স্পোর্টস ডেস্ক : সৌম্য-তামিমের বিধ্বংসী শুরু; সাকিব-মুশফিকের রেকর্ড গড়া জুটি আর শেষে মাহমুদউল্লাহ-মোসাদ্দেকের ব্যাটে চড়ে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে রান পাহাড় গড়েছে বাংলাদেশ। নির্ধারিত ৫০ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে ৬ উইকেটে ৩৩০ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার টার্গেট ৩৩১ রান।
২০১৯ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই রেকর্ডের খাতা নতুন করে লিখলো বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ ইতিহাসে নিজেদের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছে তারা। এটাই এখন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের গত বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৩২২ রান ছিল এতদিনের সর্বোচ্চ। ২০১৫ সালে নেলসনে স্কটিশরা করেছিল ৩১৮ রান, এই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে জয় নিশ্চিত করা বাংলাদেশ করেছিল ৩২২। আজ ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে নিজের প্রথম ম্যাচেই সেটা টপকে গিয়ে নতুন রেকর্ড গড়লো বাংলাদেশ।
রোববার লন্ডনের দ্য ওভাল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে তিনটায় শুরু হয় ম্যাচটি। বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ হলেও এটি দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ম্যাচ। নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের কাছে ১০৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছে প্রোটিয়ারা। টসে জিতে ব্যাটিং নিয়েছেন প্রোটিয়া অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস।
ব্যাটিংয়ে নেমে সতর্ক শুরু করে বাংলাদেশ। দারুণ শুরুর পর ইনিংসের নবম ওভারে বিদায় নেন তামিম। দলীয় ৬০ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আন্দ্রেইল ফেলুকাওয়োর বলে খোঁচা দিতে গিয়ে উইকেটের পেছনে কুইন্টন ডি ককের গ্লাভসবন্দি হন তামিম। তার আগে ২৯ বলে দুটি চারের সাহায্যে করেন ১৬ রান।
তামিম বিদায় নিলেও সাকিবের সাথে জুটি বেধে মারমুখী ছিলেন সৌম্য সরকার। কিন্তু দলীয় ৭৫ রানে মরিসের বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে তালুবন্দী হন ডি ককের। ফলে ৩০ বলে ৯ চারের সাহায্যে ৪২ রান তুলেন সৌম্য।
ক্রিস মরিসকে চার মেরে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৪৩তম হাফসেঞ্চুরির দেখা পান সাকিব। সেই সঙ্গে ক্রিকেটের তিন ফরম্যাট মিলে ১১ হাজার রানের দেখা পেয়েছেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাঠে নামার আগে এই মাইলফলক থেকে ছয় রান দূরে ছিলেন সাকিব।
সাকিবের পর হাফসেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন মুশফিক। আন্দিলে ফেলুকায়োকে চার মেরে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩৪তম হাফসেঞ্চুরি করেছেন তিনি। তামিম-সৌম্যের বিদায়ের পর খানিকক্ষণ চাপে পড়লেও অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান আর মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে দ্রুতই সেই বাজে অবস্থা কেটে যায়। দুজনের জুটিতে আসে ১৪২ রান। সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে বিশ্বকাপে নিজেদের সেরা জুটি পেয়েছে বাংলাদেশ। গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে মুশফিকের ১৪১ রানের জুটি ছিল আগের সেরা।
ইনিংসের ৩৬তম ওভারের প্রথম বলে বিদায় নেন সাকিব। ইমরান তাহিরের বলে বোল্ড হওয়ার আগে সাকিব করেন ৭৫ রান। সাকিব তার ৮৪ বলের ইনিংসে ৮টি চারের পাশাপাশি একটি ছক্কা হাঁকান। দলীয় ২১৭ রানের মাথায় বিদায় নেন সাকিব। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান টানছিলেন মোহাম্মদ মিঠুন। ইনিংসের ৪০তম ওভারে ইমরান তাহিরের বলে বোল্ড হন তিনি। তার আগে ২১ বলে দুই চার আর একটি ছক্কায় ২১ রান করেন মিঠুন। দলীয় ২৪২ রানের মাথায় বাংলাদেশ চতুর্থ উইকেট হারায়। পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন রানমেশিন মুশফিকুর রহিম। ফেলুকাওয়োর বলে ডিপ পয়েন্টে ডুসেনের হাতে ধরা পড়ার আগে মুশফিক করেন ৭৮ রান। মিডলঅর্ডারের এই ব্যাটিং স্তম্ভ ৮০ বলে আটটি চার হাঁকান।
এরপর মোসাদ্দেককে সঙ্গে নিয়ে এগুতে থাকেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ইনিংসের ৪৯তম ওভারে বিদায় নেন মোসাদ্দেক। ফেলুকাওয়োর বলে ক্রিস মরিসের হাতে ধরা পড়ার আগে তিনি করেন ২০ বলে ২৬ রান। যেখানে ছিল চারটি চারের মার। ৩৩ বলে ৪৬ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৩ বলে ৫ রান করে অপরাজিত থাকেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩৩০/৬ (তামিম ১৬, সৌম্য ৪২, সাকিব ৭৫, মুশফিক ৭৮, মিথুন ২১, মাহমুদউল্লাহ ৪৬*, মোসাদ্দেক ২৬, মিরাজ ৫*; এনগিডি ০/৩৪, ০/৫৭, ফিকোয়াও ২/৫২, মরিস ২/৭৩, মার্করাম ০/৩৮, তাহির ২/৫৭, ডুমিনি ০/১০)।