ফুটপাতের যৌন উত্তেজক ঔষধ খেয়ে স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু

অপরাধ বিশেষ প্রতিবেদন স্বাস্থ্য

জাগায় খান জাগায় প্রমান

 

আমিনুর রহমান বাদশা : আপনি যৌন সমস্যায় ভুগছেন? স্ত্রীকে সুখ দিতে পারেন না? স্ত্রী আপনার অবাধ্য? তাহলে আর দেরি কেন? নিয়া যান বাংলাদেশ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত, সাইন্স ল্যাবে পরিক্ষিত ১০০% কাজ করবে যায়গায় খান জাগায় প্রমান। আর যদি এইসব যৌন উত্তেজক সিরাপ, ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল এবং হালুয়ায় কাজ না করে তাহলে সম্পুর্ণ টাকা ফেরত আপনার জুতা আমার গাল। ঠিক এমনই সব ফুটপাতের ঔষধ ব্যবসায়ীদের ঔষধ সেবন করে অকালে মানব দেহের লিভার, কিডনি ও হার্টের বারোটা বাজাচ্ছে বিতর্কিত ঔষধ কোম্পানির বিতর্কিত ঔষধ। রাজধানীসহ সারাদেশের গ্রামের গঞ্জের হাটবাজারে ভয়ংকর বিরুপ প্রতিক্রিয়া ফেলে এমন সব কেমিক্যাল যুক্ত যৌন উত্তেজক ঔষধের পরশা সাজিয়ে বসে ফুটপাতের ঔষধ ব্যাবসায়ীরা। ফুটপাতের এসব ঔষধ ব্যাবসায়ীরা অবৈধ কোন ঔষধ কোম্পানির ঔষধ বিক্রি করে না। এরা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত ঔষধ কোম্পানির ঔষধ ই বিক্রি করে থাকে। এসব স্বনাম ধন্য ঔষধ কোম্পানির বিতর্কিত ঔষধ তৈরি ও বাজারজাতের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের তবে এসব ঔষধ কোম্পানির মালিকেরা অতি লাভের আশায় পাইকারী ব্যবসায়ী ছাড়াও রাতের আধারে পাজারো নোয়া গাড়ি হাঁকিয়ে সারাদেশের ফুটপাতের ঔষধ ব্যাবসায়ীদের হাতে তুলে দিচ্ছে বিতর্কিত কেমিক্যাল যুক্ত পাওয়ার ফুল ঔষধ কারণ ওই যে যায়গায় খান যায়গায় প্রমান! এই যায়গায় খান যায়গায় প্রমান দিতেই গাজীপুরে যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট খেয়ে গার্মেন্টসকর্মী স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
রোববার দিবাগত মধ্যরাতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাশিমপুর থানাধীন সারদাগঞ্জ এলাকার জাহিদ কলোনীতে এ ঘটনা ঘটে। এর পূর্বে রাজধানীর কাওরান বাজারে এক আবাসিক হোটেলে যৌন উত্তেজক ঔষধ খেয়ে প্রেমিক যুগলের নির্মম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়াধীন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা কি সে খবর রাখেন?
সোমবার সন্ধ্যায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) জাকির হাসান এ তথ্য জানিয়েছেন। মৃত ব্যক্তিরা হলেন, নওগাঁ জেলার মান্দা থানার কয়লাবাড়ি এলাকার ফাছির উদ্দিনের ছেলে মো: ফিরোজ হোসেন (২৭) ও তার স্ত্রী নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া থানার সর্বমৈশা এলাকার সবুজ মিয়ার মেয়ে তাহমিনা আক্তার লিজা (২০)। পুলিশের ওই কর্মকর্তা স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাশিমপুর থানাধীন সারদাগঞ্জ পুকুরপাড় এলাকার জাহিদ কলোনীর ভাড়া বাসায় থেকে স্থানীয় পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন ফিরোজ ও তার স্ত্রী লিজা আক্তার। মাসখানেক আগে লিজা চাকরি ছেড়ে দেন। রোববার তারা দু’জনেই ফুটপাতের হকারের কাছ থেকে কেনা যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট সেবন করেন। রাত দেড়টার দিকে তাদের হৈচৈ শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে উভয়কে বিবস্ত্র অবস্থায় পান।
এ সময় স্থানীয়দের কাছে যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট সেবনের কথা স্বীকার করেন ওই দম্পতি।
পরে প্রতিবেশীরা গুরুতর অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে যান। তাদের অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে তাদেরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাদের মৃত্যু হয়।
খবর পেয়ে পুলিশ বিকেলে ঘটনাস্থলে যায়। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা। সচেতন মহলের তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, বগুড়ার দিদার আয়ুর্বেদিক এর রতি বিলাস সঞ্জীবণী রসায়ন, যৌবন শতদল জিনসেং সিরাপ জিনসেং চুর্ণ , এমি ল্যাবরেটরীজ ( আয়ু) এর শক্তি প্লাস, রাজশাহীর এসবি ল্যাবরেটরীজ (আয়ু) এবং এসবি হারবাল এন্ড নিউট্রিসিক্যাল এর পাওয়ার -৩০, জিনেক্স সিরাপ, ফুর্তি মিজান ওরফে ডাঃ মিজান ওরফে গন্ধগোকুল তৈল মিজান এর ফুর্তি, সসঞ্জিবনী রসায়ন/ কস্তুরি, গ্যানরেক্স, গাজিপুরের ইমা ল্যাবরেটরীজ ইউনানির ইমোফিট (শরবত জিনসিন), ইমোফল,ইমাটন সিরাপ এই কোম্পানির ঔষধের লেবেল কার্টনের চুড়ান্ত অনুমোদন নেই তারপরও ঔষধ তৈরি ও বাজারজাত চলছে , অনির্বাণ মেডিসিনাল ইন্ডাস্ট্রিজ( আয়ু) এর টার্গেট ক্যাপসুল, রতি বিলাস সঞ্জীবণী রসায়ন, যৌবন শতদল, এস এস ফার্মাসিউটিক্যালস ইউনানির জিনসিন সিরাপ, হাব্বে নিশাত হাব্বে মুনইশ, দিহান ফার্মাসিউটিক্যালস ( আয়ু) এর ঘোড়ার ছবি যুক্ত দি- টালিন ক্যাপসুল, একই মালিকের ইস্ট বেঙ্গল ইউনানির ইরুচি, এমভিটন, জালিনুস ক্যাপসুল, ফরিদপুরের জনতা ল্যাবরেটরিজ (আয়ু) এর জিনসিন সিরাপ, হেলদি গোল্ড, পাবনার গ্রেইন প্লাস ইউনানির ইকলিপ শরবত( জিনসিন) জুরাইনের জেনেসিস ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) এর ভার্জিটন, রয়েল ল্যাবরেটরিজ (আয়ু) এর ১০০ মিলি ইরেকটন সিরাপ, রয়েল আমলকি প্লাস,ফেরাপ্লেক্স,ডিউরেটন, টাসফিট ক্যাপসুল, নেক্সট ট্যাবলেট, ডাইজাভিট , চ্যবনপ্রাশ, সুরমা ফার্মাসিউটিক্যালস ইউনানির রুচিরেপ, হিমআপ, আমলাসেফ, সেব এস, আরক পুদিনা (সুরমিনট), সুরোভিট ত্রিফলা সিরাপ, উত্তরা ল্যাবরেটরিজ ইউনানির নিশিজিন (শরবত জিনসিন) লিবিক্যাপ,( হাব্বে নিশাত), জিংগোবা (জিংগো বিলবা), এনজিটি (অশ্বগনধা) আল-রীজ ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) রুচিতাট্যাব ট্যাবলেট, মডার্ন ল্যাবরেটরি ইউনানি হরমোক্স (শরবত জিনসিন) ফিরোলেড সিরাপ, পাবনার রিবার্থ ইউনানির নিলয়া (শরবত জিনসিন), ৩/৪ প্রকার নিগাস (হাব্বে মুমসিক) ট্যাবলেট, ইউনিফিল ল্যাবরেটরি ইউনানি জিনসেং ক্যাপসুল, ন্যাচার ফার্মাসিউটিক্যালস( ইউনানি) এর ইরেক্স প্লাস ক্যাপসুল, (হাব্বে মুমসিক), এন মুনইশ (হাব্বে মুনইশ) রুচিতা এন (শরবত আমলা), জিমি জিনসিন (শরবত জিনসিন) ইন্ডেক্স ল্যাবরেটরিজ (আয়ু) এর ইনজেনসেং (জিনসেং ৫০০ এমজি) ক্যাপসুল, গ্রামীণ ল্যাবরেটরিজ ইউনানির জিনসেল সিরাপ,জি – স্পিড ক্যাপসুল, ডিরেক্স ক্যাপসুল, জি – রেক্স ক্যাপসুল, নিশাত( হাব্বে নিশাত) ক্যাপসুল, ইউনিজেম ফার্মাসিউটিক্যালস ইউনানির ইউনিবার (হাব্বে আম্বার মেমিয়ায়ি) ক্যাপসুল, চুয়াডাঙ্গায় বিডি ফার্মাসিউটিক্যালস ইউনানি কারিও হেলথ নামক রুচি বর্ধক ট্যাবলেট উৎপাদন করে বাজারে ছেড়ে দিয়েছে। এ ছাড়াও শিরিন ল্যাবরেটরি ইউনানি, গুড হেলথ ফার্মাসিউটিক্যালস ইউনানি, ইমা ল্যাবরেটরিজ ইউনানি, জেবিএল ড্রাগস ইউনানি, আল- সাফা ইউনানি, পাইওনিয়ার ইউনানি, গ্রামো ফার্মা ইউনানি সহ প্রায় ২০০ শতাধিক বিতর্কিত ঔষধ কোম্পানির বিতর্কিত ঔষধ তৈরির অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে থাকা সত্ত্বেও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নথি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কোন প্রকার মাথা ব্যাথা নেই। তারা গতানুগতিক ধারায় তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের একটি সুত্রের দাবি, ভোক্তা অধিকার, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং বিএসটিআই এর নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা আছে তারা চাইলেই তাতক্ষনিক জেল জরিমানা করতে পারে। অথচ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা চাইলেই তাতক্ষনিক জেল জরিমানা করতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ের হাত পা আইনের অনুশাসনে বেঁধে দেওয়া হয়। আবার ভালো মনমানুষিকতা নিয়ে ভালো কাজ করতে গেলেও তাদেরকে প্রধান কার্যালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তা কর্তৃক নাজেহাল হতে হয়। ভাবসাবে মনে হয় বিভাগীয় কর্মকর্তারা তার অধীনস্থ বিভাগের ঔষধ কোম্পানি সমুহের ইজারা নিয়েছেন। অন্য কোন এলাকার অফিসার ওই বিভাগের ঔষধ কোম্পানির নমুনা তুলে ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে পাঠাতে গেলে ই বাধে যত বিপত্তি। কিছুদিন পূর্বে বিশেষায়িত এক কোম্পানির একটি বিশেষায়িত ভিটামিন সিরাপে ভিটামিন বি১বি২ বি৬ বি১২ এবং সিএমসি আছে কি না তা পরিক্ষার জন্য ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে পাঠালে সহকারী এনালিস্ট কেবলমাত্র ভিটামিন বি১ বি২ বি৪ বি১২ এর অস্তিত্বে শনাক্ত হয় নাই বলে রিপোর্ট দিলেও কৌশলে সিএমসি’র বিষয়টি একপ্রকার এড়িয়ে যান। আবার কোন কর্মকর্তার নমুনা পরিক্ষার রিপোর্ট ১৫ দিনেও হয় আবার কেউ ৬ মাসেও রিপোর্ট পায় না। এখন আবার নিয়ম করা হয়েছে ইনভয়েস ছাড়া কোন কোম্পানির ঔষধের নমুনা পরিক্ষার জন্য পাঠানো যাবে না। ইনভয়েস ছাড়া কোন ফার্মেসিতে ঔষধ পাওয়া গেলে ওই ফার্মেসির বিরুদ্ধে মামলার বিধান রয়েছে অথচ ইনভয়েসের দোহাই দিয়ে ইউনানি, আয়ুর্বেদিক, হোমিও এবং হারবাল ঔষধের নমুনা তুলে তা ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে পাঠাতে অনেক কর্মকর্তা অনিহা বোধ করছে। আবার কোন কোম্পানির ঔষধ নিম্নমানের বলে রিপোর্ট পাওয়া গেলে ওই কোম্পানির লাইসেন্স সাময়িক বাতিল না করে ২ বা ৫ বছরের জন্য বাতিল করলে ঔষধের নকল ভেজাল অনেকাংশেই কমে আসবে কেউ ই নিম্নমানের ঔষধ তৈরির সাহস পাবে না এসকল বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহল সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নতুন নীতিমালা তৈরি না করা পর্যন্ত ঔষধের নকল ভেজাল বন্ধ করা সম্ভব হবে না বলেও মত প্রকাশ করেন সচেতন মহল।


বিজ্ঞাপন