গাড়িতে সরগরম যাত্রাবাড়ী

এইমাত্র জাতীয়

শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ঘাটে জনস্রোত
বেড়েছে ব্যক্তিগত যান ও রিকশা


বিজ্ঞাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে রাজধানীসহ সারাদেশে চলছে দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ। চলমান বিধিনিষেধের ষষ্ঠ দিনে রাজধানীতে ব্যাপক হারে বেড়েছে ব্যক্তিগত যান চলাচল। অনেক সড়কেই দেখা গেছে গাড়ির দীর্ঘ লাইন। আছে অনেক রিকশাও। তবে নেই বাস। সেইসঙ্গে বেড়েছে মানুষের চলাচলও। অনেকটাই ঢিলেঢালাভাবে চলছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ।
বুধবার সকালে রাজধানীর ফার্মগেট, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, সাতরাস্তা ও কারওয়ান বাজার মতিঝিল, মুগদা, মানিকনগর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গত কয়েকদিনের তুলনায় বুধবার সড়কে মানুষ ও যানবাহনের সংখ্যা বেশি।
আগের কঠোর লকডাউনে মূল সড়কে মানুষের আনাগোনা তেমনটা দেখা না গেলেও এবার দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। মূল সড়কের পাশাপাশি অলিগলিতেও মানুষের অবাধ চলাফেরা করতে দেখা গেছে। তাদের অনেকের মুখে নেই মাস্ক। কারও কারও অভিযোগ, জরুরি প্রয়োজন দেখানোর পরও পুলিশ ফিরিয়ে দিয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, সড়কে বের হওয়া প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষেরই জরুরি কাজ নেই।
এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায়, মোটরসাইকেলে দুজন এবং রিকশায় দু-তিনজনও চলাচল করছেন। মোটরসাইকেলে দুজন চলাচল করলেও পুলিশ তাদের দেখে অনেকটা নিশ্চুপ অবস্থায় রয়েছে। এমনকি মোটরসাইকেলে ডেকে ডেকে যাত্রী তুলতেও দেখা যায় অনেক রাইডারকে।
জনসাধারণের অযাচিত ঘোরাফেরা বন্ধ করতে নগরীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে তৎপর ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। যদিও অনেকে দাবি করেছেন, জরুরি কাজে বেরিয়েও তাদের জরিমানার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কেউ কেউ আবার বের হয়েছেন কাজ ছাড়াও।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কারওয়ান বাজারে কর্তব্যরত একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, ‘রাস্তায় চলাচলে বিধিনিষেধ থাকলেও অনেকে বিনা প্রয়োজনেও রাস্তায় বের হচ্ছেন। আমরা এমন ক্ষেত্রে জরিমানা করছি। আবার কেউ কেউ বিভিন্ন অজুহাত দেখাচ্ছেন। জরুরি সেবায় সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা অবাধে চলাচল করতে পারছেন।’
চলমান বিধিনিষেধের ষষ্ঠ দিনে বুধবার যাত্রাবাড়ীর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ছিল গাড়িতে সরগরম। সকাল থেকে মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে বিপুল সংখ্যক প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, রিকশা, যাত্রীবাহী ভ্যান চলাচল করতে দেখা গেছে। এতদিন ধরে চোখে না পড়লেও এখন এ মহাসড়কে দেখা মিলছে বাসেরও।
যাত্রাবাড়ীর এ মহাসড়ক এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতাও ছিল ঢিলেঢালা। শনির আখড়া, রায়েরবাগসহ বিভিন্ন স্থানে থাকা চেকপোস্টগুলো সেভাবে সক্রিয় দেখা যায়নি।
রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ডে রাইডারদের মোটরসাইকেল নিয়ে যাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। এই বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিলেন যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি দোকানের বিক্রয়কর্মী জাবেদ মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমাদের পাইকারি মুদি দোকান। দোকান খোলা। প্রতিদিন অনেক কষ্ট করে এটুকু পথ যেতে হচ্ছে। ভ্যানে করে যাই, ৫০ টাকা ভাড়া নেয়। পথে পুলিশ আটকে দেয়ায় কয়েকবার নেমেও গেছি।’
টিকা নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাবেন সারোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘অটোরিকশায় সানারপাড় থেকে রায়েরবাগ পর্যন্ত আসছি। পুলিশের ভয়ে অটোরিকশা চালক আর সামনে যাবে না। তাই নেমে পড়েছি।’
সারোয়ার হোসেন আরও বলেন, ‘রাস্তার অবস্থা দেখেন, বাস ছাড়া সবই আছে। সবই যখন চলছে বাস চালু করলেই হয়, তাতে মানুষের ভোগান্তি কিছুটা কমতো। একটা মোটরসাইকেল চালকের সঙ্গে দামদর করলাম, ২০০ টাকার নিচে ঢাকা মেডিকেলে যাবে না। দেখেন মাত্র এইটুকু পথ।’
সরেজমিনে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত শনির আখড়া বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েকটি বাসও চলতে দেখা গেছে। জরুরি প্রয়োজনে খোলা থাকা অফিসের কর্মীদের যাতায়াতের জন্য বাসগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে যাওয়ায় গত কয়েক মাস ধরে বিধিনিষেধ আরোপ করে তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে সরকার। ঈদুল আজহা সামনে রেখে আট দিনের জন্য শিথিল করা হয়েছিল বিধিনিষেধ। এরপর আবার গত ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে আগামী ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ দিয়েছে সরকার।
বিধিনিষেধের মধ্যে খাদ্য ও খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন/প্রক্রিয়াজাতকরণ মিল কারখানা, কোরবানির পশুর চামড়া পরিবহন, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং ওষুধ, অক্সিজেন ও কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদনকারী শিল্প-কারখানা ছাড়া বন্ধ সব ধরনের গণপরিবহন, সরকারি ও বেসরকারি অফিস এবং শিল্পকারখানা। বন্ধ রয়েছে দোকান ও শপিংমলও। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষের বাইরে বের হওয়াও নিষেধ।
শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ঘাটে জনস্রোত : কঠোর লকডাউন ৬ষ্ঠ দিনে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটের উভয় পাড়ে জনস্রোত। একই সঙ্গে ঢাকায় ফেরা ও দক্ষিণবঙ্গগামী ঘরমুখো যাত্রীর চাপ রয়েছে। এরই মধ্যে শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় প্রায় শতাধিক ও বাংলাবাজার ঘাট এলাকায় প্রায় ৪ শতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে।
বুধবার বেলা ২টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে এই চিত্র দেখা যায়। তবে এর মধ্যে দক্ষিণবঙ্গ থেকে আসা ঢাকাগামী যাত্রীর চাপ বেশি।
সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাবাজার ঘাটে যাত্রীর চাপ বাড়তে থাকে। যাত্রীরা ছোট ছোট যানবাহনে, ব্যাটারিচালিত আটোরিকশা, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলে করে ভেঙে ভেঙে পায়ে হেঁটে ঢাকার উদ্দেশ্যে কর্মস্থলের দিকে ছুটছেন। অনেকে মহাসড়ক দিয়ে মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, থ্রি-হুইলারসহ বিভিন্ন যানবাহনে ভেঙে ভেঙে বাংলাবাজার ঘাট হয়ে ফেরিতে শিমুলিয়া ঘাটে আসেন।
এক্ষেত্রে তাদেরকে পথে পথে পুলিশের বাধা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। জরুরি পরিষেবার আওতায় পণ্যবাহী পরিবহন, অ্যাম্বুলেন্স ঘাটে আসলেই পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ফেরিতে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বিভিন্ন যানবাহনে করে গন্তব্যে যাচ্ছেন যাত্রীরা। এতে গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।
বিআইডব্লিউটিসি (মাওয়া) ব্যবস্থাপক মো. ফয়সাল হোসেন জানান, সকাল থেকে এই নৌরুটে উভয়পাড়ে যাত্রীর চাপ রয়েছে। পদ্মা নদীতে প্রচুর বাতাস ও স্রোত থাকায় ফেরি সীমিত চালানো হচ্ছে। নৌরুটে সকাল থেকে ৭টি ফেরি চলাচল করছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে কে-টাইপ ও মিডিয়াম ফেরি।