নিজস্ব প্রতিনিধি : ছেলেটির নাম ইয়াসিন। বয়স মাত্র ০৭ বছর। স্বভাবে অত্যন্ত চঞ্চল পিতৃহারা ছেলেটি ফিরে পেল তার পরিবার। আবেগাপ্লুত মা ও পরিবার। পুলিশের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।
শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) নিখোঁজ হওয়া ছেলেটিকে পুলিশ তার মা’য়ের হাতে হস্তান্তর করেন।
কামরাঙ্গীরচর থানা সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) টঙ্গী পূর্ব থানাধীন আদারকল নামক এলাকার বাসা থেকে সকালে বের হয়ে টঙ্গী রেলস্টেশনে আসে। এরপর সে রেলে চড়ে কমলাপুর রেলস্টেশনে যায়। তারপর কমলাপুর-সদরঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে ঘুরতে বুধবার (১৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় কামরাঙ্গীরচর থানাধীন মাদবর বাজার এলাকায় আসে।
সেখানকার মুসল্লীরা তারাবির নামাজের পর শিশুটিকে কাঁদতে দেখতে পেয়ে কামরাঙ্গীরচর থানায় খবর দেয়। খবর পেয়ে কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশ ছেলেটিকে থানা হেফাজতে নিয়ে আসে এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করে।
জানা যায়, লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার জনাব বিপ্লব বিজয় তালুকদার মহোদয় ছেলেটির প্রকৃত অভিভাবকের নিকট হস্তান্তরের জন্য লালবাগ জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার কে. এন. রায় নিয়তিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন।
নির্দেশনা মোতাবেক শিশুটির প্রকৃত অভিভাবকের নিকট হস্তান্তরের জন্য যথাযথ আইনী প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন জায়গায় বার্তা প্রেরণ করা হয়। এছাড়াও ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেলেটির ছবিসহ প্রাপ্তি সংবাদ ব্যাপক প্রচার করা হয়।
অন্যদিকে ছেলেটির মা শামসুন্নাহার (৩৫) তাঁর ছেলেকে না পেয়ে দিগ্বিদিক ছুটোছুটি করে খুঁজতে থাকেন। এমনিতেই তিনি গত বছরের মার্চে স্বামীকে হারিয়েছেন। দুই ছেলেমেয়ে লিমা (১২) ও ইয়াসিন(৭)- কে নিয়ে টঙ্গীর দাদা গার্মেন্টসে চাকুরী করে অনেক কষ্টে সংসার চালান। বুকের মানিক পুত্রসন্তানকে আশেপাশে অনেক খোঁজাখুঁজি করে কোথাও না পেয়ে স্থানীয় টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি নিখোঁজ সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেন।
দুইদিন অপেক্ষা করেও কোন প্রকৃত অভিভাবক ছেলেটির সন্ধানে থানায় যোগাগোগ করেনি। এরপর ছেলেটির সাথে নিবিড় কথাবার্তা বলা হয়। সে জানায় এয়ারপোর্ট রেলস্টেশনে গেলে সে তার বাসায় যেতে পারবে।
আরও জানা যায় , সেজন্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে কামরাঙ্গীরচর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর প্রকৃত অভিভাবকের খোঁজে এসআই মিলনের নেতৃত্বে ছেলেটিসহ একটি টীমকে শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) সকালে এয়ারপোর্ট রেলস্টেশনের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন।
এয়ারপোর্ট রেলস্টেশনে পৌঁছানোর পর তারা ছেলেটির কথামতো টঙ্গী রেলস্টেশনের দিকে হাঁটতে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে আজমপুর এলাকায় পৌঁছে ছেলেটির প্রদত্ত ঠিকানা স্থানীয় লোকজনের সাথে আলোচনা করা হয় এবং তাদের নির্দেশনা মোতাবেক টঙ্গীর আটারকল পাগাড়পাড় এলাকায় গিয়ে সন্ধ্যার দিকে তার মাকে খুঁজে পাওয়া যায়।
এরপর টঙ্গী পূর্ব থানার সাথে সমন্বয় করে যথাযথ আইনী প্রক্রিয়ায় ছেলেটির মা শামসুন্নাহারের (৩৫) কাছে তার বুকের মানিককে বুঝিয়ে দেয়া হয়।