বিশেষ প্রতিবেদক : মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপের প্রেক্ষিতে সরকারঘোষিত ১৪দিনের কঠোর বিধিনিষেধের ১২তম দিনে সোমবার রাজধানীর সড়কের চিত্র অনেকটাই স্বাভাবিক সময়ের মতো। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও প্রাইভেটকার, ট্রাক ও রিকশার চাপ অনেক বেড়ে যাওয়ায় অনেক সড়কেই দেখা গেছে দীর্ঘ যানজট। রাজধানীর কলেজগেট, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, বাংলামোটর, মগবাজার ও বারিধারা সড়কে দীর্ঘ যানজট লেগে যায়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, যানজটে আটকাপড়া গাড়ির মধ্যে পণ্যবাহী গাড়ির পাশাপাশি রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেলের আধিক্য। ফলে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। ফার্মগেট থেকে শুরু করে কারওয়ানবাজার সিগন্যাল পর্যন্ত গাড়ির লম্বা সারি। তার থেকে কিছুটা এগিয়ে বাংলামোটর সিগন্যালেও দাঁড়িয়ে আছে অর্ধশতাধিক গাড়ি।
অন্যদিকে গণপরিবহন না থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে অফিসগামীদের। গন্তব্যস্থলে যেতে তাদের একমাত্র ভরসা ছিল ফুটপাত ধরে পায়ে হেঁটে যাওয়া অথবা রিকশা। কিন্তু সুযোগ বুঝে রিকশাচালকরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন বলে অনেকেই পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন অনেক যাত্রী।
এদিকে চলমান কঠোর লকডাউনে জরুরি পরিষেবা ও রিকশা ব্যতীত সকল ধরনের গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। বিধিনিষেধ মানাতে সড়কে বসানো হয়েছিল পুলিশ চেকপোস্ট। লকডাউনের প্রথমদিকে পুলিশের তৎপরতা দেখা গেলেও এখন তা অনেকটাই মিইয়ে গেছে। সড়কে খুব কম স্থানেই পুলিশ চেকপোস্ট দেখা গেছে।
সরকারি জরুরি পরিষেবায় নিয়োজিত গাড়িচালক নিজাম বলেন, লকডাউনের মধ্যে এমন যানজট আগে কখনও দেখি নাই। যে দেশে মানুষ লকডাউন দেখতে বাইরে বের হয়, সে দেশে সবই সম্ভব। সরকারের কিছু করার নাই। পাবলিক কারো কথা শুনতে রাজি না।
পথচারী মামুন বলেন, সবারই পরিবার আছে। সামনে আবার ঈদ। আর কতদিন ঘরে বসে থাকবে সবাই? এভাবে সংসার চলবে?
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে স্বল্প বেতনে চাকরি করেন হৃদয়। ফুটপাত ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন অফিসের উদ্দেশ্যে। হেঁটে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাই রিকশাভাড়া অনেক। যে বেতন পাই, তাতে রিকশায় যাতায়াত করলে বেতনের টাকা তো সব দিতেই হবে, আরও বাড়ি থেকে আনতে হবে। লকডাউনের কারণে রিকশাচালকরা তিন থেকে চারগুণ ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সোমবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত আংশিক লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। এই সময়ে সারাদেশে রিকশা ছাড়া যাত্রী পরিবহনে আর কোনো বাহন চলবে না বলে প্রজ্ঞাপনে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
গত ১জুলাই থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত চলমান বিধিনিষেধ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। সুপারিশ করেছিল কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। ফলে গত সোমবার উপসচিব মো. রেজাউল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনাভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯) সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে সব বিধিনিষেধ ও কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় ৭ জুলাই মধ্যরাত থেকে ১৪ জুলাই ২০২১ রাত ১২টা পর্যন্ত সময়সীমা বাড়ানো হলো। তবে নতুন প্রজ্ঞাপনে নতুন কোনো নির্দেশনার কথা জানানো হয়নি। তাই চলমান বিধিনিষেধে যেসব নির্দেশনা রয়েছে সেগুলোই কার্যকর থাকবে বলে জানানো হয়েছিল।
