মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় ‘ভিআইপিদের’ নাম উঠবে কবে?

জাতীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় স্বীকৃতি পেতে চান বর্তমান সরকারের প্রতিমন্ত্রী, সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও প্রকৌশলীরা। তারা আবেদনও করেছেন। কিন্তু তাদের আবেদনপত্রগুলো কোথায় কিভাবে আছে জানা নেই। আদৌ তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগ আছে কিনা সেটাও জানেন না তারা। আরও অনেকের মতো তারাও জানতে চান, নতুনভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম তালিকাভুক্ত করার অগ্রগতি কতদূর? সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত করতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন। আবেদনপত্র কী অবস্থায় আছে তা জানেন না তিনি।
অপরদিকে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী জাতীয় সংসদের সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খানও আবেদন করেছেন। এ তালিকায় আছেন আরও কয়েকজন সংসদ সদস্য ও প্রকৌশলী। তাদের কারওরই আবেদন নিষ্পত্তি হয়নি বলে জানা গেছে।
এদিকে নতুন করে আর কোনও মুক্তিযোদ্ধাকে তালিকাভুক্ত করার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। সর্বশেষ গত ২৫ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনেও এ তথ্য জানিয়েছিলেন তিনি। তাই প্রশ্ন উঠেছে, ভিআইপি মুক্তিযোদ্ধাদের আবেদনপত্রের ভবিষ্যৎ তবে কী?
জানা গেছে, এসব ভিআইপি মুক্তিযোদ্ধাদের নাম তালিকাভুক্ত করার আবেদনে ইতিবাচক সাড়া দেখিয়েছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। এ বিষয়ে সুপারিশও করেছে জামুকা। বিষয়টি এখন মন্ত্রণালয়ে যাবে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, বেশ কয়েকবার আবেদন করেছিলাম। কিন্তু স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন অজুহাতে আমার আবেদনপত্র বাতিল করে দিয়েছেন। কখনও ফেলে দিয়েছেন। কখনও বলেছেন আবেদনপত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই আবারও আবেদন করেছি। তিনি জানিয়েছেন আবেদনপত্রটি এখন পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওটা একটি উপকমিটিতে পাঠিয়েছে জামুকা। ‘আমাকে আর কিছুই জানানো হয়নি।’ বললেন স্বপন ভট্টাচার্য।
অপরদিকে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান জানিয়েছেন, বিভিন্ন কারণেই আবেদন করা হয়নি। তাই এবার গুরুত্ব দিয়ে করেছি। দেখি কী হয়?
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) পরিচালক সেলিম ফকির জানিয়েছেন, আপাতত নতুন করে কোনও বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম গেজেটভুক্ত করার কোনও সিদ্ধান্ত সরকারের নেই। তবে যারা ২০১৪ ও ২০১৭ সালে জামুকায় আবেদন করেছেন সেসব আবেদনপত্রগুলোর ওপর শুনানি হবে। যা চলমান রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী জানিয়েছেন, তাদের আবেদনপত্রগুলো পেয়েছি। বিষয়টি জামুকায় রয়েছে। কাজ চলছে। তাদের আবেদনসহ নতুনভাবে অন্য যারা তালিকাভুক্ত হতে আবেদন করেছেন তাদের আবেদনের ওপর শুনানি হবে। তখন তাদেরকেও ডাকা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে গত ২৫ মার্চ মোট এক লাখ ৪৭ হাজার ৫৩৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ১৯১ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রকাশ (প্রথম পর্যায়) করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী বলেন, ‘প্রায় ৩৫ হাজার বেসামরিক নাগরিকের গেজেটটি জামুকার অনুমোদন না থাকায় তালিকার বাইরে রাখা হয়েছে। এরইমধ্যে এসব গেজেট নিয়মিতকরণের লক্ষ্যে ৪৩৪টি উপজেলার প্রতিবেদন পেয়েছি। সেগুলো যাচাই-বাছাই এবং আপিল শুনানি শেষে ৩০ জুনের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম চূড়ান্ত তালিকায় প্রকাশ পাবে।’
এ সময় মন্ত্রী বলেন, ‘এই তালিকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতার নামও রয়েছে। জিয়াউর রহমান ও খন্দকার মোশতাকের নামও তালিকায় রয়েছে। তবে এই দুই জনের নামের সঙ্গে তাদের পরবর্তী কর্মকা-ের বিষয়ও লিপিবদ্ধ থাকবে।’
উল্লেখ্য, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইনের ৭ (ঝ) ধারার ব্যত্যয় ঘটিয়ে অনুমোদন ছাড়া যেসব বেসামরিক বীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট প্রকাশিত হয়েছে, জামুকার ৭১তম সভায় তা যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত হয়।
একই অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, দেরিতে হলেও আমরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছি। দেশের প্রখ্যাত গবেষকদের নিয়ে কমিটি করা হয়েছে। এরইমধ্যে কমিটি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সংজ্ঞাও নির্ধারণ করেছে। প্রথম ধাপে ১৯১ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রকাশ করেছি। যাচাই শেষে ধাপে ধাপে আরও তালিকা প্রকাশ হবে।


বিজ্ঞাপন