স্বাস্থ্যবিধি মেনে অধিবেশন শুরু
বিশেষ প্রতিবেদক : কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে জাতীয় সংসদের ত্রয়োদশ (বাজেট) অধিবেশন শুরু হয়েছে। বুধবার বিকাল ৫টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়।
অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন। তবে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ অধিবেশনে যোগ দেননি।
দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যুহার বেড়েছে। শনাক্ত হয়েছে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টও (ধরন)। করোনার এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মাথায় রেখে বাজেট অধিবেশন উপলক্ষে ৫৬টি প্রস্তুতি নিয়েছে সংসদ সচিবালয়।
প্রস্তুতির মধ্যে রয়েছে-এমপি-মন্ত্রীদের তিন দিন পরপর করোনা টেস্ট করা, অধিবেশন সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকসহ সবার করোনা টেস্ট বাধ্যতামূলক করা এবং যারা অধিবেশন কক্ষে থাকবেন, তাদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা।
এছাড়া সংসদ অধিবেশন শুরুর দিন থেকে শেষদিন পর্যন্ত সংসদ চত্ত্বরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তব্যরত সদস্য ব্যতীত অন্য কেউ আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্য, ছুরি বা চাকু অথবা এমন কিছু, যা মানুষের জীবননাশের কারণ হতে পারে, তা বহন করতে পারবেন না। সবাইকে পরতে হবে দু’টি করে মাস্ক।
সবচেয়ে বড় বাজেট : আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থমন্ত্রী। বিশাল আকারের এই বাজেটে সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে মানুষের জীবন ও জীবিকা। জোর দেওয়া হবে স্বাস্থ্য খাতে। করোনা মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত সবার জন্য কিছু না কিছু দেওয়ার চেষ্টা করবেন অর্থমন্ত্রী। নতুন করের বোঝা চাপাতে চান না অর্থমন্ত্রী। করোনা বাস্তবতায় সংসদের এবারের বাজেট অধিবেশন হবে সংক্ষিপ্ত। মহামারীর কারণে মানুষের আয় যেমন কমেছে, ঠিক তেমন সরকারেরও আয় কমেছে। ফলে রাজস্ব ঘাটতি বেড়েছে। এ কারণে বাজেট ঘাটতিতে সৃষ্টি হবে নতুন রেকর্ড। আর সেই ঘাটতি মোকাবিলায় এবার কৌশল পরিবর্তন করে অভ্যন্তরীণ উৎসের চেয়ে বৈদেশিক উৎসের প্রতি নির্ভরতা বাড়ানোর চেষ্টা করবেন অর্থমন্ত্রী। নতুন করে করের জাল বিস্তৃত করে রাজস্ব আয় বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে এনবিআর।
বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা জানান, আসছে বাজেটের মোট আকার হতে পারে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার। বাজেটে মোট আয় ৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। সামগ্রিক ঘাটতি দাঁড়াবে প্রায় ২ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। মানুষের হাতে টাকার সরবরাহ বাড়াতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও বিনিয়োগ টানার চেষ্টা থাকবে বছরজুড়েই। এ জন্য বাজেটে মোট উন্নয়ন ব্যয় ২ লাখ ৩৭ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা ধরা হচ্ছে। আর মোট অনুন্নয়ন ব্যয় ৩ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হবে প্রায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংক ঋণ নেওয়া হবে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। সূত্র জানায়, করোনাভাইরাস মহামারীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। জীবিকার তাগিদে মৃত্যুঝুঁকি জেনেও প্রাত্যহিক কাজে যাচ্ছে মানুষ। কিন্তু টানা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা করোনার তান্ডবে চরম মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। লাখ লাখ মানুষ হয়ে পড়েছে কর্মহীন। আড়াই কোটি মানুষের নতুন করে দরিদ্রের খাতায় নাম উঠেছে। এ অবস্থায় আসছে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে জীবন ও জীবিকা। অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকছে স্বাস্থ্য সুরক্ষা, কর্মসংস্থান। ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কৃষি খাতে থাকছে বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা। থাকবে দেশীয় শিল্পের সুরক্ষার ঘোষণা। দরিদ্র মানুষকে সুবিধা দিতে বাড়বে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা। করোনা মহামারীতে মানুষ ও সরকারের আয় কমে যাওয়ায় সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটানোর চেষ্টা থাকবে বাজেটে।
সরকারি গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) তথ্যমতে, করোনা মহামারীতে নতুন করে ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। নতুন দরিদ্রদের বেশির ভাগই করোনার কারণে চাকরিহারা। সামষ্টিক অর্থনীতির বেশির ভাগ সূচকই নেতিবাচক পর্যায়ে। রাজস্ব আয়েও ধীরগতি। ফলে মানুষকে কষ্ট না দিয়ে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট বক্তৃতাতেও তিনি এ প্রসঙ্গে আলোকপাত করবেন। এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ও গবেষণা সংস্থা পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীতে আমাদের সবকিছুই লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। জীবন-জীবিকা থেমে গেছে। বহু মানুষ কাজ হারিয়েছে। প্রতিদিন প্রাণহানি ঘটছে। এতে দেশের অর্থনীতির যে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে সেটির স্বীকৃতি দিতে হবে। গত এক বছরে করোনার প্রভাবে অর্থনীতির কোন খাতে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা সরকারকে নিজস্ব উদ্যোগে যাচাই-বাছাই করতে হবে। এর আলোকে আগামী অর্থবছরের বাজেটে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা নিতে হবে। যে পরিকল্পনা নেওয়া হবে তা হতে হবে বাস্তবভিত্তিক। একই সঙ্গে তা বাস্তবায়ন করতে অত্যন্ত শক্তিশালী মনিটরিং ব্যবস্থাও থাকতে হবে। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিয়ে মানুষকে কাজের সুযোগ করে দিতে হবে। অনেকেই কাজ হারিয়েছেন। আবার অনেকেই নতুন করে দরিদ্র হয়ে গেছেন। করোনার কারণে দুই ধরনের দরিদ্র তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে যারা আগে থেকে দরিদ্র্য ছিল, তারা আরও দরিদ্র হয়েছে। যারা আগে দারিদ্র্যসীমার বাইরে ছিল, তাদের আয় কমে যাওয়ায় নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। গ্রামের তুলনায় শহর এলাকায় দারিদ্র্যের হার বেশি বেড়েছে। কাজহারা ও কর্মহীনদের কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। বাজেটে এ সংক্রান্ত সুস্পষ্ট উদ্যোগ ও ঘোষণা থাকতে হবে এবং সে উদ্যোগ বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।