নিজস্ব প্রতিবেদক : অবৈধ দখলদারিত্ব আর দূষণে বিপন্ন হতে চলেছে তুরাগ নদী। কালের পরিক্রমায় গতি হারাতে বসেছে তুরাগ। দখল-দূষণের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অভিযান চললেও পরিত্রাণ মেলেনি তুরাগের।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদন জানা গেছে, গাজীপুরের তুরাগ নদীতে প্রায় ৪৮৯টি অবৈধ দখল রয়েছে। এরমধ্যে পাকা স্থাপনা ৫০টি। আধাপাকা/টিনসেড স্থাপনা ৪১২টি, ইটভাটা ১৬টি, পার্ক/রিসোর্ট একটি, শিল্পকারখানা/ফ্যাক্টরি ছয়টি। এছাড়া দখলদার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সদর উপজেলায় একটি মেডিকেল কলেজ, দুইটি পাওয়ার প্লান্ট ও একটি ডেইরি ফার্ম রয়েছে। সদর উপজেলার সামিট গ্রুপের পাওয়ার প্লান্ট, ইসলাম গার্মেন্টস, অনুভব ডেইরি ফার্ম ও ডিবিএল গ্রুপ।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় নদীর দ্বিতীয় শাখায় এননটেক্স, নিট বাজার ফেব্রিক্স ও ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ রয়েছে।
নদী তীরবর্তী লোকজন জানায়, পরিবেশ ও নদী দূষণ করছে ইটিপিবিহীন কল-কারখানাগুলো। এসব কারখানার বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদফত বারবার অভিযান চালালেও দূষণ রোধ হয়নি। নদী দূষণের কারণে গাজীপুরের নদ-নদী ও খাল-বিলের পানি কালো বর্ণ ধারণ করছে। গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি, কাশিমপুর, বাসন ইসলামপুর ভাঙা ব্রিজ সংলগ্ন বিল ও বেলাই বিল এলাকা ঘুরে এ দৃশ্য চোখে পড়ে।
কোনাবাড়ি, কাশিমপুর ও টঙ্গী এলাকায় তুরাগ নদীর তীরেই গড়ে উঠেছে অসংখ্য ডায়িং কারখানাসহ নানা ছোটবড় কয়েকশ কারখানা। ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা শরীফ হোসেন জানান, নদীর তীরে গড়ে উঠা এসব কারখানার মধ্যে কিছু বড় কারখানায় পানি বিশুদ্ধ করার ইটিপি থাকলেও বর্ষায় এসব ইটিপি তেমন ব্যবহার হয় না। ফলে কারখানার দূষিত পানি সরাসরি ফেলা হচ্ছে তুরাগে। দূষিত ও বিষাক্ত পানি সরাসরি নদী ও খালে গিয়ে পড়ছে। এতে নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এদিকে ইসলামপুর ভাঙা ব্রিজ এলাকায় দেখা যায়, রাস্তার পাশে নির্মিত ড্রেন দিয়ে কারখানার দূষিত পানি সরাসরি নদীতে পড়ছে। বেলাই বিল এলাকার পানি এখনো কালো বর্ণ রনয়েছে। পানি চলমান না থাকায় কলকারখানার পানি খালে পড়ে তা সরতে পরছে না। ফলে জেলেরা খাল ও বিলে যে মাছ ধরছেন তার রংও কালো হয়ে গেছে।
তুরাগের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখা যায়, নদীতে অবলীলায় ফেলা হচ্ছে বর্জ্য। অবস্থা দেখে স্থানীয় জেলে সুকমল সরকার জানান, শৈশবে তুরাগে স্রোত দেখেছি। চোখের সামনে কীভাবে এ নদী ধীরে ধীরে খালে পরিণত হলো সেটি ভাবলেও ‘অবিশ্বাস্য’ মনে হয়।
তিনি বলেন, এই নদী অনেক সুন্দর ছিল। নদীতে মাছ ধরে অনেকে জীবন-জীবিকা যেমন চালিয়েছেন তেমনি খাবারের পাতেও তুরাগের মাছ ছিল প্রতিদিনের সঙ্গী। কিন্তু দখল-দূষণে বিপর্যস্ত তুরাগে এখন মাছের দেখা মেলা ভার। তুরাগ নদীর দুই পাড়ে দীর্ঘ এলাকাজুড়ে একদিকে যেমন ঘনবসতি অন্যদিকে শিল্প-কারখানাও বেড়েছে সমানতালে। তুরাগকে বিভিন্ন জায়গায় এখন ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
নদী পরিব্রাজক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও নদী গবেষক মোহাম্মদ মনির হোসাইন বলেন, গত কয়েকবছরে তুরাগ তীরের বিভিন্ন জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করা হলেও দূষণের মাত্রা কমেনি। একটা সময় শিল্প স্থাপনই গুরুত্ব পেয়েছিল বেশি, পরিবেশ নয়। এখন সময় এসেছে নদী খাল-বিল ও জলাশয় রক্ষার।
পরিবেশ অধিদফতরের গাজীপুর অংশের উপপরিচালক আব্দুস সালাম বলেন, ইটিপি ছাড়া এখন কারখানার অনুমোদন দেয়া হয় না। তবে নদী দূষণে শুধু কারখানার বর্জ্য একা দায়ী নয়। পাশাপাশি পয়ো:বর্জ্যও রয়েছে। পয়ো:বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা নিতে হবে বলে জানান তিনি।