দুর্নীতিতে কলঙ্কিত নারায়ণগঞ্জ!

অপরাধ আইন ও আদালত এইমাত্র সারাদেশ

বিশেষ প্রতিবেদক : নারায়ণগঞ্জের ছেলে পলাশের বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনার পর সমালোচনার ঝড় বয়েছিল নারায়ণগঞ্জকে নিয়ে। সেই রেশ না কাটতেই আবারো এক ঘটনায় ইতোমধ্যে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার জন্য নির্মিত ভবনে আসবাবপত্র কেনা ও তা ফ্ল্যাটে উঠানোর খরচ নিয়ে সারা দেশে বইছে সমালোচনার তীব্র ঝড়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বালিশ দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত প্রকৌশলী মাসুদুল আলম নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জের সন্তান।
জানা গেছে, প্রকৌশলী মাসুদুল আলম সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্র উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৯০ সালে এসএসসি পাস করেন। পরে ঢাকা কলেজে পড়াশুনা করেন এবং পরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি লাভ করেন। প্রকৌশলী মাসুদুল আলমের বাবা সিদ্ধিরগঞ্জ ২১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মৃত আব্দুল খালেক। তিনি চাকরির সুবাদে সিদ্ধিরগঞ্জের পাওয়ার হাউজে দীর্ঘকাল বসবাস করেছেন। আব্দুল খালেকের বড় সন্তান প্রকৌশলী মাসুদুল আলম। সিদ্ধিরগঞ্জেই তার বেড়ে ওঠা।
মাসুদুল আলম প্রথমে কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার পর গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। পরে সরকারের মেগা উন্নয়ন প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকে এই দুর্নীতির ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর তাকে বদলি করা হয়।
এদিকে মাসুদুল আলমের দুর্নীতির বিষয়টি এখন মানুষের মুখে মুখে। দুর্নীতির ঘটনার সাথে আলোচনায় আসছে নারায়ণগঞ্জের নাম। অনেকে মনে করেন এতে করে কলঙ্কিত হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ।
জানা যায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্রিন সিটি প্রকল্পের জন্য এক হাজার ৩২০টি বালিশ কেনা হয়েছে। প্রতিটির মূল্য দেখানো হয়েছে ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা। আর সেই প্রতিটি বালিশ নিচ থেকে ভবনের ওপরে তুলতে খরচ দেখানো হয়েছে ৭৬০ টাকা হারে। ইতোমধ্যে ২০ তলা ৮টি ভবন ও ১৬ তলা একটি ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এই ৯টি ভবনে তৈরি হয়েছে ৯৬৬টি ফ্ল্যাট। সেই ৯৬৬টি ফ্ল্যাটের জন্য আসবাবপত্র কিনেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে ২০ তলা একটি ভবনের ১১০টি ফ্ল্যাটের আসবাবপত্র কেনা ও তা ভবনে ওঠাতে সব মিলে ব্যয় দেখানো হয়েছে ২৫ কোটি ৬৯ লাখ ৯২ হাজার ২৯২ টাকা।
এ ঘটনায় ১৯ মে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ ব্যাপারে কোনো তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই প্রত্যাহার করা হয় প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলমকে। গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেন বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্রিন সিটি প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। দু’টি তদন্ত কমিটি অনিয়মের বিষয়ে কাজ করছে।
নারায়ণগঞ্জে বাসিন্দা সৈয়দ মো. তারিক রিফাত তার ফেসবুকে লিখেছেন, বিমান ছিনতাইয়ের পর বালিশ দুর্নীতির সাথে জড়িত নারায়ণগঞ্জে সন্তান! গর্বিত নারায়ণগঞ্জ, গর্বিত নারায়ণঞ্জবাসী।
সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার হাউজের বাসিন্দা খলিলুর রহমান জানান, মাসুদুল আলমের এত্ত বড় দুর্নীতির খবরে আমরা লজ্জিত এদের অপকর্মে নারায়ণগঞ্জ কলঙ্কিত। এর আগে ৭ খুনের হোতা নুর হোসেনও নারায়ণগঞ্জকে কলঙ্কিত করেছিল।
এদিকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্পের কেনাকাটা দুর্নীতির খবরের মতো আরো একটি খবর দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোচিত হয়েছিল। তা হলো বিমান ছিনাইয়ের চেষ্টা। গত ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া দুবাইগামী বিজি-১৪৭ ফ্লাইটটি এক ‘অস্ত্রধারী’ যুবক ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। পরে বিমান ছিনতাই চেষ্টাকারী ওই অস্ত্রধারীকে ধরতে কমান্ডো অভিযান পরিচালিত হয়। এরপর ছিনতাইকারী নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে রুদ্ধশ্বাস এই অভিযান শেষ হয়। বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী যুবক নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁয়ের পিরোজপুর দুধঘাটা গ্রামের পিয়ার জাহানের ছেলে পলাশ।
সাধারণ মানুষ বলেছেন, বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টার ঘটনায় ঘুরে ফিরে নারায়ণগঞ্জে নাম আসায় দেশব্যাপী ইমেজ ক্ষুণ্ণ হয় এ জেলার। বিমান ছিনতাইয়ের নায়ক পলাশ মারা গেছে ঠিকই কিন্তু কলঙ্ক রেখে গেছে নারায়ণগঞ্জে।
এর আগে কলঙ্কজনক ঘটনা ঘটিয়ে নারায়ণগঞ্জের নাম দেশ-বিদেশে সমালোচনায় নিয়ে আসে সাত খুনের নায়ক নুর হোসেন। এখনো মানুষ সেই সাত খুনে ঘটনার কথা ভুলেনি। ফাঁসির দ- নিয়ে নুর হোসেন এবং র‌্যাব ১১-এর সাবেক সিইও তারেক সাঈদসহ ২৬ জন কারাগারে রয়েছে। হাইকোর্টের রায়ে পর এখন আপিলের রায়ের জন্য অপেক্ষা করছেন তারা। তবে তাদের ঘটানো অপরাধ নারায়ণগঞ্জকে কলঙ্কিত করছে ইতিহাসের পাতায়।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *