শত কোটি টাকার মালিক রাজস্ব পরিদর্শক আলীমের বিরুদ্ধে ওয়াসার শুদ্ধি অভিযান কমিটিতে আবেদন

অপরাধ অর্থনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা ওয়াসার ধনকুবের খ্যাত প্রায় ১০০ কোটি টাকার সম্পদের অধিকারী রাজস্ব পরিদর্শক আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্যে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ গঠিত শুদ্ধি অভিযান কমিটিতে আবেদন করেছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও ” দুর্নীতি বাজদের ঘৃণা করি, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা আমরা গড়ি” শীর্ষক আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক এম. নাজমুল হুদা। এরপূর্বে ঢাকা ওয়াসার সিবিএ নেতা আনোয়ার হোসেন দুর্নীতি দমন কমিশনে আব্দুল আলীমের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্যে আবেদন করেছেন।
তিনি তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারি।চলাফেরা করেন দামি প্রাইভেট কারে।সর্বসাকুল্যে বেতন ৩৫ হাজার টাকা।অথচ তার ৪জন সহকারির বেতন ৮০ হাজার টাকা। ড্রাইভারের বেতন ২৫ হাজার টাকা। নিয়মিত অফিস করেন না। মাঝেমধ্যে এসে একসাথে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। রহস্যজনক কারনে রাজস্ব কর্মকর্তা তার প্রতি সদা দয়াবান। এই কারনে তার জবাব দিহীতা করতে হয়না।ঢাকা শহরে একাধিক বাড়ি, ফøাট,প্লট । রয়েছে ব্যাংক ব্যালেন্স। ঢাকা ওয়াসায় ধনকুবের খ্যাত এই রাজস্ব পরিদর্শক আব্দুল আলিম কে মিরপুরের মাজার রোডের জমিদার অভিহিত করা হয়।ক্ষমতা ও টাকার দাপট এতটাই যে, সাংবাদিকরা সংবাদ প্রকাশের পূর্বে রীতি অনুযায়ি বক্তব্য নিতে গেলে দেখে নেয়ার হুমকি দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, মোঃ আবদুল আলীম, পিতা মৃত- আবুল হাশেম, সাং- শহীদ নগর, পোÑ জয়দরখালী,থানা- পাগলা, জেলা -ময়মনসিং ।ঢাকা ওয়াসার রাজস্ব জোন-৩ এর ভিআইপি রাজস্ব পরিদর্শক ও ওয়াসার শ্রেষ্ঠ ধনী খ্যাত আব্দুল আলীম এর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজস্ব পরিদর্শক আব্দুল আলীম ঢাকা ওয়াসার ৩নং জোনে কর্মরত । ব্যক্তিগত চার জন সহকারী দিয়ে সাইট পরিচালনা করেন। সাইট পরিদর্শনে তিনি কখনও যাননা। তার নিয়োগকৃত ব্যক্তিগত সহকারী বাবুল,রিফাত, দুর্নীতির অভিযোগে ওয়াসার পিপিআই প্রকল্প থেকে চাকুরি চ্যুত তার ভাতিজা শাহিন ও হাবিব কে দিয়ে ডিউটি করান। সম্প্রতি অবৈধ লেনদেনের বিরোধে ২০ বছর ধরে কর্মরত সহকারী বাবুলকে চাকুরিচ্যুত করেন। আলীম’র অবৈধ কর্মকান্ড ও সম্পদের বিবরণ সম্বলিত বাবুলের ফোন রেকর্ড সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। সূত্রমতে , তিনি দীর্ঘ দিন কলাবাগান সাইটে দায়িত্বরত ছিলেন। মোট হিসাব সংখা ছিল ৬৮৫টি।( কলাবাগান ১ম লেনে হিসাব সংখ্যা-১২৬), (কলাবাগান ২য় লেনে হিসাব সংখ্যা ২৪৬), (লেকসার্কাস রোডে হিসাব সংখ্যা-২২৩), (বশিরউদ্দিন রোডে হিসাব সংখ্যা-৯০) । বর্তমানে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ধানমন্ডির সাইটে ৮৬৬ টি একাউন্ট পরিচালনা করছেন। এরমধ্যে সাত মসজিদ রোড পুর্ব ২৬ টি ,ধানমন্ডি ৬/এ থেকে ১৩/এ পর্যন্ত ৪৫০ টি,১৪/এ থেকে ১৫/এ পর্যন্ত ৩১১ টি এবং ধানমন্ডি ১১ নং রোড থেকে ১৬ নং রোডে ৭৯ টি একাউন্ট। বহিরাগত দিয়ে কাজ করানো সম্পূর্ণ বেআইনী ।৫ জুলাই ২০১৮ ইং তারিখে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এক আদেশের মাধ্যমে বহিরাগত নিয়োগ নিষিদ্ধ করে। যার স্মারক নং রা/৮২০২ প্র:রা:ক:-৫/৭/২০১৮ইং।


বিজ্ঞাপন

 

