আজকের দেশ রিপোর্ট : সপ্তাহখানেক ধরে সারাদেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ঢালিউডের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পরীমনি।
সাভারের বিরুলিয়া এলাকায় ঢাকা বোট ক্লাবে গিয়ে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েও থানায় অভিযোগ দিতে না পারা, ফেসবুক পোস্ট ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে যৌন নিগ্রহের শিকার হওয়ার ঘটনায় বিচারপ্রার্থনা, এর মাধ্যমেই আলোচনায় উঠে আসেন তিনি।
এর পরপরই পরীমনির মামলা নেওয়া হয়, গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ পাঁচ জনকে।
এর মধ্যেই ঘটনাপ্রবাহে নতুন মাত্রা যুক্ত হয় যখন গুলশান-১ এলাকায় অবস্থিত অল কমিউনিটি ক্লাব কর্তৃপক্ষ অভিযোগ আনে, পরীমনি মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় অসদাচরণ ও ভাঙচুর করেছেন তাদের ক্লাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিভিন্ন ক্লাবের সদস্যরা দাবি জানিয়েছেন যে, পরীমনিকে বার ও ক্লাবগুলোতে নিষিদ্ধ করা হোক।
শুধু ক্লাব সদস্যই নয়, ক্লাবগুলোর নিয়মিত অতিথিদের মধ্যে চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নায়ক, প্রযোজক, পরিচালক, কলাকুশলীরাও এমন দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন।
বার ও ক্লাবের সদস্যরা পরীমনির বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নিতে রীতিমতো চাপও প্রয়োগ করছেন।
এ অবস্থায় রাজধানীর সব ক্লাব ও বারে পরীমনিকে নিষিদ্ধের ঘোষণা আসতেও পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত ১৬ জুন গুলশান অল কমিউনিটি ক্লাবের সভাপতি কে এম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত ৮ জুন রাতে ক্লাব বন্ধ হওয়ার পরও পরীমনি একজন সঙ্গীসহ জোর করে ক্লাবে ঢুকে বারে চলে যান।
সেখানে মদ চেয়ে না পেলে চিৎকার-চেঁচামেচি করেন। ১৫ টি গ্লাস, ৯টি অ্যাশ ট্রে ও বেশ কয়েকটি প্লেট ভাঙেন তিনি। এক পর্যায়ে ৯৯৯-এ কল করে পুলিশ ডেকে মিথ্যা নালিশ করেন।
পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি বুঝে পরীমনিকেই বকাঝকা করেছে। তবে পুলিশ আমাদের অভিযোগ করতে বললেও আমরা করিনি।
আমরা মনে করি, পরীমনি একজন নায়িকা ও সম্মানিত ব্যক্তি। তিনি নিজের ওজন নিজে রক্ষা করতে না পারলে আমাদের কিছু করার নেই।
কে এম আলমগীর বলেন, এক পর্যায়ে পুলিশ নিজেই সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে।
বিভিন্ন ক্লাব ও চলচ্চিত্রাঙ্গনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পরীমনি নিয়মিত রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাব ও বারে যাতায়াত করেন। সেক্ষেত্রে নিয়মিতই তিনি মধ্যরাতেই কোনো না কোনো সঙ্গীকে নিয়ে এসব বার ও ক্লাবে গিয়ে থাকেন।
উত্তরা ক্লাব, গুলশান কমিউনিটি ক্লাব, গুলশান ক্লাব, শাহীন ক্লাবসহ ঢাকার বেশ কয়েকটি ক্লাবে তার যাতায়াত ছিল নিয়মিত। আর যেখানেই যেতেন, সেখানেই কোনো না কোনো সমস্যা তৈরি করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি বিল না দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে এর মধ্যে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই পরীমনিকে ঢাকার ক্লাব ও বারগুলোতে ঢুকতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত আলোচনায় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কৌশলগত কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘোষণা না এলেও মৌখিকভাবে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রত্যেককে জানিয়ে দেওয়া হবে।
ঢাকার একটি নামকরা ক্লাবের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের দেশ কে বলেন, পরীমনিকে ক্লাবের কোনো ফাংশনে অংশ নিতে নিষেধ করা হয়েছে। ক্লাবের কোনো সদস্য পরীমনিকে অতিথি হিসেবেও নিয়ে আসতে পারবেন না। সব সদস্যদের এ বিষয়ে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে।
চলচ্চিত্রাঙ্গনের অন্য কারও জন্য এই নিষেধাজ্ঞা নেই জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা শুধু পরীমনির জন্য। শুধু আমাদের ক্লাব নয়, ঢাকার সব ক্লাবই এই সিদ্ধান্ত অনুসরণ করবে।
বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে, পরীমনির এমন অভিযোগ মিথ্যা বলে মনে করছেন এই ক্লাব কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে, পরীমনি নিজেই ঢাকা বোট ক্লাবে গিয়েছেন এবং মাতাল অবস্থায় চিৎকার-চেঁচামেচি করেছেন।
ক্লাব পরিচালকদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেছেন। ক্লাব থেকে ফিরে আবার উল্টো ওই ক্লাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তার মামলায় একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গ্রেফতারও হয়েছেন।
সব মিলিয়ে তিনি ক্লাবে এলেই ঝামেলা হতে পারে বলেই তাকে আপাতত সব বার ও ক্লাবে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গুলশান অল কমিউনিটি ক্লাবের সভাপতি কে এম আলমগীর আজকের দেশকে বলেন, পরীমনি এই ক্লাবের সদস্য না হওয়ায় এমনিতেই ক্লাবে আসতে পারবেন না।
সেদিন একজন সদস্যের অতিথি হিসেবে আসতে চেয়েছিলেন। ওই সময় কাউকে ঢুকতে না দেওয়া হলেও তার পরিচয় ভেবেই ঢুকতে দেওয়া হয়েছে।
তবু তিনি যে কাণ্ড ঘটিয়েছেন, তাতে আর তিনি এই ক্লাবে প্রবেশ করতে পারবেন না। আমাদের সব সদস্যদেরও বলা হয়েছে, তাকে যেন কেউ অতিথি হিসেবে ক্লাবে না আনেন।
যে ঢাকা বোট ক্লাবকে নিয়ে পরীমনির অভিযোগ, সেখানকার কোনো কর্মকর্তা আজকের দেশ এর সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
তবে ক্লাবের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের দেশ কে জানান, আপাতত ওই ঘটনার পর ক্লাবে বহিরাগত কাউকেই প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। আর পরীমনির জন্যও ওই ক্লাবের দরজা বন্ধ।
বোট ক্লাবের ওই সদস্য বলেন, পরীমনি ঢাকা বোট ক্লাবে আর কোনোদিন প্রবেশ করতে পারবেন না। কোটি টাকা দিলেও এই ক্লাবের সদস্য হতে পারবেন না।