বসুন্ধরার এমডি ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি

অপরাধ

নিজস্ব প্রতিবেদক: চাঞ্চল্যকর গুলশানে লাখ টাকার ভাড়া করা ফ্ল্যাটে নিহত মুনিয়া হত্যা প্ররোচণা মামলার প্রধান আসামী বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি আনভীরসহ সহযোগীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন মামলার বাদি ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটি ও মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কেন্দ্রীয় সংসদ।
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মোসারাত জাহানা মুনিয়া হত্যার প্রধান আসামী বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরসহ সকল সহযোগীদের দ্রুত গ্রেফতার করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সভাপতি মেহেদী হাসান।
লিখিত বক্তব্যে অনতিবিলম্বে মুনিয়া হত্যা মামলার প্রধান আসামী বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনাসহ ৫ দফা দাবি জানানো হয়।
এছাড়া, মুনিয়া হত্যা মামলায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে আনভীরের মা, পিয়াসা এবং তার সহযোগী মিশু হাসান, বাড়ীর মালিক, নিরাপত্তা প্রহরী, গাড়ী চালকসহ সন্দেহভাজন সকল ব্যক্তিকে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। গণমাধ্যমকে অপব্যবহার করে বাদী ও মৃত মুনিয়ার চরিত্র হনন করার চেষ্টায় লিপ্ত বসুন্ধরা গ্রুপের সকল মিডিয়ার লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। আর ভূমিদস্যু বসুন্ধরা গ্রুপ কর্তৃক জবরদখলকৃত ব্যক্তি ও সরকারি খাস জমি ভূমি মালিকদের ফেরত দেয়ার দাবি করা হয়। আলোচিত মুনিয়া হত্যা মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মিডিয়া সেলের মাধ্যমে জনসম্মুখে প্রকাশ করা হোক।
সংবাদ সম্মেলনে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন করা না হলে বসুন্ধরা গ্রুপ কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্থ ও সর্বপর্যায়ের জনগণকে সাথে নিয়ে যৌক্তিক দাবি আদায়ে দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত থাকার কথা জানানো হয়।
আর লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ২৬ এপ্রিল রোড নং ১২০, বাসা নং-১৯ গুলশান-২ এ বাসায় খুন হয় মোসরাত জাহান মুনিয়া। এ এঘটনায় তার বড় বোন বীর মুক্তিযোদ্ধার কন্যা নুসরাত জাহান তানিয়া বাদি হয়ে গুলশান থানায় মামলা করেন। মামলার প্রধান অসামী বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর। এই মামলা দায়েরের পর থেকেই মুনিয়াকে চরিত্রহীন বানানো এবং তার বোন তানিয়ার চরিত্র হননে অপপ্রচার, বাদী ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। আর মামলা প্রত্যাহারে নানা ধরণের প্রলোভনসহ ভয়-ভীতি প্রদর্শন করায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বাদি থানায় জিডি করেছেন।
মোসারাত জাহান মুনিয়া হত্যাকান্ডের ঘটনাটি শুরু থেকেই আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপ খুবই তৎপর রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, বসুন্ধরা গ্রুপের গণমাধ্যমে পাঠক ফোরামের সদস্য হওয়ার সুবাদে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম ও সংশ্লিষ্টদের সাথে তার চেনা জানা ছিল আর সেই সূত্র ধরে একটা অনুষ্ঠানে যান। সেখানে প্রধান অতিথি ছিল বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর। সম্ভবত সেখান থেকেই মুনিয়া আনভীরের চোখে পড়ে এবং এরকম একটা ছোট মেয়েকে প্রলোভন দেখিয়ে সম্পর্কটাকে ব্যক্তিগত পর্যায় নিয়ে যায়। যা আনভীরের পরিবার জানলে এক পর্যায়ে পিয়াসা নামক একজন নারীর মাধ্যমে আনভীরের মা ডেকে নিয়ে মুনিয়াকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন বলে জানতে পেরেছি।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়েছে, সাধারণত কোন এজাহার হলেই পুলিশ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হয়ে উক্ত অভিযোগকৃত ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনতে নানা ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। এমনকি অভিযোগকারীকে না পেলে তার বাবা-মা, স্ত্রী, পরিবারের সদস্যদের এবং সন্দেহভাজন অনেককেই গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু মুনিয়া হত্যা মামলার ক্ষেত্রে প্রধান আসামী প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনগণের মনে সংশয়, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে যা আমরাও প্রত্যক্ষ করছি। তাহলে আমরা কি বুঝে নিব, প্রশাসন তাদের হাতে জিম্মি?
কলেজ ছাত্রী মুনিয়া হত্যাকান্ড পরই দ্রুত দেশ ছাড়ে আনভীরের মা’সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যগণ। আনভীরের মা হত্যার হুমকি দেয়ার পর মুনিয়া ঢাকা ছেড়ে চলে যায় এবং আবার ফিরে আসার পর তার ছেলে আনভীরের সাথে সম্পর্ক চলমান রাখে। ক্ষেত্রে আমরা মনে করি আনভীরের পরিবারের সদস্যরা এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকতে পারে। এটা হত্যাকান্ড না হত্যা এটা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। মৃত্যুর আগে শারমিন সাহেদ ও মুনিয়ার বড়বোন তানিয়ার ফোন আলাপে মুনিয়ার মৃত্যু আশঙ্কায় উদ্বেগ, লাশ উদ্ধারের সময় রুমের দরজার অবস্থান, লাশের অবস্থান, রুমের পারিপার্শিক অবস্থা, ও মুনিয়ার লিখিত ডায়েরীসহ বিভিন্ন আলামত পর্যালোচনায় অবস্থাদৃষ্টে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে এটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোন বলয়ের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করলে মুনিয়া হত্যার প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে বলে আমরা মনে করি। আনভীর দেশে না বিদেশে তা নিয়ে ধু¤্রজাল সৃষ্টি ও আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় মুনিয়া হত্যায় ন্যায় বিচার আদৌও হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কিত বলে জানান তারা।


বিজ্ঞাপন