অনলাইনে প্রতারনার মামলার রহস্য উদ্ঘাটন

অপরাধ

নিজস্ব প্রতিনিধি : গাজীপুর মেট্টোপলিটন এর সদর থানার শহীদ নিয়ামত সড়ক কলাবাগান এলাকার থাই এ্যালুমিনিয়াম ব্যবসায়ী মাকসুদুর রহমান অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে প্রতারনার স্বীকার মামলার রহস্য উদঘাটন, আসামী গ্রেফতার করলো পিবিআই গাজীপুর।


বিজ্ঞাপন

মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত এজাহারনামীয় আসামী মোঃ মিজানুর রহমান রানা (২৮), পিতা-আমিনুজ্জামান খান, মাতা-মোসাঃ শাহানারা খানম, সাং-রামনগর উত্তরপাড়া, ইউ.পি-বৃলাহিড়ীবাড়ী, থানা-ফরিদপুর, জেলা-পাবনাকে ০৪ অক্টোবর ২০২১ রাত অনুমান ০৪.৩০ ঘটিকায় পাবনা জেলার ফরিদপুর থানাধীন রামনগর এলাকা থেকে এবং আসামী ২। মোঃ রেজাউল করিম @ রেজা (৩৭), পিতা-মৃত আঃ রসিদ, মাতা-মনোয়ারা বেগম, সাং-সুরপুর উত্তরপাড়া, ইউপি-সুলতানপুর, থানা-দেবীদ্বার, জেলা-কুমিল্লা, বর্তমানে বাসা নং-২৮/বি, লেবেল-৪, রোড নং-৩, পুরাতন ডিওএইচএস, বনানী ঢাকা এ/পি. বাড়ি নং-২৫৫, নুরজাহান গার্ডেন, ফ্ল্যাট বি-২, প্রেম বাগান, দক্ষিন গাওয়ার, তেতুলতলা মোড়, থানা-দক্ষিনখান, ঢাকাকে ০৬ অক্টোবর ২০২১ রাত অনুমান ০৩.২০ ঘটিকায় ডিএমপি, ঢাকার দক্ষিনখান থানাধীন দক্ষিন গাওয়ার এলাকা থেকে অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন

বাদী মাকসুদুর রহমান সহ তার কযেক বন্ধু বিদেশী এ্যালুমিনিয়াম, দরজা ও জানালার ব্যবসা করেন। চীন থেকে দরজা জানালা আনার জন্য দুবাই প্রবাসী মোঃ আব্দুল মোমেন এর সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং হোয়াটস্ অ্যাপে কথা বলেন। পরবর্তীতে মোঃ আব্দুল মোমেন এর অনলাইন ব্যবসার পার্টনার মোঃ রেজাউল করিম ও মোঃ মিজানুর রহমান এর সাথে আব্দুল মোমেন এর মাধ্যমে পরিচয় হন। বাদীকে এ্যালুমিনিয়াম এর দরজা জানালা চীন থেকে সরবরাহ করবে বলে আব্দুল মোমেন ও মোঃ রেজাউল করিম আশ^স্থ করেন। আমদানীকৃত মালামালের সর্বমোট মূল্য ২০,০০,০০০/-টাকা নির্ধারন করার পর বাদী গত ইং ২৪/০৫/২০২১ তারিখ নগদ ৫,০০,০০০/- টাকা তাদেরকে বুঝিয়ে দেন এবং মিজানুর রহমান এর সিটি ব্যাংকের একাউন্টে ইং ২৭/০৫/২০২১ তারিখ ১১,৩২,৯৬৪/- টাকা জমা দেন। এরপর তাদের মালামাল যথাসময়ে সরবরাহ না করায় তারা দুবাই প্রবাসী মোঃ আব্দুল মোমেন এবং তার ব্যবসায়ীক পার্টনার মোঃ রেজাউল করিম ও মোঃ মিজানুর রহমান এর সাথে যোগাযোগ করেও অনলাইনে তাদের দ্রব্য না পেয়ে পুনরায় যোগাযোগ করলে উক্ত ব্যক্তিরা টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করেন। পরবর্তীতে এ সংক্রান্তে মোঃ মাকসুদুর রহমান (৫০), এনআইডি-১০০৩৯৮৫০৩১ পিতা-মৃত মফিদুর রহমান, সাং-বাসা নং-২০/০১, টেক ভাড়ারিয়া (কলা বাগান), শহীদ নিয়ামত সড়ক, ওয়ার্ড নং-২৬, থানা-সদর, গাজীপুর মহানগর, গাজীপুর বাদী হয়ে এজাহারনামীয় ০৩ জন আসামীর বিরুদ্ধে সদর থানার মামলা নং-৩৭ তারিখ-২৩/০৮/২০২১ ইং ধারা-৪১৭/৪০৬/৫০৬ পেনাল কোড রুজু করেন।

মামলাটি মেট্টোপলিটন পুলিশ ০১ মাস তদন্তকালীন সময় পিবিআই এর সিডিউলভূক্ত এবং পিবিআই গাজীপুর জেলা কর্তৃক তদন্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হওয়ায় মামলাটি পিবিআই হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকা কর্তৃক অধিগ্রহণ করা হয়।

ডিআইজি পিবিআই জনাব বনজ কুমার মজুমদার. বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধন ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার, জনাব মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এর সার্বিক সহযোগীতায় মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক জনাব মোঃ হাফিজুর রহমান পিপিএম মামলাটি তদন্ত করেন।

আসামীদ্বয়কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, এজাহারনামীয় আসামী মোঃ আব্দুল মোমেন চায়না বাংলাদেশ বিজনেস ক্লাবের প্রেসিডেন্ট। সে চায়না থেকে বিভিন্ন জিনিস ক্রয় করে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের নিকট পৌঁছায়। আসামী মোঃ রেজাউল করিমের সাথে আসামী মোঃ আব্দুল মোমেন ট্রাস্ট হলিডে নামে যৌথ অনলাইন ব্যবসা ছিল। তাদের অফিস ঢাকা বনানীস্থ পুরাতন ডিওএইচএস। আসামী আব্দুল মোমেন দুবাই অবস্থান করে সেখান থেকে তার অনলাইন ব্যবসা দেখাশুনা করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের নিজস্ব ট্রাস্ট হলিডেস, ট্রাস্ট কার্ট, চায়না বাংলাদেশ বিজনেস ক্লাব, লিটিল চায়না সহ বিভিন্ন ধরনের অনলাইন পেইজের মাধ্যমে সাধারন জনগনকে আকৃষ্ট করেন। মামলার বাদীর সাথে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আসামী মোঃ আব্দুল মোমেন এর পরিচয় হয়। পরবর্তীতে হোয়াটস্ অ্যাপে তাদের মধ্যে কথাবার্তা কালীন সময় মোঃ আব্দুল মোমেন মামলার বাদী সহ তাদের বন্ধুদেরকে জানান যে, তিনি বিদেশ থেকে বিশেষ করে চায়না থেকে সাশ্রয়ী দামে বিভিন্ন পন্য সামগ্রী বাংলাদেশে ইমপোর্ট করেন। অনলাইনের মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে পরবর্তীতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা গ্রহাকদের চাহিদা অনুসারে যথাযথ স্থানে পৌঁছে দেন। এছাড়াও মোঃ আব্দুল মোমেন বাদী সহ তার বন্ধুদেরকে তার ব্যবসায়ীক পার্টনার মোঃ রেজাউল করিম ও তার অনলাইন ব্যবসার অন্যান্য সদস্যদেরও পরিচয় করিয়ে দেন। বাদী মোঃ আব্দুল মোমেন এর উপর বিশ^াস স্থাপন করে আসামী রেজাউল করিম এবং মিজানুর রহমান রানার সাথে কথা বলে চায়না থেকে করোনা কালীন সময় এ্যালুমিনয়াম এর দরজা জানালার সামগ্রী সাশ্রয়ী দামে আনার জন্য গত ইং ২৭/০৫/২০২১ তারিখ আসামী মোঃ আব্দুল মোমেন এর চায়না বাংলাদেশ বিজনেস ক্লাবের সদস্য আসামী মোঃ মিজানুর রহমান রানার সিটি ব্যাংকের একাউন্টে ১১,৩২,৯৬৪/-টাকা প্রদান করেন। পরবর্তীতে বাদীর চাহিদা মোতাবেক মালামাল চায়না বাংলাদেশ বিজনেস ক্লাবের প্রেসিডেন্ট মোঃ আব্দুল মোমেন মালামাল সরবরাহ না করে অন্যান্য আসামীদের যোগসাজসে সমস্ত টাকা আত্মসাৎ করে।

এ বিষয়ে পিবিআই এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন আসামীরা প্রত্যেকেই অনলাইন ব্যবসা সহ ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসার সাথে জড়িত। আসামীরা একটা প্রতারক চক্রের সদস্য তারা বিভিন্ন মানুষের নিকট থেকে বিদেশী পন্য বিশেষ করে চায়না পণ্য সামগ্রী অনলাইনে অর্ডার নিয়ে ডোর টু ডোর পৌছে দিবে বলে তাদের নিজেস্ব অনলাইন পেজে বিজ্ঞাপন প্রচার করে। পলাতক আসামী মোঃ আব্দুল মোমেন দুবাই থেকে তার ব্যবসা পরিচালনা করে। আসামী মোঃ রেজাউল করিম ট্রাস্ট হলিডের সিইও এবং একই প্রতিষ্ঠানের এমডি বলে মূল আসামী মোঃ আব্দুল মোমেন পরিচয় দেয়। মামলার বাদীর নিকট থেকে অনলাইনে কথা বলে এ্যালুমিনিয়াম, দরজা জানালার সামগ্রী চায়না থেকে আমদানী করে বাংলাদেশে বাদীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পৌছে দিবে বলে মামলার বাদীর নিকট থেকে টাকা নিয়ে উক্ত মালামাল সরবরাহ না করে সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করেন।

গত ইং ০৪/১০/২০২১ তারিখ গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করলে বিজ্ঞ আদালতে নির্দেশে দুই দিনের পুলিশ রিমান্ডে প্রাপ্ত হয়ে আসামী মোঃ মিজানুর রহমান রানাকে জিজ্ঞাসাবাদকালীন তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক আসামী আব্দুল মোমেনের অনলাইন ব্যবসায়িক পার্টনার আসামী মোঃ রেজাউল করিম @ রেজাকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে উভয় আসামীকে ইং ০৬/১০/২০২১ তারিখ বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে উক্ত আসামীদ্বয় নিজেদেরকে এবং অনলাইন ব্যবসার প্রতারনার সাথে জড়িত অপর আসামীদের নাম উল্লেখ করে বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে।