হারিয়ে যাওয়া রেলপথের পুনরুজ্জীবিত হবার ইতিহাস

অর্থনীতি

নিজস্ব প্রতিনিধি : ১৮৬২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর “ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি” কলকাতা (বর্তমান শিয়ালদহ) থেকে রাণাঘাট পর্যন্ত রেলপথ উদ্বোধন করে । এই লাইনটিকেই বর্ধিত করে ১৫ নভেম্বর ১৮৬২ সালে দর্শনা থেকে কুষ্টিয়া জেলার জগতি পর্যন্ত প্রায় ৫৪ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন শাখা উদ্বোধন করা হয় ।


বিজ্ঞাপন

পরবর্তীতে কুষ্টিয়া থেকে পদ্মার পাড়ে (তথা পদ্মা ও যমুনার সংযোগস্থল) অবস্থিত অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইনটি উদ্বোধন করা হয় ১৮৭১ সালের ১ জানুয়ারী ।

এই সময় কুষ্টিয়া (জগতি) – গোয়ালন্দ ঘাট সেকশনের একটি স্টেশন হিসেবে রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার “কালুখালী” রেলওয়ে স্টেশনটি নির্মাণ করা হয় ।

পরবর্তী সময়ে ১৯৩২ সালে কালুখালী থেকে গোপালগঞ্জ জেলার মধুমতী নদীর তীরবর্তী ভাটিয়াপাড়া ঘাট পর্যন্ত নতুন একটি রেলপথ তৈরি করা হলে কালুখালী স্টেশনটি জংশন রেলওয়ে স্টেশনে পরিণত হয় । এই সেকশনে স্টেশন নির্মাণ করা হয় মোট ১৩ টি ।

যথাক্রমে, কালুখালী জংশন, রামদিয়া, বহরপুর, আড়কান্দি, নলিয়াগ্রাম, মধুখালী, ঘোড়াখালী, সাতৈর, বোয়ালমারী, সহস্রাইল, ব্যাসপুর, কাশিয়ানী এবং ভাটিয়াপাড়া ঘাট রেলওয়ে স্টেশন ।

ব্রিটিশ শাসনামলে এমনকি পরবর্তী পাকিস্তান শাসনামলেও সেকশনটি দিয়ে ট্রেন চললেও যাত্রী সংকট আর লোকসানের কারণ দেখিয়ে নব্বই দশকের শুরুতে তৎকালীন সরকার কর্তৃক এই সেকশনটি বন্ধ করে দেয়া হয়।

২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সরকার গঠন করলে ২০১৩ সালের ২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কালুখালী জংশন – ভাটিয়াপাড়া সেকশনে ৩২০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পুনরায় রেলপথটি উদ্বোধন করেন এবং একইসাথে “ভাটিয়াপাড়া এক্সপ্রেস” ট্রেনটি চালু করেন ।

পরে এই সেকশনের কাশিয়ানী স্টেশনটিকে জংশন করে গোবরা পর্যন্ত রেললাইন বসানোর কাজ ২০১৫ সালের নভেম্বরে শুরু হয় ।

এই কাশিয়ানী – গোবরা সেকশনে স্টেশন নির্মাণ করা হয় মোট ৭ টি । যথা : কাশিয়ানী, চাপতা, ছোট বাহিরবাগ, চন্দ্রদিঘলিয়া, গোপালগঞ্জ, বোড়াশী এবং গোবরা রেলওয়ে স্টেশন ।

২৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থেকে গোবরা পর্যন্ত ৪৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেল লাইনটির নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে ।

এতে করে আমাদের স্বাধীনতার মহান রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মভূমি গোপালগঞ্জ জেলা শহরটিও রেল নেটওয়ার্কের আওতায় চলে আসে ।

এরপর রাজশাহী থেকে গোবরা পর্যন্ত “টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস” নামের একটি আন্তঃনগর ট্রেন চালুর মাধ্যমে সৃজীত নতুন রেলপথটি ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর চালু করা হয় ।

আর এভাবেই এককালের হারিয়ে যাওয়া কালুখালী – ভাটিয়াপাড়া ঘাট সেকশনটি দুই দশকেরও বেশ কিছুদিন পরে আবারও মূল রেল নেটওয়ার্কে ফিরে আসে আর সেই সাথে দেশের রেলওয়ের মানচিত্রে যুক্ত হয় কাশিয়ানী – গোবরা নতুন সেকশনটিও ।