংলগ্ন মাছের অভয়ারণ্য নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন হয়নি।

এদিকে পরমানন্দপুর ডোয়াইল কাজী সদর গ্রামের যৌথ ঈদগাহ মাঠের মিনার নির্মাণ কাজে প্রক্কলন মোতাবেক কাজ করা হয়নি।

এ বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রকৌশলী মো. রাকিব হাসান জানান, এডিপির টাকা আত্মসাৎ করা হয়নি। তবে যেসব ঠিকাদার কাজ করেনি তাদের টাকা উত্তোলন করে রেখে দেয়া হয়েছে। কাজ করলে ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ করা হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিহাব উদ্দিন আহমদের কার্যালয়ে সাক্ষাতে কথা হলে তিনি জানান, যেসব প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন হয়নি সে সব প্রকল্পের বিপরীত অর্থ উত্তোলন করে রেখে দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বিল পরিশোধ করা হবে। উল্লেখ্য, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের দীর্ঘ ৬ মাস পার হলেও প্রকল্পের কাজ না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণের মাঝে ক্ষোভ ও সমালোচনার ঝড় বইছে। এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে আদৌ কাজগুলো হবে কি? বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি এলাকাবাসীর একান্ত কাম্য।