বস্তা প্রতি বাড়তি ১০০-২০০ দিলেই মিলছে সার

অপরাধ অর্থনীতি

সরকারের লক্ষমাত্রা অর্জনে অনিশ্চিয়তা
নিজস্ব প্রতিনিধি : চলতি আমন মৌসুমের শুরুতেই সারের সংকটের গুজব ছড়িয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট করে নৈরাজ্য তৈরি করেছে বগুড়ার শেরপুরের অসাধু সার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। এর ফলে কৃষকদের কিনতে হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে।


বিজ্ঞাপন

এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উপজেলার অন্তত ৪০ হাজার কৃষক পরিবার। আর মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা।

এছাড়া কৃত্রিম সার সংকটের কারণে আমন ধানের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত দুই-তিন দিন ধরে স্থানীয় বাজারে সার সংকটের কথা জানিয়েছেন আমন চাষীরা।

এদিকে সহজলভ্যে সার প্রাপ্তিতে উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্তাদের সেদিকে কোনো নজর নেই বলেও জানিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।

প্রান্তিক কৃষকদের অভিযোগ, আমন মৌসুমে চাষাবাদের জন্য প্রয়োজনীয় সার কিনতে গেলে ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন সার নেই।

তাছাড়া সারের সংকটের কথা বলে দাম বেশি নিচ্ছে সার ব্যবসায়ীরা। অথচ সরকারি বিধি মোতাবেক প্রতিটি ডিলারের দোকানগুলোতে নির্ধারিত স্থানে সারের মূল্য তালিকা টাঙিয়ে রাখলেও মানা হচ্ছে না বিক্রয় বিধিমালা।

প্রতি বস্তা ইউরিয়া সরকার নির্ধারিত মূল্য ৮০০ টাকার স্থলে বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা, ১১০০ টাকার টিএসপি ১২০০ থেকে ১২৫০ টাকা, ৭৫০ টাকার এমওপি ৯০০ টাকা ও ৮০০ টাকার ড্যাপ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায়।

উপজেলা কৃষি অফিসার জানান, চলতি মৌসুমে এই উপজেলায় ২২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ইতোমধ্যে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে।

আর দু-একদিনের মধ্যে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব দিক বিবেচনায় এনেই চাহিদার বিপরীতে সরকারিভাবে সারের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

সেই মোতাবেক পর্যায়ক্রমে বিসিআইসি ১২ জন এবং বিএডিসির ২১ জন ডিলার চাহিদা অনুযায়ী সার উত্তোলন করে বিক্রি করছেন। এখানে সারের কোনো সংকট নেই। অথচ স্থানীয় কৃষকদের মাঝে পরিকল্পিতভাবে সার সংকটের গুজব ছড়ানো হয়েছে।

ফলে সার কেনার জন্য কৃষক মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তারা হন্যে হয়ে দোকানে দোকানে ঘুরছেন। সার নিয়ে কৃষকদের মধ্যে হাহাকার তৈরি হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার কয়েকজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, কতিপয় ডিলার-ব্যবসায়ী ও খুচরা সার বিক্রেতাদের সমন্বয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে।

মূলত তারাই সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ইউরিয়া, টিএসসি, ডিএপিসহ সব ধরনের সারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। প্রতি বস্তা সারে ইচ্ছেমাফিক দাম নিয়ে কৃষকদের কাছে বিক্রি করছে।

এভাবে প্রভাবশালী ওই সিন্ডিকেটটি মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মিশন নিয়ে মাঠে রয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা।

উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের মাথাইলচাপড় গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম, ইউনুস আলী, আশরাফ আলী বলেন, জমিতে সার দেওয়ার এখন উপযুক্ত সময়।

তবে সার কেনার জন্য বুধবার একাধিক দোকানে গেলে প্রথমে ব্যবসায়ীরা তাদের কাছে কোনো সার নেই বলে জানিয়ে দেন। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত প্রতি বস্তায় ১০০-২০০ টাকা দিলেই সার পাওয়া যাচ্ছে।

এ বিষয়ে গোলাম রসুল নামের একজন প্রান্তিক চাষী বলেন, আমন মৌসুমে ৬ বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছি। কিন্তু মৌসুমের শুরুতেই সার নিয়ে খুবই বিপদের মধ্যে আছি।

জমি থেকে আগাছা ও ঘাস মারার কীটনাশক চারা রোপণের আট থেকে দশ দিনের মধ্যে ইউরিয়া সারের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হয়। কিন্তু ১৫ দিন পার হয়ে গেলেও ইউরিয়া সার সংগ্রহ করতে পারিনি।

তবে কৃষকদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সার ব্যবসায়ী ও ডিলাররা বলেন, বগুড়া বাপার গোডাউন থেকে চাহিদার তুলনায় সার সরবরাহ করা হচ্ছে না। তাই সারের এই সংকট তৈরি হয়েছে।

এ ক্ষেত্রে তাদের কোনো হাত নেই। এছাড়া সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কোনো বাড়তি টাকায় সার বিক্রি করা হচ্ছে না বলেও দাবি করেন তারা।

শেরপুর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ছামিদুল ইসলাম জানান, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে ইউরিয়া বিক্রি করা অন্যায়।

চলতি আগস্ট মাসে ইউরিয়া সারের বরাদ্দ রয়েছে ৯০৭ মেট্রিক টন। মঙ্গলবার পর্যন্ত কেবল ২৬০ মেট্রিক টন উত্তোলন করা হয়েছে।

বাকি সার এখনো উত্তোলনই হয়নি। তাই সারের কোনো সংকট নেই। যদি কেউ বেশি দামে বিক্রি করে তবে প্রমাণসহ কৃষকেরা যোগাযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, আমার জানামতে সারের কোনো সংকট নেই।

এরপরও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বেশি দামে সার বিক্রি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। খোঁজখবর নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।