বরগুনায় প্রকাশ্যে যুবককে কুপিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ১

অন্যান্য অপরাধ আইন ও আদালত এইমাত্র বরিশাল সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : বরগুনায় প্রকাশ্যে এক যুবককে প্রকাশ্য দিবালোকে তার স্ত্রীর সামনে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। তাদের মধ্যে চন্দন নামের এক আসামিকে গত বুধবার রাতে জেলা শহর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে বরগুনা থানার ওসি আবীর মো. হোসেন জানান। তিনি বলেন, নিহত রিফাত শরীফের (২৩) বাবা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামের দুলাল শরীফ বৃহস্পতিবার সকালে বরগুনা থানায় এসে ওই মামলা দায়ের করেন। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা শহরের কলেজ রোডে স্ত্রীর সামনে রিফাতকে কুপিয়ে জখম করে একদল যুবক। ওই হামলার একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার পর দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা। সেখানে দেখা যায়, কয়েকজন যুবক চড়াও হয়েছেন রিফাতের উপর, তার মধ্যে দুজন রামদা হাতে রিফাতকে একের পর এক আঘাত করে চলেছেন। রিফাতকে বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছিলেন তার স্ত্রী। কিন্তু পারেননি। রিফাতের স্ত্রীর চিৎকারে আশপাশের কেউ এগিয়ে আসেননি। হামলাকারী যুবকরা রিফাতকে রক্তাক্ত করে সবার সামনে দিয়েই চলে যায়। পরে রিফাতকে উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার শরীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এ হামলার জন্য বরগুনা পৌরসভার ক্রোক এলাকার নয়ন বন্ড নামে এক যুবককে দায়ী করেন রিফাতের স্ত্রী। এ ছাড়া রিফাত ফারাজী, রাব্বি ও আকন নামের কয়েকজনের কথাও তিনি বলেছেন। বরগুনার ওসি আবির মোহাম্মদ হোসেন বলেন, রিফাতের স্ত্রী স্থানীয় একটি কলেজের ছাত্রী। দুই মাস আগে তাদের বিয়ে হয়। নয়ন ওই ছাত্রীকে নিজের স্ত্রী বলে দাবি করে আসছিল। অন্যদিকে রিফাতের পরিবার বলেছে, মেয়েটিকে নয়ন প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত। এই বিরোধকে কেন্দ্র করেই রিফাতের উপর হামলা চালানো হয়
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই রিফাতের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার মরদেহের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জামিল হোসেন। ময়নাতদন্ত শেষে বৃহষ্পতিবার তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। তিনি বলেন, নিহত রিফাত শরীফের গলায়, মাথায়, বুকে ও হাতে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে; যা ধারালো অস্ত্রের আঘাত বলেই প্রাথমিকভাবে বোঝা গেছে। আঘাতগুলোর মধ্যে গলায়, মাথায় ও বুকে তিনটি গুরতর জখম রয়েছে। বাকি ৩/৪ টি আঘাতের চিহ্ন ততটা গুরুতর নয়। বিশেষ করে গলার আঘাতের কারণে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ রগ কর্তন ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে এতটাই রক্তক্ষরণ হয়েছে, যা সময়ের ব্যবধানে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে বিস্তারিত বিষয়গুলো ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনেই নিশ্চিত করে উল্লেখ করা হবে। এর আগে বেলা ১১ টার দিকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আলোচিত এই হত্যাকা-ে নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বোর্ড গঠন করে। বোর্ডে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা. জামিল হোসেনকে প্রধান করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন- ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. মাইদুল হোসেন ও ডা. সোহেলী আক্তার তন্নী। এর আগে শেবাচিম হাসপাতালের লাশঘর থেকে সকাল ১০টার দিকে নিহত রিফাত শরীফের মরদেহ মর্গে আনা হয়। সেখানে বেলা ১১টা ১০ মিনিট থেকে পৌনে ১২টা পর্যন্ত চলে ময়নাতদন্তের কার্যক্রম। ময়নাতদন্ত শেষে নিহত রিফাতের মরদেহ নিয়ে বেলা ১টার দিয়ে স্বজনেরা সড়কপথে বরগুনার উদ্দেশে যাত্রা করেন।
এদিকে, রিফাত শরীফ হত্যা মামলার আসামিদের ধরতে বিভিন্নস্থানে চেক পোস্ট বসানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বরগুনার বিভিন্নস্থানে চেক পোস্ট বসানো হয়। বরগুনা পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন জানান, রিফাত হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেফতারের জন্য বরগুনার বিভিন্নস্পটে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এ ছাড়া এ হত্যা মামলার ৪ নম্বর আসামি চন্দনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এদিকে, রিফাত হত্যা মামলার আসামিদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করেছে বরগুনা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। জানা যায়, রিফাতের হত্যা মামলার প্রধান আসামি অভিযুক্ত নয়ন একসময় ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। ২০১১ সালে বরগুনা জিলা স্কুল থেকে তারা এসএসসি পাস করেন। এরপর ২০১২ সালে প্রায় ১২ লাখ টাকার মাদকদ্রব্য নিয়ে প্রশাসনের হাতে ধরা পড়ে নয়ন। বর্তমানে বরগুনা থানাসহ বিভিন্ন থানায় নয়নের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার সকালে বরগুনা পুলিশ লাইনের কাছে বাবার বাড়িতে সাংবাদিকদের সামনে ঘটনার বর্ণনা দেন রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দীকা মিন্নি। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, নয়ন প্রায়ই আমাকে হুমকি দিতো, কলেজে গেলে বিরক্ত করতো, পরে বাধ্য হয়ে আমার ফ্যামিলির সঙ্গে এগুলো বলি। এ কারণে রিফাত শরীফে সঙ্গে আমার পরিবারভাবে বিয়ে দেয়। বিয়ে হবার পরও নয়ন ডিস্টার্ব করতো, সে কথা আমার স্বামী রিফাতের সঙ্গে বললে ওদের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি হয়। মিন্নি আরও বলেন, ছুটি হবার পর কলেজ গেটের সামনে যখন বের হই তখন চার-পাঁচ জন সন্ত্রাসী এসে আমার স্বামী রিফাত শরীফকে মারধর শুরু করে। একটু পরেই নয়ন, রিশান ও রিফাত ফরাজী রামদা নিয়ে এসে রিফাত কোপাতে শুরু করে। আমার সামনেই সন্ত্রাসীরা আমার স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমি শত চেষ্টা করেও তাকে রক্ষা করতে পারিনি। হামলার সময় কোনো লোক এগিয়ে আসেনি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার, দাবি রিফাতকে যারা মেরে ফেলেছে তাদের ফাঁসি দেওয়া হোক। বরগুনা পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রিফাত হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেফতারের জন্য জেলার বিভিন্ন স্পটে চেক পোস্ট বসানো হয়েছে। তাছাড়া আলোচিত রিফাত হত্যা মামলায় ৪ নম্বর আসামি চন্দনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। বাকীদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *