করোনাকালে ১৭ সেপ্টেম্বর মহান শিক্ষা দিবস

উপ-সম্পাদকীয়/মতামত

ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
আজ মহান শিক্ষা দিবস। যথাযোগ্য মর্যাদায় সারাদেশে আজ এ দিবসটি পালিত হতে যাচ্ছে। পাকিস্তান সরকারের গণবিরোধী, শিক্ষা সংকোচনমূলক শিক্ষানীতি চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে এবং একটি গণমুখী শিক্ষানীতি প্রবর্তনের দাবিতে ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ছাত্র-জনতার ব্যাপক গণআন্দোলনের রক্তাক্ত স্মৃতিবিজড়িত দিন এই শিক্ষা দিবস। আজ থেকে ৫৯ বছর আগে এই দিনে তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক শাসক আইয়ুব খানের চাপিয়ে দেওয়া ‘শরীফ কমিশনে’র শিক্ষানীতি প্রতিহত করতে গড়ে উঠেছিল ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন। ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন ‘অল-পার্টি স্টুডেন্ট অ্যাকশন কমিটি’ দেশব্যাপী হরতাল কর্মসূচির ডাক দেয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে দমাতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা লেলিয়ে দেয় পুলিশ বাহিনী। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট মোড়ে
ছাত্রদের মিছিলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে মোস্তফা, বাবুল, ওয়াজীউল্লাহ প্রমুখ শহীদ হন। সেই থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ছাত্র সংগঠন প্রতিবছর দিনটিকে ‘মহান শিক্ষা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।আজকের বিষয় নিয়ে কলাম লিখেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট গবেষক ডা.এম এম মাজেদ তাঁর কলামে লিখেন…সবাই জানি, যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত। শিক্ষা ছাড়া উন্নত রাষ্ট্র বিনির্মাণ কল্পনামাত্র। তাই একটি জাতিকে ধ্বংস করতে চাইলে তার শিক্ষাব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিলেই হয়।
আগে দেখা গেছে, অনেক বড় বড় যুদ্ধে বিজয়ী শক্তি পরাজিত জাতির লাইব্রেরি ধ্বংস করে দিয়েছে যেন সে জাতির শিক্ষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অবগত না হতে পারে।
★কোরআন ও হাদিসে শিক্ষার গুরুত্বঃ-আল-কোরআন এসেছে বিশ্ব মানবতাকে হিদায়াতের সঠিক পথের সন্ধান দেয়ার জন্য। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘রমজান মাস, যাতে কোরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদের্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে।’ (সূরা আল-বাকারা-১৮৫) হিদায়াতের এই কিতাব আল-কোরআন শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের উপরে ফরজ করা হয়েছে।আর
পৃথিবীতে ইসলাম ধর্ম মানবতার মুক্তির মহাসনদ এবং উন্নত জীবনধারার ব্যবস্থাপক। এখানে নৈতিকতার প্রাণশক্তি স্পন্দিত এবং প্রকৃত শিক্ষার আলো বিচ্ছুরিত। মানুষের জীবনধারা, কর্মপদ্ধতি, আদর্শ, কর্মচাঞ্চল্য, ত্যাগ, সাধনা ও সফলতার সমন্বয় এবং অভিব্যক্তির পরিস্ফুটন ঘটেছে ইসলামে। ইসলাম মানুষকে সর্বদা শিক্ষার প্রতি উদ্ধুদ্ধ করে এবং আহ্বান করে অজ্ঞতার অমানিশার বুকচিরে সুশিক্ষার আলোর দিকে আসার। ইসলামি জীবন দর্শনে শিক্ষা মানবতার সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ নিশ্চিতকারী এক শক্তি। এ শিক্ষা মানুষের দেহ ও আত্মার পূর্ণতা বিকাশে নিরন্তর প্রয়াসী; যে শিক্ষা সত্যের আবিষ্কার, মিথ্যার অপনোদন, মানবতাবিধ্বংসী সব ধরনের কাজকে পরিহার এবং পাশবিকতাকে নির্মূল করে মানুষের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত গুণাবলির বিকাশ ঘটায়। কোরআন ও হাদিসে শিক্ষার গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা নানা কৌণিকে সাবলীল ভাষায় পরিব্যক্ত হয়েছে। কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘যাকে হিকমত তথা দ্বীনের জ্ঞান দেওয়া হয়েছে, তাকে দেওয়া হয়েছে বিপুল কল্যাণ ও সমৃদ্ধি। ’ -সূরা আল বাকারা: ২৬ হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলামকে পুনরুজ্জীবিত ও প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে বিদ্যার্জনে ব্যাপৃত থাকে এবং সে অবস্থায় তার মৃত্যু সমাগত হয়, জান্নাতে তার এবং নবীদের মধ্যে কেবল একটি ধাপই ব্যবধান থাকবে। ’ -দারিমি শিক্ষা বিষয়ে এমন অসংখ্য আয়াত ও হাদিস বিদ্যমান, যা কেবল শিক্ষার গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তার প্রতিই নির্দেশ করে। বস্তুত শিক্ষা জাতীয় উন্নয়নের সোপান। শিক্ষা ইসলামের অন্যতম মূল ভিত্তি। শিক্ষা ছাড়া ভালো মানুষ হওয়া যায় না। শিক্ষা ছাড়া ভালো মুসলমান হওয়া যায় না। শিক্ষা ছাড়া পূর্ণাঙ্গ ঈমানদার বান্দা হওয়া যায় না। আর তাই দেখা যায় ইসলামের প্রথম বার্তা ছিল, ‘পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাদের সৃষ্টি করছেন। ’ –সূরা আল আলাক: ১ আল্লাহতায়ালার এ বার্তা থেকেই বোঝা যায়, মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে শিক্ষার গুরুত্ব। কোরআন কারিমে রয়েছে শিক্ষা সংক্রান্ত প্রচুর আয়াত। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘জিজ্ঞেস করুন, যারা জানে (আলেম ও জ্ঞানী) আর যারা জানে না (জাহেল ও মূর্খ) তারা উভয় কি সমান হতে পারে?’ –সূরা জুমার: ৯ ইলম বা জ্ঞান সম্পর্কে রয়েছে প্রচুর হাদিস। ইলম (জ্ঞান) ও আলিম (জ্ঞানী) সম্পর্কে রয়েছে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রচুর বাণী। তিনিই বলেছেন, ‘প্রতিটি মুসলিমের (নর ও নারী) জন্য ইলম (শিক্ষা) অর্জন করা ফরজ। ’ -ইবন মাজাহ বস্তুত ইসলাম ও শিক্ষার পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত গভীরে। বিশেষ করে ইসলামের মূল কথা হলো সব মুসলিমকে অবশ্যই কমবেশি শিক্ষিত হতে হবে। ইসলাম ধর্ম সব ধরনের অজ্ঞতাবিরোধী। তাই ইসলাম অশিক্ষিত লোকদের শিক্ষার অনুগামী হতে বলে। শিক্ষাহীনতাকে ইসলাম ভর্ৎসনা করে। ইসলামের দৃষ্টিতে মূর্খতা মানে শুধু অশিক্ষা নয়। ইসলাম বলে, সত্যের ব্যাপারে অজ্ঞতা এক ধরনের অন্ধতা। বিশ্বাসের ক্ষেত্রে অনৈতিক গোঁড়ামি এবং চিন্তার ক্ষেত্রে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণও এক ধরনের মূর্খতা। অনেকেই আবার ইসলামি চেতনা, বোধ-বিশ্বাস ও স্বাভাবিক জ্ঞানার্জনকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখেন। অথচ ইসলামি শিক্ষা, চিন্তা-চেতনা ও কর্মতৎপরতায় জ্ঞানার্জন, চর্চা এবং আধ্যাত্মিকতার মাঝে কোনো ধরনের দ্বন্দ্ব নেই।পরিশেষে বলা যায়, আল-কোরআনের হক হচ্ছে তাকে তিলাওয়াত করতে হবে, জানতে হবে, বুঝতে হবে, বাস্তব জীবনে কোরআনের বিধান মেনে চলতে হবে। কারণ এই আল-কোরআনই কিয়ামতের দিন আপনার-আমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে। এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘আল-কোরআন তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে।’ (আহকামুশ-শরীয়াহ) তাই আসুন আমরা সবাই আল-কোরআন শিক্ষা করি এবং কোরআন অনুযায়ী নিজের জীবন পরিচালনা করার চেষ্টা করি।
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক দৈনিক স্বাস্থ্য তথ্য, প্রতিষ্ঠাতা,বাংলাদেশ রোগী কল্যাণ সোসাইটি।


বিজ্ঞাপন