নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশাল তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে। উদ্বোধন করা হয়েছে স্বপ্নের পায়রা সেতু। আর এই সেতুটি ঘিরে দুই পাড়ে বইছে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস।
গত কয়েক দিন ধরে সেতুর উদ্বোধনের অপেক্ষায় ছিলো দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় অর্ধকোটি মানুষ। সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে রোববার বেলা ১১টা ৫ মিনিটে গণভবন প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি বরিশাল-পটুয়ালী মহাসড়কে পায়রা নদীর ওপর নির্মিত পায়রা সেতুর ফলক উন্মোচন করে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর পায়রা সেতুতে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালী জেলার সর্ব দক্ষিণে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। যা বাংলাদেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। সে সময় খুব বেশি অতীত নয় বরিশাল হতে পটুয়াখালী হয়ে কুয়াকাটায় সড়ক পথে ৬টি ফেরি পার হয়ে চলাচল করতে হতো।
বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে এ রুটে সর্বপ্রথম লাউকাঠি নদীতে পটুয়াখালী সেতু নির্মাণ করা হয়। পর্যায়ক্রমে কীর্তনখােলা নদীর ওপর শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু (দপদপিয়া সেতু), খেপুপাড়ায় আন্ধারমানিক নদীর ওপর শহীদ শেখ কামাল সেতু, হাজীপুরে সোনাতলা নদীর ওপর শহীদ শেখ জামাল সেতু এবং মহিপুরে খাপড়াভাঙ্গা নদীর ওপর শহীদ শেখ রাসেল সেতু নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
বাকি ছিলো শুধুমাত্র এ রুটের খরস্রোতা পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ। এ নদীর ওপর কোনো সেতু না থাকায় পটুয়াখালী তথা কুয়াকাটার সাথে সড়ক যােগাযােগ ছিল প্রকৃত অর্থে অস্বস্তিকর ও সময় সাপেক্ষ।
বিষয়টি অনুধাবন করে বিগত ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ সালে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন।
এরই ফলশ্রুতিতে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে বাংলাদেশ সরকার, ওপেক ফান্ড ও কুয়েত ফান্ডের যৌথ অর্থায়নে পায়রা সেতু (লেবুখালী সেতু) নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পটি বিগত ৮ মে ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় অনুমােদিত হয়।
অতঃপর ১৩ মার্চ ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ১৪৭০ মিটার দীর্ঘ এ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।
ডোসেড ক্যাবল স্টাইলেড প্রযুক্তিতে নির্মিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে সেতুর ক্ষতিগ্রস্ততা নিরূপণ পূর্বক এর স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার জন্য সেতুতে ব্রিজ হেলথ মনিটরিং সিস্টেম চালু করা হচ্ছে যা দেশের ইতিহাসে প্রথম ।
স্থানীয় প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক সুনীল বাড়ৈ বলেন, পায়রা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এখানকার ফেরির রামরাজত্বের অবসান ঘটেছে। এখন অল্প সময়ে বরিশালে যাতায়াত করা যাবে।
রাহিমা নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, কয়েকদিন থেকেই অপেক্ষায় আছি পায়রা সেতুর উদ্বোধনের। উদ্বোধনের কথা শুনে সেতুতে ঘুরতে অনেক আত্মীয়স্বজন বাড়িতে বেড়াতে আসছে।
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, স্বপ্নের পায়রা সেতু উদ্বোধনের ফলে দক্ষিণাঞ্চলের জনসাধারণের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণের পাশাপাশি নিরাপদ, সময়সাশ্রয়ী ও স্বাচ্ছন্দ্যময় সড়ক যােগাযােগের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রসার এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল বলেন, সাগরকন্যা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে দেশি-বিদেশি পর্যটকের সমাগম বৃদ্ধি পাবে যা পর্যটন শিল্পের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এছাড়া এ সেতু দেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর পায়রাকে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি সড়ক নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করবে এবং এ অঞ্চলে শিল্পায়নের প্রসারে ব্যাপক অবদান রাখবে।
পায়রা সেতু নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আব্দুল হালিম বলেন, পায়রা নদীর সর্বোচ্চ জোয়ারেও নদীর উপরিভাগ থেকে ১৮ দশমিক ৩০ মিটার উঁচুতে থাকবে এ সেতু। চার লেন বিশিষ্ট সেতুর উভয় পাশে ১ হাজার ২৬৮ মিটার দৈর্ঘ্যের অ্যাপ্রোচ রোড নির্মিত হয়েছে। বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে পায়রা নদীর ওপর পায়রা সেতু (লেবুখালী সেতু) নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। পায়রা সেতুর দৈঘ্য ১৪৭০ মিটার, মূল সেতুর প্রশস্থতা ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার, মোট স্প্যান বসানো হয়েছে ৩২টি, ৩৩৮টি পাইলের মধ্যে সেতুর মূল পাইল রয়েছে ৫২টি।