শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস বাহিনীর তান্ডব চলছে

অপরাধ এইমাত্র

স্টকলটের ব্যবসায়ীকে চাঁদার দাবিতে গুলি করে হত্যার হুমকি

বিশেষ প্রতিবেদক : শীর্ষ সন্ত্রাসী আব্বাস ওরফে কিলার আব্বাসের নামে আবারো চাঁদাবাজি চলছে। চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীরা মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীসহ ধনাঢ্য ব্যক্তিদের ফোন করে মোটা অংকের টাকা চাঁদা দাবি করছে। আর তাদের দাবিকৃত চাঁদার টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলেই তাকে হত্যাসহ বিভিন্ন প্রকার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এসব থানা বা র‌্যাবের কাছে অভিযোগ করেও কোন প্রকার প্রতিকার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগি ব্যক্তিরা। ফলে অনেকেই নিরবে সহ্য করছেন। আবার অনেকেই চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছে। অভিযোগে জানা গেছে, রাজধানীর কচুক্ষেত এলাকার স্টক লটের ব্যবসায়ী জনৈক হেলেনা আক্তারের কাছে ঈমন নামের এক সন্ত্রাসী মোবাইল ফোনে মোটা অংকের চাঁদার টাকা দাবি করে। আর তাদের কথামত দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দিলে তারা ব্যবসা করতে দেবেনা এমনকি তাকে গুলি করে হত্যা করা হবে। কথিত ঈমন কিলার আব্বাসের ভাগ্নে জামাই পরিচয় দিয়েছে। এখন ঈমনের ছোট ভাই বাবু ও শহীদুল এবং তার সহযোগিরা ব্যবসায়ী হেলেনার মোবাইল ফোনে অনবরত হুমকি দিয়ে আসছে। তাকে বলা হচ্ছে, ব্যবসা করতে হলে আব্বাসকে চাঁদা দিতেই হবে। এ ঘটনাটি ঘটে গত ২৭ আগস্ট। পরে উপান্তর না পেয়ে ওই ব্যবসায়ী হেলেনা আক্তার রাজধানীর ভাষানটেক থানায় ১১১১ নম্বর সাধারণ ডাইরি করেছেন। এ ছাড়া র‌্যাব-৪ এর কার্যালয়ে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। ভুক্তভোগি হেলেনা জাহাঙ্গীর সকালের সময়কে জানান, সন্ত্রাসীদের হুমকিতে তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন নাশের আশঙ্কার মধ্যেই বসবাস করছেন।
সূত্র জানায়, ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনের সামনে এবং কচুক্ষেত এলাকায় চাঁদার দাবিতে প্রকাশ্যে দুই ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ২০০৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার হন তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতা আব্বাস উদ্দিন ওরফে কিরার আব্বাস। এরপর থেকেই তিনি কারান্তরীণ রয়েছেন। এখন গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্ধী রয়েছে। রাজধানীর মিরপুর, কাফরুল, ভাসানটেক, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় চাঁদাবাজি, দখলবাজি, মাদক কারবার, ডিশ লাইনের ব্যবসা, ঝুট ব্যবসা, গরুর হাটের ইজারাসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে টেন্ডারবাজি, মিরপুর বিআরটিএ অফিস ঘিরে গড়ে ওঠা অপরাধ সাম্রাজ্যও কিলার আব্বাস বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। কারাগারে বসেই মোবাইল ফোন, হোয়াটসঅ্যাপ, আইএমও এবং মেসেঞ্জারে অডিও ও ভিডিও কলের মাধ্যমে সহযোগীদের নির্দেশনা দেন তিনি। শুধু তাই নয়, ঢাকা উত্তরের স্থানীয় রাজনীতিতেও তার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। তার বাহিনীর ক্যাডারদের নামের তালিকাও বেশ লম্বা। আবার বিভিন্ন ব্যক্তির নামে নেওয়া অর্ধশতাধিক মোবাইল সিমকার্ড রয়েছে আব্বাসের। এসব সিম দিয়ে আব্বাস নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজন, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও নিজের ক্যাডার বাহিনীর সঙ্গে। কারাগার থেকে তিনি যে মোবাইল ফোনে খুনের নির্দেশনা দিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে এর প্রমাণও রয়েছে।
অপর এক সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস জেলে বসেই শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তার বাহিনীর জবরদখলের মাধ্যমে তার আপনজনেরা অনেক সম্পদের মালিক বনে গেছেন। মিরপুর-কাফরুলেই তার রয়েছে ৭টি ফ্ল্যাট ও ১৫টি বাড়ি, যার মধ্যে ৪টি বহুতল ভবন। কিলার আব্বাসের অপরাধ সা¤্রাজ্যের অর্থ তার স্ত্রীর কাছে যাচ্ছে। আর এই টাকা তার স্ত্রী হামিদার হাতে তুলে দেন আব্বাসের কালেক্টর ও স্ত্রীর ব্যক্তিগত গাড়ির চালক রহমান। ২০১৭ সালে ইব্রাহিমপুরে ২০ বছরের পুরনো ডিশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জালালকে গুলি করে এটি দখল করে আব্বাসের লোকজন। এর পর এটির নাম রাখা হয় ‘আইদান ক্যাবল নেটওয়ার্ক’। আর সরকারি হোমিওপ্যাথিক কলেজ ও ডেন্টাল কলেজে টেন্ডারবাজিও করে আব্বাসের অনুসারীরা। তার মনোনীত প্রতিষ্ঠান (হামিদা এন্টারপ্রাইজ) ছাড়া অন্য কেউ কাজ পান না বলে অভিযোগ রয়েছে।
শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ১৮ বছর ধরে কারাবন্দি। এসময়ে একদিনের জন্যও জামিন পাননি। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কাশিমপুর কারাগারের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘ম্যানেজ’ করে ভেতরে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন কিলার আব্বাস।
স্থানীয় ভুক্তভোগিরা জানান, কিলার আব্বাসের অপরাধ সা¤্রাজ্যের নিয়ন্ত্রক হচ্ছেন, ঈমন, বাবু, আলাউদ্দিন, শাহীন শিকদার, মিরপর ১১-এর দিলশাদ হোসেন ওরফে কিলার দিলু ও দেলোয়ার। মিরপুর ১২-এর ইমরান মাদবর। মিরপুর ৭-এর পিচ্চি সাহাদাত, রূপনগরের ফরিদ, মিরপর ৬-এর জিয়াউল হক, সেন্টু, শামীম, মোশারফ ওরফে ১০ আঙুল কাটা মোশারফ। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় সিটি আসিক, নুর হোসেন লেদু ও এসএম সায়েম। আব্বাসের ভাড়াটে কিলারদের অন্যতম হলো ভাসানটেকের ইমু, তপু, রহমান, রবিন, ১৪ নম্বরের জিল্লুর (বর্তমানে কারাগার), সেনপাড়ার টিটু। আব্বাস চাঁদাবাজি ও খুন-খারাবি নিয়ন্ত্রণ করেন চামাইরা বাবু, ভায়রা মাসুম, কচুক্ষেতের রাজু, চৌধুরী বাবু, লিটন, চাকমা রাসেল, হাসান, সেনপাড়ায় নুরু, ১৩ নম্বরের আজাদ, শাহীন, শাকিল, জিল্লু ওরফে সাল্লু, রহমান, আওয়াল, স্বপন, রহিম, শাহজাহান, কালা সোহেল, সাজু, স¤্রাটসহ গ্রুপের শতাধিক সদস্যের মাধ্যমে। এদের মধ্যে কয়েকজন আটক হয়েছেন।
স্টকলটের ব্যবসায়ী হেলেনা আক্তারের অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা ভাষানটেক থানার সহকারি পরিদর্শক (এসআই) এনামুলের সেল ফোনে একাধিকার কল করা হলেও তার সঙ্গে কথা সম্ভব হয়নি। তবে অভিযোগকারী জানান, গতকাল তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেছেন, অভিযোগটি আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালতের অনুমতি পেলে তদন্ত করা হবে বলে তাকে জানানো হয়েছে।


বিজ্ঞাপন