প্রাচুর্যের কাছে ধরাশায়ী বন্ধুত্ব

অন্যান্য সাহিত্য

মোস্তাফিজুর রহমান : যশ, খ্যাতি, ভালবাসা আর মেলামেশা এখন অনেকটা প্রাচুর্য নির্ভর। ব্যক্তির বহুল প্রচারের নেপথ্যে দুটি নিয়ামক সাংঘাতিকভাবে কাজ করে থাকে। প্রথমটি হলো : নিজের আর্থিক সক্ষমতা ও ডেডিকেশন, দ্বিতীয়টি হলো : ঘৃনিত ও অপ্রত্যাশিত কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে আলোচনার শীর্ষে অবস্থান করা,যেটা অনেকেই চায়না। প্রথমটি অর্জন করতে যারা সক্ষম হয়েছে, তাদের অয়েলিং করার জন্য অনেকেই ঘি এর বাটি নিয়ে সারাক্ষণ আশপাশেই ঘুরঘুর করে কিন্তু ভাল মানসিকতা ও সম্মানবোধ থাকার পরও শুধুমাত্র আর্থিক সক্ষমতার অভাব ও ক্ষুদ্রক্ষুদ্র বিন্যাশের প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়ে বন্ধুর পাশে বন্ধুই দাঁড়িয়ে থাকে মানুষ হিসেবে নয়, অচেনা অন্যজগতের এক এলিয়েনসম প্রাণী হয়ে। ছিঃ লজ্জাও আমাদের মানসিকতাকে ক্ষতচিহ্ন দিতে ব্যর্থতা প্রকাশ করেছে।


বিজ্ঞাপন

সারা বাংলা -৯১ ( এস এস সি) এর প্লাটফর্ম গুলোর বিভিন্ন ফেস্টিভ্যালে ব্যক্তি আলিঙ্গন ও প্রকাশ্যে সান্নিধ্যের বৈষম্য ও ভালবাসার চিত্রের কথাই বলছি। এস এস সি -৯১ ভিত্তিক বিভিন্ন প্লাটফর্মের মিলনমেলাগুলোতে ভেদাভেদ ভুলে আমরা অনেকেই উপস্থিত হই। ভার্চুয়াল লাইফে যতটুকু পরিচয় ও যোগাযোগ আছে, তাতেই এক অন্যের প্রতি আবেগপ্রবণ হয়ে বন্ধুত্বের বন্ধনে অদৃশ্য এক অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে যাচ্ছে কিন্তু এ ধরনের মিলন মেলায় পরিচিত অনেক মুখ আছে যারা সেল্ফি, আড্ডাবাজি ও আনন্দঘন কিছু মুহুর্তে নিদিষ্ট কিছু বন্ধুদের সাথেই সীমাবদ্ধ রাখে।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনুষ্ঠানে আগত অনেক সরলমনা ও সাদামাটা স্বভাবের অসংখ্য বন্ধু আশপাশে ঘুরঘুর করলেও পরিচিত হওয়ার জন্যেও নূন্যতম সৌজন্যবোধ আমরা রক্ষা করিনা । এটা কার্টিসি ও বন্ধুত্বের কোন লেভেলে পড়ে আমার জানা নেই। বিষয়টি খুব কাছ থেকে দেখে আমি বারবার মর্মাহত হয়েছি। এটা আমার নিজস্ব অপ্রাপ্তি নয়। প্রতিটি অনুষ্ঠানে বন্ধুদের থেকে আমার অজস্র প্রাপ্তি রয়েছে। বন্ধুদের সাথে অগনিত সেল্ফি আর আলাপচারিতা নিয়েই আমার মুহুর্তগুলো পার হয়, যে জন্য আমি মূল ইভেন্টের অনেক মজাদার পর্ব বারবার মিস করেছি। তবুও অজস্র বন্ধুদের ভালবাসায় মুগ্ধ হয়ে প্রশান্তি নিয়েই প্রতিবার নীড়ে ফিরি। আমি চিরকৃতজ্ঞ তাদের প্রতি, যারা প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এসে আমার মতো সাধারণ মানুষের সাথে আন্তরিকভাবে বুকে জড়িয়ে নিয়েছে। ওরাই আমার প্রকৃত বন্ধু, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাকীরা ফেইক এন্ড ভার্চুয়াল হিসেবেই বিবেচিত।

জব ক্রাইটেরিয়া, শিক্ষাগত যোগ্যতা, সোস্যাল ডিগনিটি ও হিউম্যান ডেডিকেশনের বিষয়গুলো প্রায়োরিটি দিয়ে আমরা যারা অবাধ বন্ধুত্বকে নিরুৎসাহিত করছি , তারাই বন্ধুত্বের কোর্ডিয়াল ডেনসিটি ও মর্যাদা রক্ষার জন্য এলিয়েন হিসেবেই চিহ্নিত হয়েছি। এই অপমানজনক কষ্টের কথাগুলো আত্নসম্মানের ভয়ে কেউ খুব বেশি করে ফলাও করতে না চাইলেও ম্যান টু ম্যান দুঃখের সাথে বিনিময় করে থাকে।আমাদের এমন আচরণ বন্ধুত্ব হিসেবে গ্রহনযোগ্য হতে পারেনা। সামান্য কয়েকঘন্টা সময়ও কি আমরা বিলাসী মর্যাদাটা ভুলে গিয়ে বিলো স্ট্যান্ডার্ড হয়ে বুকে বুক মেলাতে পারিনা, একটু হাসিমুখে করমর্দন করে বন্ধুত্বকে প্রকৃতভাবে রূপায়ণের সুযোগ দিতে পারিনা! এই লজ্জা আমাদের বিবেকবান সকলের।

টোটাল ডিগনিটি স্কেলিং করে বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখা যায়না। আমাদের এমন ঘৃৃনিত ও ভাববিলাসী মানসিকতার পোষ্টমর্টেম প্রয়োজন, তাহলেই অসংখ্য বন্ধুদের বন্ধুত্ব নিখাদ ভাবেই টিকে থাকবে বলে বিশ্বাস করি।
৯১ শুধু মিলনমেলার নিদিষ্ট একটি মুহুর্ত নয়, এটা আবেগ ও ভালবাসা বহিঃপ্রকাশের অনন্ত একটি মায়াবী ক্ষেত্র।