দোষ কি শুধু যৌনজীবীর, না আমাদেরও

উপ-সম্পাদকীয়/মতামত

এসএমআর শহীদ : আমাদের সমাজে যারা যৌন কর্মের বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করে থাকে তাদের সাধারণভাবে যৌনজীবী বলা হয়। অনেক স্থানে একাডেমিক টার্ম হিসেবে যৌনকর্মী (Sex Worker) শব্দটি ব্যবহার করা হলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতিতে এই শব্দার্থটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। সাধারন বাংলা ভাষার মত অন্যান্য স্থানেও এদের পতিতা (Prostitute) বলা হয়। তাই এখানে যৌনকর্মী বা পতিতা বিতর্কে না বলে মাঝামাঝি শব্দ যৌনজীবী বলা হলো।


বিজ্ঞাপন

পতি অর্থ পুরুষ ও পতিতা অর্থ নারী। এই অর্থটুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে আমার কিছুই বলার থাকত না। পতি স্বামী বা পরিবারের প্রধানকে বোঝান হয়েছে কিন্তু পতিতা নারী হলেও সে নারী আর দশটা নারীর মত নয়, তার আছে অনেক দোষ, সে পয়সার বিনিময়ে শরীর বিক্রি করে বা ভাল করে বলতে গেলে বলতে হয় যৌন সুখের ফেরীওয়ালী। পতি পদবাচ্যে যেমন সমস্ত পুরুষ মানুষকেই বোঝানো হয় ঠিক তেমনি নারী মাত্রই পতিতা। পুরুষ ও নারীর পরস্পরের প্রতি যে আশক্তি তা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির অর্ন্তরভুক্ত।

ঐ শরীরটা কিনছে কারা, কি তাদের পরিচয় তারা অবশ্যই পুরুষ। এই পুরুষ গুলিকে আপনি কি বলবেন বা কি নামে ডাকবেন? আমার এই জীবনের অভিজ্ঞতায় আমি এমন একটি পুরুষও দেখিনি, যে সুযোগ পেলে নারী ব্যবহার থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারে এই ব্যবহার বলতে শুধুই যে যৌনতা তা বলা হয়নি, কেউ পেছন থেকে সুন্দরী নারী কিংবা স্কুল কলেজ পড়ুয়া মেয়েদের কুদৃষ্টি দেয়, এটাও কি সেই পর্যায়ে পড়ে না। সুন্দরকে দেখে সৃষ্টির শুকরিয়া আদায় করেছে? আমার মনে হয় .৫% পুরুষ শুকরিয়া করে কি না সন্দেহ আছে।

আবার অন্য দিকে এই চিত্রটি কত সুন্দর…যেসব মেয়েরা সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে দেহ বিক্রি করে সমাজ তাঁদের বলে পতিতা । অপরদিকে, যেসব মেয়েরা হাজার টাকার বিনিময়ে লুকিয়ে দেহ বিক্রি করে সমাজ তাদের বলে সোসাইটি গার্ল । যারা আর একটু বেশী দামে দেহ বিক্রি করে সমাজ তাদের বলে পার্টি গার্ল।

আর সবচেয়ে ভয়াবহ হচ্ছে তথাকথিত শিক্ষিত মেয়েরা যখন রাস্তা দিয়ে দেহ দেখিয়ে-দেখিয়ে হাঁটে TSC,NSU, KFC, ধানমণ্ডি লেকে বয়ফ্রেন্ডের কোলে বসে আড্ডা দেয়, (কপালের টিপ না), কিস খায় এবং মাঝে মাঝে সেই বয়ফ্রেন্ডের সাথে ফ্ল্যাটে যায়, পয়লা বৈশাখে লাল-সাদা শাড়ী পড়ে হাজারটা ছেলের সাথে ঢলাঢলি করে, পান্তা খায়, আর রিক্সায় হুড তুলে দিয়ে আদর সোহাগ খায় (একবার কিন্তু কইছি যে এটা কপালের টিপ না), আবার বলে আমরা শুধুই ফ্রেন্ড! সমাজ তখন তাঁদের বলে আধুনিক মেয়ে !

দেহ ব্যবসায় যারা শুধুমাত্র পেটের দায়ে করে বা জোরপূর্বক তাদের করানো হয়, তারাই বেশ্যা বলে আখ্যায়িত। কিন্তু কেন? তাঁদের এত টাকা-পয়সা,পাওয়ার নেই বলে? থুতু মারি সুশীলদের এই দ্বৈত নীতিকে। যারা পেটের দায়ে এই ঘৃণ্য কাজটি করে তাঁদেরকে আমি পতিতা বলি না, আমি পতিতা বলি তাদেরকে যারা অর্থ বা কাজের লোভে পর পুরুষের সামনে বিবস্ত্র হতে দ্বিতীয় বার ভাবে না ।

ওরা ও ভালোবাসা চায়। ওরা ও মানুষ। ওদের কে আমরা ঘৃণা করি। আমাদের সমাজে ওদের জন্য তিল মাত্র জায়গা আমরা রাখতে চাই না। ওরা পাপী। ওরা আমাদের কাছে ঘৃণিত। আমরা ওদের দেখে থুথু দেই। বেশ্যা কিংবা ছিনাল বলে সম্বোধন করি। ওদের কে আমরা পিছন থেকে অসভ্য ভাষা ব্যবহার করি এবং কি আরও ভাষা যদি থাকতো তাই বলে ডাকা হতো। কিন্তু কেন? আমরা ওদের বাইরের দিকটা দেখে এত মন্তব্য করি, কিন্তু আমরা কি কখনও ওদের বুকে জমিয়ে রাখা দুঃখ গুলু অনুভব করার চেষ্টা করেছি। সস্তা মেকাবে ওরা ওদের ঢেকে রাখে। ওরা যেখানে বাস করে আমরা সেটাকে পাড়া বলি। নটি পাড়া, মাগী পাড়া, পতিতালয় ।

“I am not a prostitute”, এমন করে যে মেয়ে উচ্চস্বরে বলতে পারে সে কি ইচ্ছে করে এই অন্ধাকারে এসেছে? কখনোই নয় তাকে বাধ্য করা হয়েছে। পুরুষ শাসিত সমাজে কিছু হায়েনা আছে তাদের জন্যই আজ সমাজ ধবংসের পথে। সেই মেয়েটির ভাষ্য, “আমি English Medium এর ছাত্রী। আমি একটা ছেলেকে ভালবাসতাম। ছেলেটা আমার জন্য অনেক কিছু করতে চেয়েছিল বলে আমি জানতাম। কিন্তু প্রেমের নামে সে আমাকে ধোকা দিয়েছে। আমার বাবা একজন বড় ব্যবসায়ি ব্যক্তি। আমি সবার অজান্তে এক সময় ছেলেটাকে বিয়ে করি। বিয়ের পর সে আমাকে বেরাতে নিয়ে গিয়ে আমাকে একটা লোক এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। সেদিন সন্ধার পর আমি তাকে আর খুজে পায়নি। আমার সাথে সে দেখা না করে আমাকে রেখে চলে আসে। তারপর থেকেই আমি এখানে (পতিতালয়)।’’

কথায় এবং লেখায় যদি কোনো রকম ভুল করে থাকি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করছি ধন্যবাদ।