এড, সাইফুজ্জামান শেখর : ২০০১ সালে ষড়যন্ত্রের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতা দখল করে। এরপর দুর্নীতি ও অপশাসনের মহোৎসবের মধ্য দিয়ে পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হয় তাদের। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর, নিয়ম অনুযায়ী একটি সর্বজন গ্রহণযোগ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা তাদের।
কিন্তু লুটপাট অব্যাহত রাখার জন্য অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে, বঙ্গবন্ধুর দুই খুনির স্বজন ও সাবেক একজন বিএনপি নেতাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে বসানোর পাঁয়তারা করেন খালেদা জিয়া।
এ ব্যাপারে তীব্র আপত্তি জানায় আওয়ামী লীগ। সংবিধান অনুসারে একজন নির্দলীয় ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে এই পদে বসানোর দাবি জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা ও তৎকালীন প্রধান বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা।
কিন্তু স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়ার পরামর্শে, ২৯ অক্টোবর রাতে, সংবিধান লঙ্ঘন করে, নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন বিএনপি সমর্থিত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ। ফলে সৃষ্টি হয় সাংবিধানিক সংকট।
দেশজুড়ে এই অচলাবস্থার মধ্যেই, ৭ ডিসেম্বর তফসিল ঘোষণা করা হয় এবং ২২ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন নির্ধারণ করে, বিএনপি-জামায়াত নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন কমিশন।
এরপর ১০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের আদেশে দেশে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমেও পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটায় এবং বিএনপি-জামায়াত জোট একতরফা সাজানো নির্বাচনের ছক থেকে সরে না আসায়, ২০০৭ সালের ৩ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা।
এরপর, ৫ জানুয়ারি, লন্ডনের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ইকোনোমিস্টের প্রতিবেদনে আসন্ন একতরফা নির্বাচনকে অর্থহীন বলে অভিহিত করা হয়।
এদিকে দেশজুড়ে উত্তাল রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ কাজে লাগিয়ে সরকারের ক্ষমতা দখলের উদ্যোগ নেয় সামরিক বাহিনীর কিছু সদস্য।
১১ জানুয়ারি, ২০০৭, শীতের পড়ন্ত বিকালে, সেনা প্রধান মইন ইউ আহমেদের নেতৃত্বে তিন বাহিনীর প্রধান এবং আরো কিছু সেনাসদস্য বঙ্গভবনে যান।
তাদের পরামর্শে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের পদ থেকে অব্যাহতি নেন এবং দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন।
মধ্য রাতে ফখরুদ্দীন আহমদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব দেন তারা।
ফলে অঘোষিতভাবে সামরিক কর্মকর্তাদের হাতে চলে যায় দেশের শাসন ক্ষমতা।
বেসামরিক ও সুশীল সমাজের ছদ্মবেশে সামরিক শাসন শুরু হয় দেশে। অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত হয়ে যায় নির্বাচন প্রক্রিয়া।
রাজনীতিবিদদের প্রতি হয়রানিমূলক আচরণ শুরু হয়। এমনকি দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করা হয় এবং নির্বাসনে পাঠানোর ষড়যন্ত্র হয় সর্ববৃহৎ দল আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাকে।