পরীমনির কাছে ব্লুলেবেল যেন শরবত

অপরাধ

আজকের দেশ রিপোর্ট : পরীমনির কাছে ব্লু লেভেল যেন শরবত এমন ভাবেই খেয়েছিলেন তিনি, আর দুটা ওয়াইনের বোতল সঙ্গে থাকা একটা মেয়ের ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলছিল পরীমনি। এরপর ঝামেলা শুরু হয় তিন লিটারের একটা ব্লু লেবেলের বোতল নিয়ে, যেটার দাম দেড় লাখ টাকা। যেটা আমরা বিক্রি করি না। মূল ঝামেলা ওই বোতল নেয়া থেকেই শুরু।’


বিজ্ঞাপন

অভিনেত্রী পরীমনি ঢাকা বোট ক্লাবে সেই রাতে শরবতের মতো এক বোতল ব্লু লেবেল খেয়ে ফেলেছিলেন বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ।

রোববার সাংবাদিকদের দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেছেন, সেদিন মূল ঝামেলা শুরু হয় পরীমনি তিন লিটারের একটা ব্লু লেবেলের বোতল নিয়ে যেতে চাইলে।

মোবাইল ফোনে ঘটনা ভিডিও করার যে অভিযোগ পরীমনি করছেন, তাও অস্বীকার করেছেন ক্লাবটির সাবেক এই সভাপতি।

পরীমনিকে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টা এবং পুলিশের করা মাদক মামলায় গত বৃহস্পতিবার জামিনে মুক্তি পেয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসির। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের খোলামেলা জবাব দিয়েছেন তিনি।

সেই রাতে আসলে কী নিয়ে ঝামেলা শুরু হয়েছিল- এমন প্রশ্নে নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘ওই দিন অমি সাহেব প্রথমে তাকে একটা ব্লু লেবেল খাইয়েছিল, যেটার দাম ৩৫ হাজার টাকা।

সেটা সে শরবতের মতো খেয়ে ফেলছে, অল্প সময়ের মধ্যে। পরবর্তী সময়ে আরও একটা দেয়া হয়েছিল, সেটার তিন ভাগের দুই ভাগ সে খেয়ে ফেলছিল, যতটুকু আমার মনে পড়ে।

‘আর দুটা ওয়াইনের বোতল সঙ্গে থাকা একটা মেয়ের ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলছিল পরীমনি।

এরপর ঝামেলা শুরু হয় তিন লিটারের একটা ব্লু লেবেলের বোতল নিয়ে, যেটার দাম দেড় লাখ টাকা। যেটা আমরা বিক্রি করি না। মূল ঝামেলা ওই বোতল নেয়া থেকেই শুরু।’

ঢাকা বোট ক্লাবের সাবেক এই সভাপতির অভিযোগ, এরপরই পরীমনি ও তার সঙ্গীরা ভাঙচুর ও গালিগালাজ শুরু করে।

‘সে এবং তার সঙ্গে থাকারা প্লেট-গ্লাস ভাঙা শুরু করে, গালিগালাজ শুরু করে। আমি যেহেতু এই ক্লাবের ডিসিপ্লিন ইনচার্জ, তাই আমাকে গিয়েই বিষয়টা সামলাতে হয়েছিল’, বলেন তিনি।

একটি ভিডিওতে পরীমনিকে কেন কোলে করে নিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখা গেল। সেখানে কী এমন ঘটেছিল যে তার এমন দশা হয়েছিল- এ প্রশ্নে নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, বিষয়টা অভিনয় ছাড়া অন্য কিছু নয়।

তিনি বলেন, ‘আমি ওই পার্টে ছিলাম না। আমি চলে যাওয়ার পর তারা বের হয়েছে। তবে আমি মনে করি, এটা তার অভিনয়। কারণ অ্যাকটিং না দেখালে তো সে বিষয়টাকে এস্টাবলিশ করতে পারবে না।

‘এই জন্যই সে এটা করছে। আমি মনে করি না কোলে করে উঠানোর মতো কোনো অবস্থা ছিল। হতে পারে মাত্রাতিরিক্ত ড্রিকংস করছে, তাই সে নরমাল ছিল না। কারণ তারা যখন ক্লাবে ঢুকছে, তখনই তারা অ্যাবনরমাল ছিল।’

পরীমনির অভিযোগ, নাসির তাকে জোরপূর্বক মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘জোর করে কখনো কাউকে মদ খাওয়ানো যায় না।’

পরীমনির মদ খাওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত দাবি করে তিনি বলেন, ‘অল কমিউনিটি ক্লাবে সে মদ খাওয়া নিয়ে তাণ্ডব চালিয়েছে।

তার আগে বনানী ক্লাবে তাণ্ডব চালিয়েছে। আর ওই দিন যে সে শরবতের মতো ড্রিংকস করেছে, সেটা আমাদের সঙ্গে যারা উপস্থিত ছিল তারা সবাই দেখেছে।

‘বোট ক্লাবের ৮-১০ জন স্টাফ তারা সবাই সাক্ষী। আমার জানামতে, তার ড্রিংকসের লাইসেন্স আছে। উনি এত ড্রিংস করে এত মিথ্যা কথা বলেন কীভাবে?’

সেই রাতের মদের বিল কে পরিশোধ করেন, জানতে চাইলে নাসির বলেন, ‘অমি পরের দিন ৮৫ হাজার টাকা বিল দেয়।’

পরীমনি নিউজবাংলার কাছে দাবি করেছেন, নাসির তার নিজের মোবাইল ফোন দিয়ে সেই রাতের ঘটনা ভিডিও করেন। সেটি উদ্ধার করে পরীক্ষা করলেই আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।

এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নাসির বলেন, ‘আমার মোবাইলে ওই সময় সব ভিডিও ধারণ করার কোনো কারণ নেই। আমার ওই রকম কোনো মানসিকতা নেই।

প্রথম কথা, আমি তাকে চিনতাম না। আমার ছোট ভাই অমি যে তাকে নিয়ে আসছে, যদি জানতাম সে নায়িকা নিয়ে আসছে, তাহলে আমি তাকে ঢুকতে দিতাম না।

‘কারণ শুধু আমাদের ক্লাবই না, দেশের সব বড় ক্লাবে পরিচিত বা অতি পরিচিত সেটা ভালোভাবেই হোক আর খারাপভাবেই হোক, বাইরের কাউকে সভাপতির অনুমতি ছাড়া অ্যালাউ করা হয় না। আমরা যদি জানতাম সে অভিনেত্রী, তাহলে প্রথমেই তাকে ঢুকতে দিতাম না।’

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আজকের দেশ কে জানিয়েছেন, তৃতীয় এক ব্যক্তি পরীমনি ও তার সঙ্গীদের ওপর চড়াও হন।

এই তৃতীয় ব্যক্তি কে- জানতে চাইলে নাসির বলেন, ‘তার নাম শাহ আলম। তিনি বোট ক্লাবের একজন মেম্বার, উত্তরা ক্লাবেরও মেম্বার ছিলেন তিনি। আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আমাকে যেহেতু পেছন থেকে একজন ধরেছিল, তাই তিনি ধরছিলেন এইটুকুই।’

সেই রাতের ঘটনার পর থেকে পরিবার-সমাজ কোথাও মুখ দেখাতে পারছেন না বলে নিউজবাংলার কাছে আক্ষেপ করেন এই ব্যবসায়ী।

বলেন, ‘আমি তো এখন প্রশ্নবিদ্ধ, সত্য-মিথ্যা যা-ই হোক। পরিবারের কাছে, আমার সন্তানের কাছে। আমার ছেলের বউয়ের কাছে। ছেলের বউয়ের ফ্যামিলির কাছে। আমার সমাজের কাছে।

আমার বিজনেস কমিউনিটির কাছে- এক কথায় সবার কাছেই আমি প্রশ্নবিদ্ধ। আমি তাদের সামনে দাঁড়াতে পারছি না। তাদের সামনে দাঁড়াতে লজ্জা লাগতেছে। ভয় লাগতেছে।

‘আমিই যে সত্য, আর বিষয়টা যে মিথ্যা- এটা আমার পক্ষে জোর করে এস্টাবলিশ করা সম্ভব না। আমার খুব খারাপ লাগতেছে। কারণ আমার দীর্ঘ ৩৮-৩৯ বছরের কর্মজীবনে এ ধরনের কোনো কালিমা ছিল না। আমি জীবনে কোনো দিন হাজত খাটি নাই।’

নাসির বলেন, ‘এটা আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, আমার হোল লাইফে এই রকম কোনো কিছু নাই। আমি তিনবার উত্তরা ক্লাবে নির্বাচিত ছিলাম। আমার মধ্যে যদি এই রকম কলঙ্ক থাকত, এই ধরনের কালিমা থাকত, তাহলে তো আমি নির্বাচিত হতে পারতাম না তিনবার।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসির আমি সব দিক দিয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। সামাজিকভাবে, ব্যবসায়িকভাবে, পারিবারিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। ব্যবসায়িকভাবে যে গুডউইল থাকা দরকার, সেখানে আমি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।’

তার আশা, তদন্তকারী সংস্থা সঠিকভাবে তদন্ত করবে এবং তিনি ন্যায়বিচার পাবেন।