মহাসড়ক ঘেঁষে ময়লার ভাগাড়

বিশেষ প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক : দিন নেই, রাত নেই। মহাসড়ক ঘেঁষে বাধাহীন ভাবে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। ফলে উৎকট দুর্গন্ধ সঙ্গী হচ্ছে পথচারী আর যানবাহনের যাত্রীদের। দিনের পর দিন ময়লার স্তুপ বড় হচ্ছে। তবে তা বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেই। উল্টো অভিযোগ আছে, স্থানীয় প্রভাবশালী আর সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করেই ফেলা হচ্ছে এসব ময়লা-আবর্জনা। এ দৃশ্য নবীনগর-চন্দ্রা, আবদুল্লাপুর-বাইপাইল ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের।
মহাসড়কগুলো ঘুরে দেখা যায়, আবদুল্লাপুর-বাইপাইল সড়ক ঘেঁষে আশুলিয়া বাজার, জিরাবো, জামগড়া ও বাইপাইল এলাকায় ফেলা হচ্ছে বাসা-বাড়ি, কল-কারখানা আর বিভিন্ন হাট বাজারের বর্জ্য। এছাড়া ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের হেমায়েতপুর, সাভার, নয়ারহাট এলাকার চিত্রও একই। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা নবীনগর-চন্দ্রা সড়কের। সড়কটির পলাশবাড়ি, শ্রীপুর, চক্রবর্তী আর কবিরপুর এলাকায় গড়ে উঠেছে ময়লার ভাগাড়।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বড়-ছোট যানবাহন দিয়ে প্রতিনিয়ত ময়লা ফেলা হচ্ছে। পরিবেশের তোয়াক্কা না করে খেয়াল খুশি মতো সড়ক ঘেঁষেই ফেলা হচ্ছে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল, কর্কশিট, কার্টন, কাগজ, পলিথিন, বস্তা, ক্লিনিক্যাল বর্জ্য, মৃত পশু, বাসা-বাড়িসহ হোটেল রেস্তোঁরার উচ্ছিষ্ট খাবার। কখনো কখনো ফেলে যাওয়া বর্জ্য এসে পড়ে সড়কের উপর। বৃষ্টি হলে সড়কগুলোতে ভাসতে থাকে নানা ধরনের আবর্জনা।
চক্রবতীতে ময়লা ফেলতে আসা আকবর আলী বলেন, মাসিক চুক্তিতে মহল্লা মহল্লা থেইকা ময়লা তুইলা আইনা এহানে ফেলাই। দিন আর রাত নাই। যহন সময় পাই তহনই ফেলাই।
কেউ বাধা দেয় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশ, মেম্বার-চেয়ারম্যান আর সড়কের লোকগো প্রতিমাসে ট্যাহা দেওয়া লাগে। না দিলে পুলিশ আটকায় ময়লার গাড়ি, সড়কের লোক আইসা জায়গায় বেড়া দেয়। আর চেয়ারম্যান-মেম্বাররা পোলাপাইন পাঠায়ইয়া মাইরধর করে।
সেখানে কথা হয় পথচারী পোশাক শ্রমিক মনির হোসেনের সঙ্গে। তিনি ক্ষোভ নিয়ে বলেন, অবৈধ যানবাহন দিয়ে ময়লা ফেলতে আসে। একটি দুটি নয়, প্রায় ৫০-৬০ গাড়ি ময়লা প্রতিদিন ফেলছে এখানে। পুলিশ আর সড়ক ও জনপথের লোকজন দেখেও না দেখার ভান করে চলে যায়। আবার মাঝে মাঝে ‘ময়লা ফেলা নিষেধ’ এমন সাইনবোর্ড টানিয়ে দায় সারে।
এ সময় দেখা যায় কল্পনা রানী নামে একজনকে। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দুর্গন্ধে নাক চেপে ধরে ছিলেন তিনি। তিনি জানান, সারাক্ষণই আসে উৎকট দুর্গন্ধ। হেঁটে গেলে দম বন্ধ হয়ে আসে। সড়কের পাশের হাঁটার জায়গায় ময়লা ফেলে দখল করে নিয়েছে। ফলে ঝুঁকি নিয়ে মূল সড়ক দিয়েই চলাচল করতে হয়।
এ নিয়ে পরিবেশকর্মী ইমাম হোসেন বলেন, সংশ্লিষ্টদের উদাসিনতা দেখে নিজেরই লজ্জা লাগে। কিভাবে দিনের পর দিন এমন চলতে পারে? ইপিজেড, বিকেএসপিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থাকায় অঞ্চলটিতে বিদেশিদের আনাগোনা বেশি। এছাড়া মহাসড়ক দিয়ে চলাচলের সময় ময়লার ভাগাড় দেখলে যে কারোই দেশ সম্পর্কে বাজে ধারণা সৃষ্টি হবে। তবুও সমাধানে নেই কারো মাথা ব্যথা।
যোগাযোগ করা হলে আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামরুজ্জামান বলেন, ময়লা নিয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। তবে সড়ক ও জনপথ কোনো অভিযোগ দিলে আমি দেখবো।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিবার্হী প্রকোশলী গাউসুল হাসান বলেন, বারবার সতর্ক করলেও কেউ কথা শুনছে না। অনেকবার চেষ্টা করেও সফলতা আসছে না।


বিজ্ঞাপন