কিশোরগঞ্জের নাসরিনকে ঠাঁই দিলো ‘উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন’

অপরাধ এইমাত্র জাতীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থানার অসহায় নাসরিনকে দিকভ্রান্ত অবস্থা থেকে উদ্ধার করে হৃদয়ের পরশে ঠাঁই দিলো ‘উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইন্সপিরেশন’ ডিভিশন’। ভালো থাকুক সকল নাসরিন। আমাদের সবার আদর-যত্নে, ভালোবাসায় বেড়ে উঠুক সম্ভাবনাময় কোমলমতি সব শিশু এ হোক আমাদের আজকের প্রত্যয়।


বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৯ জুলাই ) সকালে ‘উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন’ তাদের ফেসবুক পেজে এ বিষয়ে একটি পোস্ট প্রকাশ করেন।

উইমেন সাপোর্ট ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন সূত্রে জানা যায়, ভৈরব থানার কিশোরগঞ্জ জেলার কোমলমতি কিশোরী নাসরিন (১৬)। বাবার নাম স্বপন মিয়া। মায়ের নাম অজানাই থাকুক। যখন বাবার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমপাড়ানি গান শোনার কথা তখনই দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নেন তার বাবা। নাসরিন ও তার বড় বোনকে নিয়ে অকুল পাথারে পড়েন তার মা।

একটি আশ্রয়ের খোঁজে তাদের ২ বোনসহ পুনরায় বিয়ে করে নাসরিনের মা। নতুন সংসারে নাসরিনের মা আরো ১টি কন্যা সন্তান ও ২টি পুত্র সন্তানের জননী হলে দিনে দিনে তার আগের ঘরের ২ কন‍্যার জীবনে অত্যাচারের তীব্রতা ভয়াবহ হয়ে ওঠলে নাসরিনের মা বাধ্য হয় তার ২ কন্যা সন্তানকে গৃহপরিচারিকার কাজে দিয়েছেন।

এরই ধারাবাহিকতায় মাত্র ১২ বছর বয়সে নাসরিনের মা তাকে ঢাকার রামপুরায় একটি বাসায় কাজের জন্য পাঠায়। সেখানে ২ বছর কাজ করার পর তার নানা মারা গেলে নাসরিন তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরবে চলে যায়।

গ্রামের বাড়িতে অল্প কিছুদিন থাকার পর নাসরিনের মা তাকে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে খেলনার কারখানায় কাজ দেন। কিন্তু সেখানে যে বেতন দেয়া হতো তা দিয়ে নাসরিন ঘর ভাড়া দিয়ে খেয়ে-পড়ে জীবন ধারণ করতে পারছিল না।

জানা যায়, পরবর্তীতে নাসরিন আরো একটি বাসায় কাজ নেয়। কিন্তু, সেখানে প্রতি বেলায় কপালে জুটতো মারধর আর অমানুষিক নির্যাতন। একদিন সে গোপনে বাসা থেকে বের হয়ে পুণরায় কিশোরগঞ্জের ভৈরবে নিজের মায়ের কাছে চলে যায়।

অসহায়, আশ্রয়হীন মেয়েটির ঠাঁই মিলল না এখানেও । এরপর চলতি মাসের ১৩ তারিখে সে তার গ্রামের বাড়ি থেকে মাত্র ৫০০ টাকা হাতে আবার ঢাকায় আসে। নাসরিন গুলিস্তানে পৌঁছায় বিকাল ৫ টায়।

অজানা গন্তব্য তাকে অসহায় করে তোলে। কোথায় যাবে এ চিন্তায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে নাসরিন। সে কি খাবে, কোথায় যাবে, কিভাবে বেঁচে থাকবে কোনকিছুই তার জানা নেই। তার কাছে না আছে কোন টাকা, না আছে যাওয়ার মত কোন ঠিকানা।

একপর্যায়ে দিশেহারা নাসরিন গুলিস্তানে দাঁড়িয়ে অঝোর ধারায় কাঁদতে থাকে। রাত ৯ টার দিকে পল্টন থানার টহল ডিউটিরত পুলিশ নাসরিনকে থানায় নিয়ে আসে। থানা কর্তৃপক্ষ নিরাপদ হেফাজতে রাখার জন্য নাসরিন কে উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার এ রেখে যায়।

আরো জানা যায়, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার মেয়েটিকে তার মায়ের অমলিন মমতার কাছে ফিরিয়ে দিতে মরিয়া হয়ে উঠে। অভাব আর নির্যাতন মায়ের ভালোবাসাকে ম্লান করে দেয়। মায়ের মমতায় ঠাঁই মেলেনা। মেয়েটির মা তার নতুন অভাবের সংসারে নাসরিনকে গ্রহণ করতে অপারগতা জানায়।

হাল ছাড়েনা এ ডিভিশনের উপ-পুলিশ কমিশনার ( ডিসি ) হামিদা পারভিন। তিনি মেয়েটির মা’কে অনুনয় করেন। মায়ের মমতার ছায়ায় নাসরিনকে আশ্রয় দিতে। হেরে যায় সব প্রচেষ্টা!

অবশেষে মেয়েটির স্থায়ী পূণর্বাসনের জন্য ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার যোগাযোগ শুরু করেন সহযোগী এনজিওদের সাথে। মনের কোনে অনেক বেদনা লুকিয়ে রেখে অবশেষে আজ নাসরিনকে আইন ও শালিস কেন্দ্রের স্হায়ী সেফহোমে দিতে হলো উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনকে।

নাসরিনের মত এমন হতভাগ্য অগণিত ভুক্তভোগী ভিকটিমের নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছে ‘উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন’।

উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন আশা করে, আমাদের সমাজে এরকম হাজারো নাসরিন রয়েছে। আমরা যদি তাদের প্রতি একটু সহানুভুতির হাত প্রসারিত করি। তাহলে, এ অসহায় নাসরিনরা সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে পারবে। তখন আমাদের পরিবার, সমাজ, দেশ ও পৃথিবী হবে একটি সুন্দরময়ী।