নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর দারুস সালাম থানাধীন মিরপুর ১ নাম্বার থেকে দুয়ারীপাড়া পর্যন্ত চলাচলকারী সোয়াস পরিবহন লেগুনায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২২০০০ হাজার টাকা, মাসে গড়ে প্রায় ৬৬০,০০০ ছয় লাখ ষাট হাজার টাকা চাঁদা তোলা হচ্ছে। আর এ টাকার অর্ধেক চলে যাচ্ছে স্থানীয় থানা পুলিশ, টি আই আব্দুল মজিদ, সার্জেন্ট ও রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের পকেটে। চাঁদাবাজ এ চক্রের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে লেগুনার চালক ও মালিকরা। ফলে চাঁদার টাকা পুষিয়ে নিতে নানা ছুতোয় বাড়ছে লেগুনার ভাড়া।
এ বিষয়ে ট্রাফিক মিরপুর জোনের ডিসি জসিম মোল্লা সকালের সময় কে বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নাই তবে এরকম কিছু হলে আমি অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব। এই বিষয়ে কোন পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত থাকলে কাউকে কোন ছাড় দেওয়া হবে না ।
হয়রানির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। এই হিউম্যান হলার লেগুনার অধিকাংশই নেই রুট পারমিট, ফিটনেস, লাইসেন্সবিহীন চালক, শিশু শ্রম। লেগুনার চালক, হেলপার ও মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই রুটে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০টি লেগুনা চলাচল করে। এসব লেগুনায় দীর্ঘদিন ধরেই চলছে নীরব চাঁদাবাজি। তবে এ চাঁদা তোলা হচ্ছে কয়েকটি ভাগে।
প্রথমে মিরপুর ১ নাম্বার থেকে শুরু হয় এ চাঁদা, পরে তা শেষ হয় দুয়ারীপাড়া এলাকায় গিয়ে।
আরো জানা গেছে, প্রতিদিন যে ৪৪০ টাকা চাঁদা তোলা হয় সোয়াস পরিবহন এর সভাপতি স্থানীয় ক্ষমতাশালী মো. অপু পরিচয়দানকারী। অনুসন্ধানে জানা যায় স্থানীয় ক্ষমতাশীল অপুকে সরাসরি সহযোগিতা করছেন মিরপুর ১ নাম্বার টি আই আব্দুল মজিদ।
লেগুনার চাঁদা শুধু রাজনৈতিক দলের পাতি নেতারাই খান না, তাদের সঙ্গে সঙ্গ গড়ে এ চাঁদার ভাগ নেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থেকে শুরু করে থানা পুলিশও। নাম প্রকাশে লেগুনার এক লাইনম্যান বলেন, ডিউটি রত পুলিশকে প্রতিদিন ২০০ টাকা করে দিতে হয়, তাছাড়া স্থানীয় থানা ট্রাফিক পুলিশ এবং সার্জেন্টকে মাসিক এবং সাপ্তাহিক একটি খরচ দিতে হয় সময় মতো তাদের খরচ না দিতে পারলে ততক্ষণ আমাদের গাড়ি রেকার করে অথবা বিভিন্ন মামলা দেয়।
তিনি আরও জানান, অপুর নিয়োগকৃত লোক মামুন এবং বাদল প্রতিদিন চাঁদা তোলার কাজটি করেন। তারাই চাঁদা তুলে সোয়াস পরিবহন এর সভাপতি অপুর কাছে দিয়ে দেন তারা পরে ভাগবাটোয়ারা করেন। বাংলাদেশে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও সড়ক পরিবহনে এর ব্যবহার বৃদ্ধির প্রবণতাকে উদ্বেগজনক বলে বর্ণনা করছেন বিশ্লেষকরা।
রাজধানী ঢাকাতেই শিশুরা হেলপার হিসেবে কাজ করছে এবং এমনকি অনেক শিশু লেগুনার মতো ছোট বাহন চালাচ্ছে, যা এই শিশুদের পাশাপাশি যাত্রীদেরও ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন লেগুনার মালিক জানান, চাঁদাবাজদের সঙ্গে মালিকরা কোনভাবেই পেরে উঠতে পারছেন না। তাদের কাছে তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালেই বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়। ফলে আয় রোজগার ঠিক রাখতে মালিকরাও আর কোন প্রতিবাদ করেন না।
লেগুনার এক চালক বলেন, পেটের কথা চিন্তা কইরা আমরা লেগুনার চালকরা কিছু কইতে পারি না।
তার কথা শেষ না হতেই আরেক চালক কথা টেনে বলেন, এ রুটে চাঁদাবাজি এখন নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাড়ি নামালেই চাঁদা দিতে হবে এটা মেনেই নিয়েছেন মালিকরা।