রেলপথ বর্তমানে কতটা নিরাপদ?

অন্যান্য অর্থনীতি

মুগ্ধ খন্দকার : আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষের বাস, মাইক্রো, কার গাড়িতে উঠলে রাস্তায় বমি করে যাত্রাটা আনন্দের ভেতর নাক কুচকানো চলে আসে। তবে এই মানুষ গুলো কিন্তু সর্ব প্রথম খোজে ট্রেন এর রুট আছে কি না! এছাড়াও হাইওয়ের দূর্ঘটনা, জ্যাম এর থেকে তুলনামূলক সস্তা ও নিরাপদ বাহন হওয়ায় অনেক মানুষ ট্রেনে ভ্রমণ করাকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে।ট্রেন বাংলাদেশের একটি প্রধান নিরাপদ বাহন ব্যবস্থা হিসেবে মনে করা হলেও এর ঝুঁকির দিকগুলোও কম নয়। আর এই নিরাপদ ব্যবস্থার আড়ালে দেশের বহু মানুষ প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন ট্রেনে যাতায়াত করে। অন্য বাহনের তুলনায় নিরাপদ, ভাড়া কম হওয়ার কারনে ট্রেনে যাত্রীদের ভিড় লেগেই থাকে। ট্রেনের বগিগুলো ভরপুর করে ছাদ কিংবা ট্রেনের সামনের অংশেও মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। আসুন আজ একটু রেল ও দূর্ঘটনা নিয়ে কথা বলি।


বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে সর্বমোট ২ হাজার ৯০০ কিলোমিটার রেলপথ বিদ্যমান। ট্রেনের দুর্ঘটনা সচরাচর লেগেই আছে। এই কারন গুলো নিয়েই কিছু সাজানোর চেস্টা মাত্র। ইন্টারনেটের তথ্য অনুযায়ী, দেশের রেলওয়ের একটি বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বলা যায় যে, বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া রেল দুর্ঘটনা ঘটে ৭২ শতাংশ মানুষের ভুল ত্রুটির কারনে, ২৩ শতাংশ যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত এবং বাকি ৫ পথচারীদের অসতর্কতায় রেলক্রসিং পারাপার ইত্যাদি বলা হচ্ছে। মানুষের ভুল ত্রুটির মধ্যে রয়েছে লাইন ম্যান, স্টেশনমাস্টার ও পরিচালকের ত্রুটি বা অবহেলা কিংবা ট্রেন ড্রাইভার এর বেপরোয়াভাবে ট্রেন চালানো। আবার ২০০৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত লেভেল ক্রসিংগুলোয় প্রায় ৩১৫টি দুর্ঘটনায় প্রায় ৩০০ জনের মত মৃত্যু হয়েছে।।

বর্তমানে দেশের রেলওয়ের বৈধ-অবৈধ মিলে শতকরা ৬০ শতাংশ লেভেল ক্রসিং একেবারে নস্ট হয়ে আছে। অনেক স্থানে কর্তব্যরত কোনো জনবল নেই থাকলেও অনেকেই অনিয়মিত ও কাজে অবহেলা আবার কখনো কখনো স্থানীয় জনগণই ভরসার একমাত্র প্রতীক। গ্রাম গঞ্জের হিসেব না হয় বাদই দিলাম বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার চারপাশের রেলপথেও আছে দুই পাশে হাটবাজার বসা। লেভেল ক্রসিংগুলােতে নিরাপদের ছিটফোটাও নেই। যে কারণে প্রায় ঘটেই চলছে দুর্ঘটনা। হয়ত খবরের কাগজে চাঞ্চল্যকর কোনো জাতীয় নিউজ না থাকায় হিট করে আমরা পড়ি বা কখনো ছোট করে চোখ বুলিয়ে রেখে দেই। দুর্ঘটনাগুলোর প্রধান কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম অনিরাপদ লেভেল ক্রসিং, জরাজীর্ণ রেললাইন, পর্যাপ্ত সিগন্যালের অভাব, ঘন কুয়াশা ইত্যাদি আরো অনেক কিছু। এর পাশাপাশি প্রধানত জনগণের জন্য তো আছেই আশির্বাদ বাংলাদেশ রেলওয়ের নিয়মিত-অনিয়মিত কর্মীদের গাফিলতি, দায়িত্বহীনতা, উদাসীনতা, সর্বোপরি ঘুষ-দুর্নীতি অনিয়ম-অব্যবস্থা ইত্যাদি আরো অনেক। আর এই সব কারণেই প্রায় প্রতিদিনই ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটছে, তার মধ্যে অন্যতম কারন হলো ডাবল লাইন নির্মিত না হওয়া , ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিরাপদ পুরাতন লেবেল ক্রসিং, দক্ষ ও যোগ্য জনবলের অভাব, দিন কিংবা ঘন্টা চুক্তি ড্রাইভার নিয়োগ, ঘন কুয়াশা। এ ছাড়াও অপরিকল্পিত ও অননুমোদিত সংযোগ সড়ক এবং অসচেতনতার কারনেই প্রাণ হারাচ্ছেন একের পর এক সাধারণ জনগন।
হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করেও রেল মন্ত্রণালয় রেলকে আধুনিক ও যুগোপোযোগী লন্ডন আমেরিকার ডিজিটাল রেলপথ কি করতে পেরেছে! আমার মনে হয় না। এতে প্রধানমন্ত্রীর আমি দোষ খুজে পাই না তার এক দূর্ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় উনি বলেছিলেন, ট্রেন দুর্ঘটনা রোধে চালক, ও কর্তব্যরত জনবলকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয়া দরকার। তবে কে শোনে কার কথা! এরই মধ্যে দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রেলের কেনাকাটা ও বিক্রির প্রতিটি স্তর এবং রেলের জমি ও জলাশয় এর ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন ও করছে। দেশের রেলপথের কারখানাগুলো থেকে সংকেত ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, নড়বড়ে রেলপথ ও ভাঙ্গা ব্রিজ সংরক্ষণ, লেভেল ক্রসিং, এমনকি ডাবল লাইন-মিশ্র লাইন নির্মাণেও ব্যাপক দুর্নীতি হয় যা হয়ত খবরের অন্তরালেই পড়ে থাকে। অথচ জনগনের জন্য রেলপথই সাধারণত বাংলাদেশের যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের সাশ্রয়ী, দ্রুতগামী, নিরাপদ তবুও এই খাতটাই একটু বেশি অবহেলিত ।

রেল দুর্ঘটনা এড়াতে হলে সুষ্ঠু দূর্নীতিমুক্ত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা অতীব জরুরি। অনিরাপদ রেলক্রসিং গুলোতে অধিক দক্ষ জনবল নিয়োগ দিতে হবে। প্রয়োজনে প্রত্যেকটি রেল ক্রোসিং এ রেল পুলিশ মোতায়েন করা। দায়িত্বে অবহেলাকারী জনবলদের চাকুরী চ্যুুত করা সেই সাথে আইনের আওয়াতায় আনতে হবে। দূর্ঘটনা ঘটলে তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার মাধ্যমে যেন সব কিছু ভুলে না যাওয়া হয় সেদিকটা বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে। চালকদের সচেতন করতে নির্দিষ্ট সময় পর পর প্রশিক্ষণ এর ব্যয় ববস্থা গ্রহণ করতে হবে। রেললাইনের আশেপাশের গ্রামগুলোতে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে মাাইকিং, লিফলেট বিতরণ, সচেতনতা সভা ইত্যাদি করে রেলপথের জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতির অবসান ঘটানো সম্ভব।