হুঁশ ফিরছে না মানুষের

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন জীবনী স্বাস্থ্য

*রেকর্ড মৃত্যুও থামাতে পারছে না তাদের
*সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যক্তিগত গাড়ি
* ‘হতভম্ব’ জাতীয় কমিটি এবার ‘হতাশ’

 

বিশেষ প্রতিবেদক : করোনায় মৃত্যু যেন লাফিয়ে বাড়ছে। লাগামহীনভাবে ছুটছে করোনা শনাক্তের সংখ্যাও। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না সংক্রমণ। মঙ্গলবার মৃতের সংখ্যা ২৫৮ জনে ঠেকেছে। যা একদিনে রেকর্ড মৃত্যু। তবুও যেন হুঁশ ফিরছে না অনেকের।
অন্যদিকে ঈদুল আজহার আগে ৯দিন লকডাউন শিথিলের সংবাদে ‘হতভম্ব’ হয়েছিল কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটি। গভীর উদ্বেগ জানিয়ে কমিটি সেসময় কঠোর লকডাউন টানা আরও দুই সপ্তাহ রাখার সুপারিশ করেছিল। কিন্তু সরকার জাতীয় কমিটির গভীর উদ্বেগকে আমলে না নিয়ে গত ১৩ জুলাই এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। ঈদের পরে সংক্রমণ আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে, এতে এবার ‘হতাশা’ প্রকাশ করেছেন কারিগরি কমিটির সদস্যরা। এর প্রতিক্রিয়ায় কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরার্মশক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেছেন, ‘আমি হতাশ, অবশ্যই হতাশ। খুবই দুঃখজনক হলো বিষয়টা।
দেশজুড়ে কঠোর বিধিনিষেধ চললেও হরহামেশাই বের হচ্ছেন বহু লোক। চারদিনের তুলনায় মঙ্গলবার রাজধানীর সড়কেও যানবাহনের বাড়তি চাপ লক্ষ্য করা গেছে।
দেশজুড়ে মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়া ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের পরও ফেরিতে গাদাগাদি করে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন বেপরোয়া মানুষ। কঠোর বিধিনিষেধের পরোয়া না করে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট দিয়ে ঢাকায় ফিরছেন তারা। ফেরিতে থাকছে না স্বাস্থ্যবিধির বালাই।
কঠোর বিধিনিষেধের পঞ্চম দিনেও মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে ফেরি ভিড়তেই হুড়োহুড়ি করে নামার চেষ্টা সবার। মানুষের গাদাগাদিতে উধাও স্বাস্থ্যবিধি।
এরপরই অতিরিক্ত ভাড়ায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, পিকআপসহ নানা যানবাহনে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে রওনা হন তারা। অনেকে আবার কাঙ্ক্ষিত যান এবং ভাড়া না মেলায় পায়ে হেঁটেই রওনা দেন।
ফেরি পার হওয়া প্রায় সবারই দাবি ‘জরুরি’ প্রয়োজন। তবে অনেকেই যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারেননি। এতে প্রকৃতপক্ষেই চিকিৎসা বা জরুরি কাজে বের হওয়া ব্যাক্তিরা পড়ছেন ভোগান্তিতে। তারা বলছেন, সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ রাখার নির্দেশনা থাকলেও অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খোলা রাখায় এই দুর্ভোগ।
জরুরি সেবা লকডাউনে বিধিনিষেধের বাইরে থাকায় অনেকেই ঈদের পর বাড়ি থেকে ঢাকায় ফিরছেন অ্যাম্বু্লেেন্স, সরকারি গাড়িতে আর পায়ে হেটে। অন্যদিকে গাবতলী, আবদুল্লাহপুর, সাইনবোর্ডের মতো রাজধানীতে প্রবেশের প্রতিটি পথেই দেখা যায় মানুষের পদচারণা আর গাড়ির ভিড়। যেভাবে পারছেন ছুটছেন গন্তব্যে।
এদিকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যানবাহন নিয়ে রাস্তায় বের হওয়া এবং মাস্ক পরিধানসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানুষ রাস্তায় চলাচল করছে কিনা তা কঠোরভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। সন্তোষজনক জবাব না পেলে যানবাহন ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদস্যরা বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে তৎপর রয়েছেন।
তবে লকডাউন পুরোপুরি নিশ্চতে ফেরি কতৃপক্ষকে কঠোর হতে বললেন লৌহজং উপজেলার সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার হামিদ। তিনি বলেন, ফেরি কতৃপক্ষ কঠোর হলে আমাদের জন্য লকডাউন পুরোপুরি নিশ্চত করা সহজ হয়। না হলে এতো মানুষ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে অপ্রয়োজনে যাতায়াতকারীদের জরিমানা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
একই চিত্র পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি রুটেও। কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও রয়েছে ঢাকায় ফেরা মানুষের ভিড়।
‘হতভম্ব’ জাতীয় কমিটি এবার ‘হতাশ’ : ঈদুল আজহার আগে ৯ দিন লকডাউন শিথিলের সংবাদে ‘হতভম্ব’ হয়েছিল কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটি। গভীর উদ্বেগ জানিয়ে কমিটি সেসময় কঠোর লকডাউন টানা আরও দুই সপ্তাহ রাখার সুপারিশ করেছিল। কিন্তু সরকার জাতীয় কমিটির গভীর উদ্বেগকে আমলে না নিয়ে গত ১৩ জুলাই এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। ঈদের পরে সংক্রমণ আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে, এতে এবার ‘হতাশা’ প্রকাশ করেছেন কারিগরি কমিটির সদস্যরা।
বিধিনিষেধ শিথিল করার ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন, জনসাধারণের যাতায়াত, ঈদ পূর্ববর্তী ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে আগামী ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত আগের আরোপিত সকল বিধিনিষেধ শিথিল করা হলো।
কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান সেসময় বলেন, ‘এ প্রজ্ঞাপনে আমরা বিস্মিত, হতভম্ভ। সব খুলে দেওয়া হলো ৯ দিনের জন্য। সরকার বলছে, শিথিল করা হলো। অথচ সব আগের অবস্থায় চলে যাবে।’
কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্যরা বলেন, বিধিনিষেধ শিথিলতার এ নির্দেশনায় তাদের ‘সায়’ ছিল না। তারা বলেন, সরকারের বিধিনিষেধ শিথিলের এ ঘোষণা তাদের পরামর্শের উল্টো। এ সময় এ ধরনের শিথিলতা বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ারই শামিল। এমনকি স্বাস্থ্য অধিদফতর যেখানে বারবার ভিড় এড়িয়ে চলার কথা বলছে, সেখানে সংক্রমণের ‘পিক টাইম’-এ এ ধরনের ঘোষণা আমাদের আরও খারাপ অবস্থায় নিয়ে যাবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
আর লকডাউন শিথিলের সুযোগ নিয়ে ঢাকা ছেড়ে গ্রামমুখী হয়েছেন মানুষ। বাস, লঞ্চ কিংবা ফেরিতে গাদাগাদি করে গ্রামে গিয়েছেন ঈদ করতে। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির এক হিসাবে, ঈদের ছুটিতে ২২ জুলাই পর্যন্ত ঢাকা ছেড়েছেন ১ কোটি ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৬৮৩টি মোবাইল সিমের ব্যবহারকারী। এত মানুষের ফেরার জন্য সময় রাখা হয়েছিল একদিন। আর এতে ফেরার পথেও হয় নানান বিশৃঙ্খলা। এখনও বিধিনিষেধের মধ্যেই নানানভাবে ঢাকায় ঢুকছে মানুষ।
এর ফলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশংকাকে সত্যি প্রমাণ করে গত ২৪ ঘণ্টায় (২৬ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত) দেশে গত মহামারিকালের সর্বোচ্চ মৃত্যু ও রেকর্ড সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছেন। একই দিনে দেশে করোনা শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। এই সময়ে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে ২৪৭ জনের মৃত্যু ও এ যাবৎকালে একদিনের সর্বোচ্চ সংখ্যক ১৫ হাজার ১৯২ জনের শনাক্ত হওয়ার খবর জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
এর প্রতিক্রিয়ায় কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরার্মশক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেছেন, ‘আমি হতাশ, অবশ্যই হতাশ। খুবই দুঃখজনক হলো বিষয়টা।
সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতিকে ‘মাল্টি-ফেকটোরিয়াল’ বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ডেফিনিটলি শিথিলতা এখানে কাজ করেছে, সংক্রমণ বাড়তির দিকে।
‘সেই সঙ্গে শিথিলতার মাধ্যমে যখন মানুষ ঘরের বাইরে বেরিয়েছে, তাদের মধ্যে একটি ‘সিগনিফিকেন্ট নাম্বার’ কোনও রকম স্বাস্থ্যবিধি মানে নাই’, বলেন তিনি।
‘যদি এমন হতো, আমরা শিথিল করলাম, কিন্তু শতভাগ মানুষের মুখে মাস্ক পরছে, তাহলে কি আজ এরকম হতো?…হতো না। এটা একটা বিষয়, আর এর সঙ্গে রয়েছে মাঝে ভ্যাকসিন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়া। মাত্র তিন থেকে চার শতাংশের বেশি আমরা এখনও যেতে পারিনি। এটিও একটা কারণ।
সঙ্গে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণশীলতাকেও ঊর্ধ্বমুখিতার কারণ হিসেবে উল্লেখ করে অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, এখন যত সংক্রমণ হচ্ছে তার মধ্যে ৮০ শতাংশই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট, এই ভ্যারিয়েন্ট আগের যে কোনও ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে প্রায় দেড়গুণের বেশি ছড়াচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সব মিলিয়েই এ অবস্থা।
তিনি বলেন, এত মৃত্যু, এত সংক্রমণ দেখে হতাশ লাগছে, কিন্তু হতাশ হলে হবে না। এর চেয়েও হতাশাজনক অবস্থা অন্যান্য দেশ দেখেছে। তাই এখন সঠিক কাজটি সবাই মিলে করা দরকার। তার মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সবাইকে বাধ্য করা। দ্বিতীয়ত, যে লকডাউন চলছে, তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা এবং তৃতীয়ত, রোগী শনাক্ত করণ টেস্টের সংখ্যা আরও বাড়ানো। পারলে প্রতিদিন লাখের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া।
শনাক্ত রোগীদের আইসোলেশনে নেওয়াটাও জরুরি উল্লেখ করে অধ্যাপক সহিদুল্লা বলেন, সেই সঙ্গে যারা আক্রান্তের সংর্স্পশে এসেছেন তাদেরও কোয়ারেন্টিন করা। আর ফাইনালি আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে দ্রুত, বলেন তিনি।
কমিটির আরেক সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, এত মৃত্যু দেখে আজ সত্যিই হতাশ লাগছে। তবে এত মৃত্যু হচ্ছে হাসপাতাল অব্যবস্থাপনা ঘাটতির জন্য। হাসপাতালে অক্সিজেন নাই, যার অক্সিজেন লাগবে তাকে সেটা দেওয়া যাচ্ছে না। যার আইসিইউ লাগবে, তাকে আইসিইউ দেওয়া যাচ্ছে না। মানুষ মারা যাচ্ছে। জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী, অথচ এখনও পর্যন্ত সেটা কার্যকর হয়নি।
করোনার সংক্রমণ কি কেবল ঢাকাতেই প্রশ্ন করে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ঢাকাতেও সব (আইসিইউ) ফুরিয়ে আসছে। আবার বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ ঢাকায় আসবেন, কিন্তু কতজন আসতে পারছেন, সেটাও বিবেচনায় নিতে হবে।
সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যক্তিগত গাড়ি : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে রাজধানীসহ সারা দেশে চলছে দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ। চলমান বিধিনিষেধের পঞ্চম দিনে রাজধানীতে গণপরিবহন ছাড়া প্রায় সব ধরনের গাড়ি সড়কে চলতে দেখা গেছে। গত কয়েকদিন পুলিশের চেকপোস্টে কড়াকড়ি দেখা গেলেও আজ দেখা গেছে তার উল্টো চিত্র। রাজধানীর কোনো কোনো সড়কে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপও দেখা গেছে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে সরেজমিনে গাবতলী, শ্যামলী, আসাদগেট, মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ধানমন্ডি, মালিবাগ, মগবাজার, কাকরাইল, পল্টন ও মতিঝিল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মোড়ে মোড়ে পুলিশের চেকপোস্ট নেই। কোনো কোনো মোড়ে চেকপোস্ট থাকলেও তাতে পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়নি।
এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায়, মোটরসাইকেলে দুজন এবং রিকশায় ২-৩ জনও চলাচল করছে। মোটরসাইকেলে দুজন চলাচল করলেও পুলিশ তাদের দেখে অনেকটা নিশ্চুপ অবস্থায় রয়েছে। এমনকি মোটরসাইকেলে ডেকে ডেকে যাত্রী তুলতেও দেখা যায় অনেক রাইডারকে।
রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় প্রায় ৩০ মিনিটের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, গত কয়েকদিন যেখানে পুলিশের চেকপোস্ট ছিল সেখানে মঙ্গলবার পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়নি।
এছাড়া রাজধানীর কিছু কিছু সড়কে যানজট না থাকলেও কোথাও কোথাও সিগন্যাল লক্ষ করা গেছে। পুরো সড়কজুড়েই ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা আর মোটরসাইকেলের আধিপত্য চলছে। সড়কে মানুষের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কারওয়ান বাজারে কর্তব্যরত একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, ‘রাস্তায় চলাচলে বিধিনিষেধ থাকলেও অনেকে বিনা প্রয়োজনেও রাস্তায় বের হচ্ছেন। আমরা এমন ক্ষেত্রে জরিমানা করছি। আবার কেউ কেউ বিভিন্ন অজুহাত দেখাচ্ছেন। তবে জরুরি সেবায় সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা অবাধে চলাচল করতে পারছেন।’
এ বিষয়ে রমনা ট্রাফিক জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. রেফাতুল ইলসলাম বলেন, ‘রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করেও দিনের পর দিন সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ নিশ্চিতে মাঠে থেকে কাজ করছে পুলিশ সদস্যরা। সকাল থেকে দুপুর, দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা কাজ করছে। সকাল ৭টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এবং দুপুর ২টা থেকে সড়কে যতক্ষণ গাড়ির চাপ থাকে ততক্ষণ দুটি শিফটে কাজ করছে। বৃষ্টির জন্য ট্রাফিক সদস্যদের রেইন কোট ও ছাতা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মানুষ নানা অজুহাত দিয়ে বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করছে। কঠোর লকডাউনের মধ্যেও সবারই জরুরি কাজের অজুহাত। সকালে অফিস টাইমে গাড়ির চাপ কিছুটা বেশি থাকে। এরপর ১১টার পর সেই চাপ ধীরে ধীরে কমতে থাকে। আবার বিকেল ৪টার পর কিছুটা চাপ থাকে। তবে সব সময়ই পুলিশ সদস্যরা চেষ্টা করেন সড়কে থাকার জন্য।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কামাল উদ্দীন বলেন, বাসা থেকে রাস্তায় বের হলেই চারদিকে মানুষ আর মানুষ। এতো মানুষের ভিড় তাতে বিধিনিষেধ মনেই হচ্ছে না। রিকশা ভাড়া দিতে দিতে গত কয়েকদিনে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। বাসটাই শুধু চলছে না। বাস চললে অন্ততপক্ষে যাতায়াতে কিছু টাকা খরচ কম হতো।
বাংলামোটর সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকা শফিকুল ইসলাম নামে একজন বলেন, এটার নাম বিধিনিষেধ! সড়কে দেখেন কত গাড়ি চলছে। পুলিশের কোনো বাধা নেই। নি¤œ আয়ের মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা না করে বিধিনিষেধ ঘোষণা করা হয়েছে। কষ্টে পড়ে মানুষগুলো সড়কে নামছে। তাই পুলিশ কিছুই করতে পারছে না। এভাবে টানা লকডাউন থাকলে মানুষ না খেয়ে মরে যাবে।
সকালে বৃষ্টির মধ্যে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন নাজমুন নাহার। তিনি বলেন, অফিসের কাজে উত্তরা যেতে হবে। সেখানে একটি জরুরি মিটিং। কিন্তু একদিকে বৃষ্টি, অন্যদিকে বিধিনিষেধ। রাস্তায় গণপরিবহন নেই। কীভাবে যাবো বুঝতে পারছি না।
এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ নিশ্চিতে চতুর্থ দিনে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে বাইরে বের হয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) হাতে গ্রেফতার হন ৫৬৬ জন। আর ১৬৪ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হয় এক লাখ ২৬ হাজার ২০০ টাকা।
এছাড়া ট্রাফিক বিভাগ কর্তৃক ৪৪৩টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলায় জরিমানা করা হয় ১০ লাখ ২২ হাজার টাকা। চার দিনে রাজধানীতে মোট গ্রেফতার হয়েছেন এক হাজার ৯৩৯ জন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় গত শুক্রবার (২৩ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার।


বিজ্ঞাপন