জাহাজ এবং শুল্ককর এর হিসেব নিকেশ

উপ-সম্পাদকীয়/মতামত

মোহাম্মদ বেলাল হোসেন চৌধুরী : জাহাজ এক ধরনের বৃহদাকার জলযান যা নদী কিংবা সমুদ্রে চলাচলের উপযোগী করে যাত্রী কিংবা মালামাল পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা হয়।


বিজ্ঞাপন

আধুনিক সভ্যতার বিস্তারে জাহাজের অবদান অনস্বীকার্য। তবে এখনো পর্যন্ত জাহাজ তথা নৌপরিবহনই সবচেয়ে সস্তা পরিবহন হিসেবে বিবেচিত হয়। পূর্বের ভেলাজাতীয় ও পালতোলা জাহাজের জায়গায় আধুনিক জাহাজ ব্যতিত বর্তমানে পানির নীচ দিয়ে চলাচলেরও ক্ষমতাসম্পন্ন ডুবো জাহাজ রয়েছে।

ইতিহাস : প্রথম জাহাজ প্রায় ১০,০০০ বছর আগে চলেছে বলে জানা যায়।

জাহাজ পানিতে ভাসার ব্যাখ্যা : তরল পদার্থে নিমজ্জিত একটি বস্তু উপরের দিকে যে বল অনুভব করে তা বস্তুটি দ্বারা অপসারিত তরলের ওজনের সমান।

তাই এক হাজার টনের একটি জাহাজ পানিতে ডুবতে থাকবে যতক্ষণ না এটি এক হাজার টন পানিকে অপসারণ করবে।

যদি জাহাজটি ডুবে যাবার আগেই এক হাজার টন পানিকে অপসারণ করে ফেলে তাহলে জাহাজটি আর না ডুবে এবার ভেসে থাকবে।

এটা সম্ভব হবে জাহাজের ঘনত্বকে জাহাজ দ্বারা অপসারিত পানির ঘনত্বের চেয়ে কম করে দিলে। জাহাজের ভেতরে ফাঁকা স্থান রেখে এটা করা হয়। ফলে জাহাজ সমান ওজনের পানিকে অপসারণ করে এটি ভেসে থাকে।

জাহাজের মেয়াদকাল : অধিকাংশ সমুদ্র চলাচলের উপযোগী মালবাহী জাহাজের গড় আয়ু ২০ থেকে ৩০ বছর। জোড়া কাঠ (প্লাইউড) কিংবা কাচতন্তু (ফাইবারগ্লাস) দিয়ে জাহাজ তৈরী করা হলে তা ত্রিশ থেকে চল্লিশ বছর পর্যন্ত চলাচলের উপযোগী থাকে। শক্ত কাঠের তৈরী জাহাজ আরো বেশি সময় ব্যবহৃত হয়ে থাকে; তবে এর জন্যে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন। তবে সতর্কভাবে রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে ইস্পাতের জাহাজ শতাধিক বছর কর্মক্ষমতা প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়ে থাকে।

জাহাজ স্থলভাগে তৈরী করা হয় । ভাংচুর, আগুন, সংঘর্ষ, ডুবে যাবার মাধ্যমে এর জীবনকাল শেষ হয়ে যায়। তথ্য মোতাবেক জানা যায়, মহাসাগরের তলদেশে ত্রিশ লক্ষেরও অধিক জাহাজের ভগ্নাবশেষ জমা পড়ে আছে। প্রথম ভেলা আবিষ্কার অতপর কাঠের পালতোলা জাহাজ থেকে আধুনিক কন্টেইনারবাহী জাহাজ বলেন আর বিমানবাহী যুদ্ধ জাহাজ বলেন এ যে সভ্যতার সাথে আজীবন ঠিকে থাকবে তা হলফ করে বলা যায়।
জাহাজে পণ্য পরিবহন করে আমদানিতে কাস্টমস শুল্ককর কিভাবে নির্নয় করা হয়?
আমাদের দেশে শুল্ককর বলতে আমরা বুঝি কোন পণ্য আমদানির সময় যে Customs Duty, Regulatory Duty, Countervailing Duty, Anti-dumping Duty, Safe guard Duty, Supplementary Duty, Value Added Tax, Advance income Tax, Advance Tax এগুলো সব মিলে যা প্রদেয় হয় সেটি হলো শুল্ককর (যেটির জন্য যা প্রযোজ্য)।

এবার Fob value: কোন পণ্য জাহাজে উঠার আগমুহূর্ত পর্যন্ত যে মূল্য সেটা হলো সে পণ্যের Fob free on board value বা জাহাজমুক্ত মূল্য।

এই Fob Value এর সাথে, যখন জাহাজ পণ্য পরিবহন হয়ে আসে তখন Freight যোগ হয়, এই দুই Fobমূল্য+পথভাড়া এর সাথে ১% ইন্সুইরেন্স যোগ হলে পাওয়া যায় Fob (Cost) & ( Freight) = C&F Value । উল্লেখ্য কোন পণ্যের Fob value মানে এর মধ্যে পণ্য উৎপাদনে সকল ব্যয় আছে যাকে অন্যভাবে Cost ও বলে থাকি।

কোন পণ্যের যদি শুধু Fob value থাকে তারপর প্রকৃত জাহাজ ভাড়া জানা থাকলে বা পাওয়া গেলে সেটি যোগ করতে হয়, যদি প্রকৃত জাহাজ ভাড়া জানা না যায় তাহলে Fob value এর ২০% হবে ফ্রেইট যোগ করতে হয় । এবার ইন্সুইরেন্স জানা না থাকলে Fob + 20% freight যোগ করে তার উপর ১% ইন্সুইরেন্স হিসাব করে নিতে হবে।

Fob(Cost)+ insurance+ Freight = CIF এটি হলো কোন পণ্যের মূল্য এর সাথে ১% ল্যান্ডিং চার্জ যোগ হলে Assessable Value পাওয়া যাবে। এ Assessable Value এর উপর বিভিন্ন শুল্ককরের হার প্রয়োগ করে শুল্ককর বাহির করা হয়।