সম্মানের সঙ্গে বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবো : প্রধানমন্ত্রী

এইমাত্র জাতীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা বাঙালি, বাংলা আমাদের দেশ। এই বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে, সম্মানের সঙ্গে চলবে। কারো কাছে হাত পেতে নয়, আমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আত্মমর্যাদা ও সম্মান নিয়ে বিশ্বের বুকে চলবো।’
শনিবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একুশে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা মহামারি চলছে। যদিও ভ্যাকসিন আসছে, ভ্যাকসিন দিচ্ছি। এ বিষয়ে আরও গবেষণা চলছে। সেজন্য সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ম মেনে চলার অনুরোধ করছি। অন্তত মাস্ক পরা ও হাত ধোয়ার বিষয়টি মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি।’
ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ-বাঙালির সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাসের কথা অনুষ্ঠানে মনে করিয়ে দেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, “পাকিস্তানি শাসকরা যখন আমাদের উপর একটি বিজাতীয় ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল, তখন ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে করাচিতে একটি শিক্ষা সম্মেলন হয়। সেখানেই ঘোষণা হয়েছিল ঊর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।
“কিন্তু ঊর্দু কোনো মাতৃভাষা না, আর পাকিস্তান নামে যে দেশটি হয়েছিল, তার জনসংখ্যার ৫৬ ভাগের উপরেই আমরা বাঙালি। আমাদের ভাষা বাংলা ভাষা। কিন্তু সেই বাংলা ভাষা বাদ দিয়ে বিজাতীয় ভাষা আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সেই ঘোষণাটা পূর্ববঙ্গে আসার সাথে সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তখন প্রতিবাদ জানায়। তখনকার যিনি মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীও বলা হত, তার বাড়ির সামনে গিয়েও তারা সেখানে প্রতিবাদ জানিয়ে আসে।
“এরপর ১৯৪৮ সালে চৌঠা জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রলীগ নামের সংগঠন গড়ে তোলেন। এবং তারই প্রস্তাবে এই ভাষা আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়।”
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মিছিলে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর নির্দেশে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান সালাম, রফিক, বরকত, শফিউরসহ নাম না জানা অনেকে।
এরপর বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেয় তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায়ই ১৯৭১ সালে সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যদিয়ে আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর এক ঘোষণায় ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই সংগ্রামের মধ্য দিয়েই কিন্তু মূলত আমাদের স্বাধীনতা অর্জন। কারণ যারা আমাদের ভাষার উপর আঘাত করেছে, তাদের বিরুদ্ধেই তিনি প্রতিবাদ শুরু করেন।”
ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ‘গৌরবদীপ্ত অবদানের’ স্বীকৃতি হিসেবে ২১ বিশিষ্ট নাগরিক ও তাদের প্রতিনিধিদের চলতি বছরের একুশে পদক তুলে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক পদক তুলে দেন।
পদকপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা আমাদের বলতে গেলে রক্ত দিয়ে শুধু মাতৃভাষায় কথা বলা না, আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পথ তৈরি করে দিয়েছিল, আমরা তাদের প্রতি সম্মান জানাই।
“আপনারা আজকে আমাদের ভাষা শহীদ এবং ভাষা সৈনিকদের নামে পুরষ্কার পেয়েছেন। আমি আপনাদেরকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই, যারা সমাজের বিভিন্ন স্তরে বিশেষ অবদান রেখে আজকে এই পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন।”
দেশের শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান, গবেষণা, সংস্কতি চর্চা, সমাজসেবাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য এ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি মনে করি, এটা শুধু আপনাদের সম্মাননা না, এটা জাতির জন্য সম্মাননা, দেশের মানুষের জন্য সম্মাননা।”
আগে অল্প কয়েকজনকে এই সম্মাননা দেওয়া হলেও এখন সরকার ২১ শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ২১ জনকে এই সম্মাননা দিচ্ছে এবং পুরষ্কারের অর্থও বৃদ্ধি করেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব বদরুল আরেফীন। পদকপ্রাপ্তদের সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন প্রান্তে দেশের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানরা ছাড়াও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
তার আগে একে একে জাতীয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২১ সালে একুশে পদকপ্রাপ্ত ২১ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন পটভূমি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যারা রক্ত দিয়ে মাতৃভাষায় কথা বলাই নয়, স্বাধীনতা অর্জনের পথ তৈরি করে দিয়েছিল তাদের প্রতি সম্মান জানাই। আপনারা সেই ভাষা শহীদ এবং ভাষা সৈনিকদের নামে পুরস্কার পেয়েছেন।
সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের কাছ থেকে আগামী প্রজন্ম অনেক শিক্ষা নিতে পারবে। কারণ এই পুরস্কার দেশের শিল্প-সাহিত্য, বিজ্ঞান গবেষণা, সংস্কৃতি চর্চা, সমাজসেবাসহ বিভিন্ন কাজে যারা বিভিন্ন অবদান রেখে যাচ্ছেন, তাদেরকেই এই সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।
২১ জনকে পদক দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা যেহেতু ২১ ফেব্রুয়ারি। তাই ২১ জনকেই এখন থেকে আমরা সম্মাননা দিচ্ছি।
এ বছর একুশে পদকপ্রাপ্তরা হলেন ভাষা আন্দোলনে মরহুম মোতাহার হোসেন তালুকদার (মোতাহার মাস্টার) (মরণোত্তর), মরহুম শামছুল হক (মরণোত্তর) ও মরহুম আফসার উদ্দিন (মরণোত্তর)। শিল্পকলা বিভাগে সঙ্গীতে পাপিয়া সরোয়ার, অভিনয়ে রাইসুল ইসলাম আসাদ, সালমা বেগম সুজাতা (সুজাতা আজিম), নাটকে আহমেদ ইকবাল হায়দার, চলচ্চিত্রে সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী, আবৃত্তিতে ড. ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ও আলোকচিত্রে পাভেল রহমান। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে গোলাম হাসনায়েন, ফজলুল রহমান খান ফারুক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুমা সৈয়দা ইসাবেলা (মরণোত্তর), সাংবাদিকতায় অজয় দাসগুপ্ত, গবেষণায় ড. সমীর কুমার সাহা, শিক্ষায় মাহফুজা খানম, অর্থনীতিতে ড. মির্জা আব্দুল জলিল, সমাজসেবায় প্রফেসর কাজী কামরুজ্জামান এবং ভাষা ও সাহিত্যে এ সম্মাননা পেয়েছেন কবি কাজী রোজী, বুলবুল চৌধুরী ও গোলাম মুরশিদ।


বিজ্ঞাপন