শিক্ষা প্রকৌশলে অভিনব কৌশলে দুর্নীতিবাজরা

অপরাধ এইমাত্র জাতীয় শিক্ষাঙ্গন

বিশেষ প্রতিবেদক : বর্তমান সরকার যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে তখন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরে (ইইডি) উল্টো স্রোত বইছে। নিজেদের অপকর্ম বহাল রাখতেই দুর্নীতিবাজরা অভ্যন্তরীন বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এমনকি প্রকাশ্য সমাবেশ করে সংহতি প্রকাশ ছাড়াও তাদের বিরুদ্ধবাদীদের প্রতি হুঙ্কার ছুড়েছেন।
সম্প্রতি শিক্ষা ভবনে অনুষ্ঠিত এক প্রতিবাদ সভার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে কৌতুহল ও আতংক বিরাজ করছে। ইইডি প্রকৌশল কর্মকর্তা-কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের ব্যানারে কথিত ওই প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তারা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে যে কোন ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। অবশ্য কি ধরনের ষড়যন্ত্র সেটি প্রকাশ করেননি। একই সঙ্গে তারা প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালার গুণকীর্তন করেছেন। তবে সভায় চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের উপস্থিতি এবং নেতৃবৃন্দের অতীত কর্মকান্ড ওই সভাকে ঘিরে নানা সরস আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাম প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও লুটপাটের সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশের পরই দিশেহারা হয়ে পড়ে দুর্নীতিবাজ চক্র। তাই পরিস্থিতি ঘোলাটে করেই তারা বিষয়টি ভিন্নখাতে নেয়ার অপকৌশল নিয়েছে। এ অভিযোগ যে অমূলক নয়, সভায় উপস্থিত নেতৃবৃন্দের কয়েকজনের অতীত কীর্তিকলাপ তার প্রমাণ দেয়। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ও অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. মজিবুর রহমান সরকার যাহাকে স্বয়ং তৎকালিন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ২০১১ সালের মার্চ মাসে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় নির্মাণ কাজের থেকে ঘুষ নেওয়ার অপরাধে তাকে সভাকক্ষ থেকে বের করে দেন এবং তাৎক্ষনিক পঞ্চগর জেলায় শাস্তিমূলক বদলী করেন। মাত্র দেড় বছর আগে তাকে বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী দায়িত্বে অবহেলা আর শৃঙ্খলা বিরোধী কাজের জন্য কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছিলেন। এমনকি বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়াও শুরু করেন। তবে রহস্যজনক কারণে সেই পদক্ষেপ আর এগোয়নি। যার বিরুদ্ধে খোদ মন্ত্রণালয়ে রয়েছে দুর্নীতির নানা অভিযোগ। তাছাড়া সিলেটে একটি নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানে রড ছাড়া ঢালাই কেলেংকারিতে তার নাম জড়িয়ে আছে। অভিযোগ মতে, তিনি ঢাকার বাইরে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করলেও কখনও নিয়মিত অফিস করতেন না। বরং সরকারী গাড়ি ব্যবহার করে অননুমোদিত ভাবে অধিকাংশ সময় ঢাকায় অবস্থান করতেন। এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে তার ব্যবস্থা নেয়া দূরের কথা, দাপটের কারণে উল্টো উর্দ্ধতন কর্মকর্তারাই তাকে ম্যানেজ করতে তৎপর ছিলেন বলে চাউর রয়েছে।
সভায় উপস্থিত আরেক সক্রিয় কর্মকর্তা হলেন উপ-পরিচালক (প্রশাসন) আসাদুজ্জামান। যিনি দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে একই পদে কর্মরত। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বদলি পদোন্নতি ও পেনশন কাজের তদারকি তার দায়িত্বে। এর মাধ্যমে তিনি মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কাজের সুবাদে তাকে অনেকেই প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালার ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবে অভিহিত করেন।
আরেক আলোচিত কর্মকর্তা হলেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বুলবুল আখতার ও নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল হাশেম সরদার সমস্ত জোনাল অফিসের সিএস এর ঘুষের টাকা কালেকশনের দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। টাকা আদায় হয়েছে মর্মে নিশ্চিত হবার পরই প্রধান প্রকৌশলী সিএস অনুমোদন করেন। অন্যথায় হেড অফিসে সিএস ফাইল বন্ধি থাকে। দুর্নীতির বিশ্বস্ত সহযোগী হবার কারণেই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বুলবুল আক্তার একাধারে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারছেন। জানা যায়, এই কর্মকর্তা ঢাকা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর পাশাপাশি খুলনা বিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন। তবে সার্বক্ষনিক তিনি ঢাকায় অবস্থান করেই উভয় কাজ সামাল দিচ্ছেন। শাহ নাঈমুল কাদের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রধান কার্যালয় এবং মো. জয়নাল আবেদীন নির্বাহী প্রকৌশলী প্রধান কার্যালয় কোন কাজে ড্রইং এ ঘুষের টাকা না পাইলে ঠিকাদারকে ড্রইং প্রদান করেন না।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *