কঙ্গোতে বিমান বাহিনী কন্টিনজেন্ট কর্তৃক অগ্ন্যুৎপাত পরবর্তী পুনঃস্থাপন অভিযান

আন্তর্জাতিক জাতীয়

আজকের দেশ ডেস্ক : ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো-এর উত্তর কিভু প্রদেশের গোমা অঞ্চলে অবস্থিত মাউন্ট নাইরাগঙ্গো আগ্নেয়গিরি থেকে গত ২২ মে ২০২১ তারিখে প্রলয়ংকরী অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়।


বিজ্ঞাপন

অগ্ন্যুৎপাত-এর লাভা এবং উদ্গীরিত ক্ষতিকর গ্যাস চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

এতে প্রায় অর্ধশত মানুষ নিহত এবং ষাট হাজারের অধিক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েন।

একই সময়ে নিয়মিত বিরতিতে প্রতি ঘন্টায় মাঝারী আকারের ভূমিকম্প শুরু হলে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটে ফাটল ধরতে শুরু করে।

এই অগ্ন্যুৎপাতের কারণে গোমা শহর ও আশেপাশের জলবায়ুতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিকর সালফার-ডাই-অক্সাইড ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে গোমা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও তৎসংলগ্ন আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

উপরন্তু গোমা শহরের সাথে সকল ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থাও বন্ধ হয়ে নানা প্রতিকূলতার সৃষ্টি হয়।

এমতাবস্থায়, সকল শান্তিরক্ষীকে ১৮-২০ কিঃমিঃ দূরবর্তী ‘সাকে’ এলাকায় এবং পার্শ্ববর্তী শহর বুকাভুতে স্থানান্তর করা হয়। উল্লেখ্য, গোমা শহরে মনুস্কো (MONUSCO) সহ এই অঞ্চলের বিভিন্ন শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের কেন্দ্রীয় সদর দপ্তর অবস্থিত।

অগ্ন্যুৎপাতের কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় ‘সাকে’ শহরে শান্তিরক্ষীদের একটি বৃহৎ জনবল আটকা পড়ে। এর ফলে প্রয়োজনীয় খাবার ও পানির সংকট দেখা দেয়।

এই সমস্ত জনবল কঙ্গোর বিভিন্ন এলাকায় সময়মত তাদের দায়িত্বে নিয়োজিত না হতে পারায় শান্তিরক্ষা কার্যক্রমও ব্যাপকভাবে ব্যাহত হতে থাকে।

এই অবস্থা থেকে উত্তরণের নিমিত্তে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে শান্তিরক্ষার কাজে নিয়োজিত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ৬টি এমআই সিরিজ হেলিকপ্টারের সাহায্যে স্থানান্তর কার্যক্রম শুরু করা হয়।

গত ০২ থেকে ০৩ জুন ২০২১ তারিখে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর দক্ষ বৈমানিকগণ বৈরি আবহাওয়ার মধ্যেও ‘সাকে’ এলাকায় অনিয়মিত হেলিপ্যাডে অবতরণের মাধ্যমে নিরাপদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য দেশের ১৪৪ জন শান্তিরক্ষীকে নিরাপদে ‘বুনিয়া’ শহরে পুনঃস্থানান্তর অপারেশন পরিচালনা করে।

শুধুমাত্র ২ দিনের এই অপারেশনে ৫৭ ঘন্টার অধিক উড্ডয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়, যা এত অল্প সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ বলে বিবেচিত।

এদিকে বিমানবন্দর ও তৎসংলগ্ন আকাশসীমা বন্ধ থাকায় এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় গোমা পার্শ্ববর্তী বুকাভু শহরে জাতিসংঘে কর্মরত বিপুল শান্তিরক্ষী আটকা পড়লে মনুস্কো সদর দপ্তরের সকল কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।

এমতাবস্থায়, গত ০৭ জুন ২০২১ তারিখে অতি স্বল্প পরিসরে বিমানবন্দরের কার্যক্রম শুরু হলে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সি-১৩০বি পরিবহন বিমানের মাধ্যমে মাত্র ৪ দিনে (৮-১১ জুন ২০২১) ২৩ সর্টি (sortie) উড্ডয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ অ্যাভিয়েশন ট্রান্সপোর্ট ইউনিট’ বুকাভু থেকে ৪৮২৯ কেজি কার্গোসহ ৮৯২ জন শান্তিরক্ষীকে নিরাপদে ‘গোমা’ তে পুনঃস্থানান্তর অপারেশন পরিচালনা করে মনুস্কো সদর দপ্তরের নৈমিত্তিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে বিমান বাহিনী সদর দপ্তরের বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে বিমান এবং বৈমানিকদের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই অপারেশন পরিচালনা করা হয়।

উল্লেখ্য, গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোঃ আসিফ ইকবাল, জিডি(পি)-এর নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ‘বাংলাদেশ অ্যাভিয়েশন ট্রান্সপোর্ট ইউনিট-১১’ এবং গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবু সাঈদ মেহবুব খান, জিডি(পি)-এর নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কন্টিনজেন্ট ‘ব্যানএয়ার-১৮’ ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত আছে।