দাবদাহে বিদ্যুতের ভেলকিবাজি

এইমাত্র জীবন-যাপন সারাদেশ

পিরোজপুর প্রতিনিধি : বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের সর্বত্র। বৈশাখ শেষ হলেও জৈষ্ঠ্যমাস ও বর্ষার বিপরীত মুখী আচরণে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির এভাবেই দেশের তাপমাত্রা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদগন। এমনিতেই এপ্রিল মে মাস গরমের মৌসুম। এই মৌসুমে তাপমাত্রা স্বাভাবিক এর চেয়ে বেশী থাকে। সুপার সাইক্লোন ফণী চলে যাওয়ার পর বঙ্গোপসাগর এখন নিস্তব্ধ, শান্ত। আকাশও মেঘমুক্ত মাঝে মাঝে। সূর্য যেন আকাশ থেকে তরল তপ্ত খরতাপ ঢালছে। দুপুরের রোদ সহ্যের বাইরে, বাতাসে অগ্নিহল্কা। প্রচন্ড গরমে হাঁসফাঁস করেছে মানুষ ও প্রাণীকূল। রোজাদাররা পানি তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়েছেন। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য থেকে জানা গেছে, বৃষ্টি হওয়ার আগ পর্যন্ত এ তাপ কমার কোনও সম্ভাবনা নেই। এমন কি এর তেজ বাড়তে ও পারে। এ দিকে পিরোজপুরসহ দক্ষিণ বঙ্গে ঝড় বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে তাপ প্রবাহ হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তীব্র গরমের কারণ সম্পর্কে আবহাওয়াবিদরা বলেন, ফণী চলে যাওয়ার পর কোথাও বৃষ্টি বাদল নেই। বেড়েছে দিনের ব্যাপ্তি। বাতাসে জলীয় বাষ্প বৃদ্ধি পেয়েছে। জলীয় বাষ্প বাড়লে গরম যতটুকু থাকুক অস্বস্তি বাড়ে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ফণীর পর চলতি মাসে বঙ্গোপসাগরে আরও একটা নিম্নচাপের আশঙ্কা করেছে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর। ২৬ থেকে ৩ জুনের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। এর নাম রাখা হয়েছে বায়ু তবে এখনও সক্রিয় হয়নি। মে মাসের আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়, এ মাসে উত্তর উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের একটি তীব্র তাপদাহে (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে) এবং অন্যত্র ১-২ টি মৃদু তাপ প্রবাহ (৩৮-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়া) দাবদাহ বয়ে যেতে পারে। এ সময়ে শিলাবৃষ্টি ও হতে পারে। তীব্র তাপদাহে হাঁসফাঁস অবস্থা সমগ্র বাংলাদেশে সহ পিরোজপুরবাসীর জনজীবন। খানিকটা প্রশান্তির আশায় শীতল অবলম্বন খুঁজে ফিরছেন সবাই। স্বাস্থ্যের তোয়াক্কা না করে পথের পাশের শরবত বা লেবুর পানি পান করছে ক্লান্ত মানুষগুলো।
এদিকে আকস্মিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বরূপকাঠি উপজেলার পল্লী বিদ্যুত কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ নিয়ে শুরু করেছে তেলেসমাতি। প্রচন্ড গরমের মধ্যে পৌরসভায় দিনে গড়ে ৫ থেকে ৬ বার আর রাতে ১ থেকে ২ বার বিদ্যুৎ আসা যাওয়ায় থাকে। আর আকাশে মেঘ থাকলেই ভয়ে পল্লী বিদ্যুৎ স্বরূপকাঠি জোনাল অফিস হুট করে কারেন্ট নিয়ে যায়। অপরদিকে ইউনিয়ন এলাকায় ঘন্টায়ও দুইবার ও নেয় বলে ভুক্তভোগীরা জানান। গ্রামে দিনে গড়ে ৫ থেকে ৭ বারও বিদ্যুৎ নিয়ে যায় রুটিন মাফিক। বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং আর প্রকৃতির খেলা। মাথার উপর সূর্যের প্রকট তাপদাহ। কবিতার ছন্দে বলা যায়, দুইয়ে দুইয়ে মিলে হয় চার, আর সর্বনাশ হয় সাধারণ জনতার। ফলে অনেকটা অসহনীয় জীবন যাপন করছে স্বরূপকাঠি উপজেলাবাসী। এমনিতেই গ্রীষ্মে প্রারম্ভে লোডশেডিং বাড়ার সাথে সাথে বিদ্যুতের চাহিদা থাকে বেশি ।
এ ব্যাপারে স্বরূপকাঠি উপজেলার পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম মো. আনোয়ার হোসেন দৈনিক সকালের সময়কে জানান, আমাদের উপজেলায় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছি। কিন্তু কিছু লাইন মেরামতের কারণে ঠিকমত বিদ্যুৎ দিতে পারছি না। এ উপজেলায় ১১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দরকার। কিন্তু সরবরাহ আছে ১০.৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। তবে রমজানের জন্য চাহিদার শতভাগ পাচ্ছি। বিসিক শিল্প নগরীসহ সমগ্র উপজেলায় ৫০,০০০ হাজারের বেশী গ্রাহক আমাদের। মিডিয়ার আর এক প্রশ্নের জবাবে সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। বর্তমান গড়ে ৪ থেকে ৫ বার দিনে বিদ্যুৎ যায়। আর মেঘ দেখলে তো কথাই নাই। সব মিলিয়ে পৌরসভাসহ ১০ ইউনিয়নে নিয়মিত বিদ্যুৎ না থাকায় নাকাল স্বরূপকাঠীবাসী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *