করোনায় তরুণদের মৃতের সংখ্যা বাড়ছে
ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে পুরো বিশ্ব

বিশেষ প্রতিবেদক : দেশে বয়স্কদের পাশাপাশি তরুণরাও অধিকহারে করোনায় সংক্রমিত হচ্ছেন। তরুণদের মৃতের সংখ্যাও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিউটেশনের ভেতর দিয়ে করোনা বিবর্তিত রূপ তরুণদের আক্রান্ত করার এবং তীব্র মাত্রার সংক্রমণ সৃষ্টি করার সক্ষমতা অর্জন করেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, রোববার ১০ বছরের কম বয়সী একজন তরুণ মারা গেছে। এদিন ১১ থেকে ২০ বয়সী ৩ জন এবং ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ৭ জন তরুণ মারা যান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতে, এখন পর্যন্ত ৫৫ জন ১০ বছরের কম বয়সী শিশু করোনায় মারা গেছে। ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী তরুণ মারা গেছে ১১৪ জন। ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী মৃত্যু গেছেন ৩৭৬ জন। এছাড়া ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী মারা গেছেন ১০১৬ জন। ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী মারা গেছেন ২ হাজার ১৩১ জন। ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী মারা গেছেন ২ হাজার ১৩১ জন। ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী মারা গেছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন।
এখন পর্যন্ত করোনায় সবচেয়ে বেশি মারা গেছে ৬১ থেকে ৭০ বছর বয়সী মানুষ। এই বয়সী মানুষ মারা গেছেন ৫ হাজার ৫৯৫ জন, যা মোট মৃতের ৩১.৩৭ শতাংশ। এছাড়া ৭১ থেকে ৮০ বছর বয়সী ৩ হাজার ১০৯ জন, ৮১ থেকে ৯০ বছর বয়সী ৯৭২ জন, ৯১ থেকে ১০০ বছর বয়সী ১৯৮ এবং ১০০ বেশি বয়সী মারা গেছেন ২৩ জন।
দেশে এখন পর্যন্ত মোট মারা গেছেন ১৯ হাজার ৮৯৪ জন। যার মধ্যে পুরুষ ১২ হাজার ৪১৪ জন এবং নারী ৫ হাজার ৪৮০ জন। পুরুষ ও নারীর শতকরা হার যথাক্রমে ৬৯.৩৮ ও ৩০.৬২।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে যুক্তরাজ্য, আফ্রিকানসহ বিভিন্ন নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রামণ ঘটেছে। বিশেষ করে এখন ভারতের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপট চলছে। নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলো খুবই শক্তিশালী। করোনা বিবর্তিত এসব ধরণ তরুণদের আক্রান্ত করার পাশাপাশি তীব্র মাত্রার সংক্রমণ সৃষ্টি করার সক্ষমতা রয়েছে। এ কারণেই তরুণরা আক্রান্ত হচ্ছেন। এছাড়া এসব ধরনের আক্রমণ ক্ষমতা, ফুসফুস এবং অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতির ব্যাপ্তি, জটিলতা আগের ধরনগুলোর চেয়ে বেশি। তাই রোগীরা দ্রুত গুরুত্বর হচ্ছেন এবং মৃত্যুবরণ করছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজী বিভাগের অধ্যাপক ডা. সুলতানা শাহানা বানু বলেন, করোনা প্রতিনিয়তই নিজের রূপ পরিবর্তন করছে। আরো শক্তিশালী হচ্ছে। নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলো অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। শিশুমৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। তাই শিশুদের কিছু হবে না বা ঝুঁকি নেই তা বলা যাবে না।
এদিকে বৈশ্বিক মহামারি করোনার ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে পুরো বিশ্ব। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের কাছে বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোও ধরাশায়ী। প্রতিদিনই বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যু। পৃথিবীজুড়ে টিকা কর্যক্রম চললেও থামছে না সংক্রমণের গতি। ভাইরাসটির নতুন ধরন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট মানুষের মনে আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় মৃত্যু ছাড়িয়েছে ৪১ লাখ ৫ হাজার। আর আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১৯ কোটি ১২ লাখ।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ সময় সোমবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে করোনায় মৃতের সংখ্যা কমেছে। এ সময় মারা গেছেন গেছেন আরও ৬ হাজার ৮৭৮ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লাখ ৪৫ হাজার ২৬৭ জন।
আর গত রোববার মারা গিয়েছিলেন ৭ হাজার ১৮২ জন এবং আক্রান্ত হয়েছিলেন ৪ লাখ ৮৩ হাজার ৩১৬ জন।
এ নিয়ে বিশ্বে এখন পর্যন্ত মোট করোনায় মৃত্যু হলো ৪১ লাখ ৫ হাজার ৭৪৩ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ কোটি ১২ লাখ ১৮ হাজার ১১১ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৭ কোটি ৪১ লাখ ৬৭ হাজার ১২৭ জন।
করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৩ কোটি ৪৯ লাখ ৬৩ হাজার ৯০৭ জন। মৃত্যু হয়েছে ৬ লাখ ২৪ হাজার ৭৪৬ জনের।
আক্রান্তে দ্বিতীয় ও মৃত্যুতে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে এখন পর্যন্ত মোট সংক্রমিত হয়েছেন ৩ কোটি ১১ লাখ ৪৩ হাজার ৫৯৫ জন এবং এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ৪ লাখ ১৪ হাজার ১৪১ জনের।
আক্রান্তে তৃতীয় এবং মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত করোনায় এক কোটি ৯৩ লাখ ৭৬ হাজার ৫৭৪ জন সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৪২ হাজার ২৬২ জনের।
আক্রান্তের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে রাশিয়া। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৯ লাখ ৫৮ হাজার ১৩৩ জন। মারা গেছেন এক লাখ ৪৮ হাজার ৪১৯ জন।
এ তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৫৮ লাখ ৬৭ হাজার ৭৩০ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন এক লাখ ১১ হাজার ৪৭২ জন।
এদিকে আক্রান্তের তালিকায় তুরস্ক ষষ্ঠ, যুক্তরাজ্য সপ্তম, আর্জেন্টিনা অষ্টম, কলম্বিয়া নবম ও ইতালি দশম স্থানে রয়েছে।