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, তার চাকুরীর বেতনের সহিত বর্তমান যে বিপুল পরিমাণ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে তাহা অসামঞ্জস্যপূর্ণ। উক্ত সম্পদের বিবরণ তুলে ধরা হলোঃ আলহাজ্ব মোঃ আবদুল আলীম নিজ নামে ঢাকার শহরের প্রাণকেন্দ্রে -১৩৭/৬, দ্বিতীয় কলোনী,মাজার রোড, শহীদ বুদ্ধিজীবী গেট ,ওর্য়াড নং- ১০,থানা-দারুস-সালাম, মিরপুর,ঢাকা-১২১৬-এ জায়গা ক্রয় করিয়া বাড়ি নির্মাণ করেছেন। জমির পরিমান ৬ কাঠা। প্রথম স্ত্রী মিসেস পান্না বেগমের নামে বাসা-১৪১/১, দ্বিতীয় কলোনী,মাজার রোড, শহীদ বুদ্ধিজীবী গেট ,ওর্য়াড নং- ১০,থানা-দারুস-সালাম, মিরপুর,ঢাকা-১২১৬ জমি ক্রয় করিয়া চারতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। জমির পরিমান ৫ কাঠা। মোঃ আব্দুল আলীম নিজ নামে ঢাকার শহরের প্রাণকেন্দ্রে (১৫৬/৩ সিটি কর্রোপরেশন নং-) হাউজিং নং- ২৮বি/এ হাউজিং নং-,মাজার রোড, দ্বিতীয় কলোনী,দারুস- সালাম থানা, মিরপুর-১,ঢাকা-১২১৬ বাড়ি ক্রয় করিয়া টিনশেড বাড়ি হিসেবে দিয়েছেন। ভাড়ার পরিমাণ প্রায় ৫৪০০০/- টাকা। তার নিজ নামে ঢাকার শহরের প্রাণকেন্দ্রে নিউমার্কেটের নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্সএর ৪৪/১ রহিম স্কয়ার নিউমার্কেট ঢাকার বিশ্বাস বিল্ডারস লিঃ-এ দোকান ক্রয় করেছেন। যাহার মূল্য অর্ধকোটি টাকা। তার নিজ নামে ঢাকার শহরের উত্তরায় ১০ নং- সেক্টরে রোড নং- ১০, বাড়ি নং- ০১, রানি নিবাস প্রোপাটিজ উত্তরা,ঢাকায়-১২৩০ থেকে চারতলায় একটি বিলাসবহুল ফ্লাট ক্রয় করেছেন। যাহা ১২৫০ স্কয়ার ফিট। উক্ত বাসা থেকে মোটা অংকের টাকা ভাড়া পান। তার নিজ নামে ঢাকার শহরের বসুন্ধধারা আবাসিক এলাকার ডি- ব্লকের ১০ নং- রোডের -৩১৩ হোল্ডিংয়ে নন্দন হুদা পারভীন প্রোপাটিজ থেকে একটি বিলাসবহুল ফ্লাট ১৪৫০ স্কয়ার ফিট যাহা প্রায় (এক) এক কোটি টাকা দিয়ে ক্রয় করেছেন।
ফ্লাট- এ/৩, উক্ত বাসা থেকে মাসিক ৪৫,০০০/- টাকায় ভাড়া দিয়েছেন। নিজ নামে ঢাকার শহরের চিড়িয়াখানা বেরীবাধ বিরুলিয়া ব্রিজ ও প্রিয়াংকা সুটিং স্পটের পাশে তিনটি প্লট ক্রয় করেছেন। যাহার আনুমানিক মূল্য (৫) পাচ কোটি টাকা। বিশ্বস্তসুত্রে জানা যায় যে, নিজ নামে ঢাকায় শেয়ার বাজারে ১৫-২০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছেন । নামে বেনামে বিশ্বস্তসুত্রে জানা যায় যে, নামে ঢাকার বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর করা আছে। উক্ত এফডিআর এর পরিমাণ ৮০- ৯০ লক্ষ জানা যায়। বিশ্বস্তসুত্রে জানা যায় যে, নিজ নামে ঢাকার বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর এর পাশাপাশি রুপালী ব্যাংক মোঃপুর শাখা, জনতা ব্যাংক শান্তিনগর শাখা ও জনতা ব্যাংক ওয়াসা, ভবন শাখায় বিপুল অংকের নগদ টাকা আছে। নিজ গ্রামে , স্ত্রী পান্ন্ বেগমের নামে,সন্তানের নামে ও নামে-বেনামে কমবেশী ৫০ বিঘা জমি ক্রয় করেছেন।

ওয়াসা ও আলির এলাকাবাসি সূত্রে জানাগেছে, আলি শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক।চতুর আলী আইনগত ঝামেলা এড়ানোর জন্যে নিজের স্ত্রী ,দুই ছেলে ,এক মেয়ে ও আতী¡য় স্বজনের নামে সম্পদ গড়েছেন। তার পরিবার ও আত্বীয় স্বজনের সম্পদ ও ব্যাংক ব্যালেন্স তদন্ত করলেই প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাবে বলে সংশ্লিষ্টগণ মনে করেন। তার সর্বসাকুল্যে বেতন ৩৫ হাজার টাকা।অথচ তার ব্যক্তিগত ৪ সহকারির বেতন ৮০ হাজার টাকা ও ড্রাইভারের বেতন ২০ হাজার টাকা। তৃতীয় শ্রেণীর একজন কর্মচারির সম্পদ ও বিলাসী জীবন যাপন দেখে খোদ ওয়াসার কর্মকর্তরাও অবাক।আব্দুল আলীর আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদের তদন্তের জন্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন ঢাকা ওয়াসার সাধারণ কর্মচারীগণ। ইতোমধ্যে ওয়াসার একাধিক কর্মচারি আব্দুল আলিমের আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ ও দুর্নীতির তদন্ত চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে আবেদন করেছেন। দুদক কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় ওয়াসার কর্মচারিগণ হতাশ।