ধর্মঘটের ৩য় দিন
নিজস্ব প্রতিবেদক : ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদ এবং ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে সারাদেশে তৃতীয় দিনের মতো চলছে পরিবহন ধর্মঘট। রোববারও রাজধানীর সড়কে সরকারি সংস্থা বিআরটিসি ছাড়া আর কোনো বাসের দেখা মেলেনি। আর এতে পথে পথে যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে।
তবে বিআরটিসির বাসগুলোয় অতিরিক্ত ভিড় থাকায় অনেকে হেঁটেই রওনা দিচ্ছেন নিজ গন্তব্যে।
গণপরিবহন বন্ধের পাশাপাশি অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বিকল্প যানবাহনে গন্তব্যে পৌঁছাতে গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।
এছাড়া, দুরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় পরীক্ষাসহ নানা প্রয়োজনে রাজধানীতে এসে আটকে পড়েছেন অনেকে। এর আগে, সরকার বৃহস্পতিবার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে। এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার অথবা ভাড়া পুনর্র্নিধারণের দাবিতে শুক্রবার ভোর থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতি।
রাজধানী ছাড়াও সারাদেশেই রোববারও বন্ধ ছিল সব ধরনের বাস ও ট্রাক চলাচল।
এদিকে, বরিশালে দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে লঞ্চ ধর্মঘট।
রংপুরে সকাল থেকেই সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের। বন্ধ রয়েছে পণ্য পরিবহনও। রোববারও অনেক যাত্রী বাস টার্মিনালে গিয়ে ফিরে গেছে।
বাস বন্ধ থাকায় রেলস্টেশন ও বিআরটিসি বাস কাউন্টারে ভিড় বেড়েছে। তবে, টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়েছেন অনেকেই।
এছাড়া, উত্তরাঞ্চল থেকে পণ্যবাহী ট্রাক না ছাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা।
এদিকে, বরিশাল নৌবন্দর থেকে রোববারও কোনো লঞ্চ ছেড়ে যায়নি। নৌযানের ভাড়া শতভাগ বৃদ্ধির দাবিতে শনিবার বিকেল থেকে ধর্মঘট শুরু করে লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, সকাল থেকে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার যাত্রী ও সাধারণ মানুষ।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ এবং ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে শনিবার বিকেল থেকে লঞ্চ চালানো বন্ধ রাখায় সদরঘাটে আটকে পড়েছে হাজারো যাত্রী। হঠাৎ লঞ্চ চলাচল বন্ধে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা।
তবে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শনিবার বিকেলের আগে ছেড়ে আসা লঞ্চ রোববার সকালে ঘাটে ভিড়েছে।
কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে কখন রওয়ানা হওয়া যাবে তার নিশ্চয়তা নেই। কবে লঞ্চ চলাচল শুরু হবে জানে না কেউ। তাই সদরঘাটের ওয়েটিং রুমে অপেক্ষায় রয়েছে যাত্রীরা। সড়কপথ বন্ধ তাই নৌপথে নিজের গন্তব্যে পাড়ি জমাতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা।
এদিকে, শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির কারণে লঞ্চ মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেনি কর্তৃপক্ষ।
চিকিৎসার জন্য শনিবার সকালে ঢাকায় আসেন বরিশালের আবদুল্লাহ। ফিরে যেতে দুপুরে আসেন সদরঘাটে। লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পড়েন বিপাকে, শুয়ে পড়েন পন্টুনে।
সদরঘাটে এমন দুর্ভোগে পড়েন হাজারো যাত্রী। বাস বন্ধ থাকায় লঞ্চ বেছে নিয়েও আটকা পড়েন অনেকে। রাত কাটাতে হচ্ছে ঘাটে।
লঞ্চ মালিকরা জানান, নৌরুটে ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলো তারা। বিআইডব্লিউটিএ তাতে সাড়া দেয়নি। তাই সদরঘাট টার্মিনাল থেকে সব লঞ্চ সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
এদিকে, বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক জানান, সাপ্তাহিক ছুটির কারণে লঞ্চ মালিক সমিতির সঙ্গে বৈঠক করতে পারেননি তারা।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় যাত্রীবাহী লঞ্চের ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করেছে লঞ্চ মালিকদের সংগঠন।
এদিকে, ধর্মঘটে বাস বন্ধ থাকায় যাত্রীর চাপ বেড়েছে রেলস্টেশনে। অতিরিক্ত বগি যুক্ত করেও পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও টিকিট সংগ্রহ করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন যাত্রীরা।
করোনার কারণে স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি বন্ধ থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে, বিকল্প ব্যবস্থায় টিকিট দেয়ার কথা জানান তারা।
এদিকে, কমলাপুর রেলস্টেশনে কোনো ট্রেন ঢোকা মাত্রই হুড়মুড় করে উঠছেন যাত্রীরা। ভিড় ঠেলে ওঠা কঠিন, তাই জানালা দিয়েও ঢুকে পড়েছেন অনেকে।
ধর্মঘটের কারণে বাসে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই গন্তব্যের আশপাশের জেলার ওপর দিয়ে যাওয়া কোনো ট্রেন পেলেও উঠে পড়েছেন যাত্রীরা।
তবে, ট্রেন পর্যন্ত পৌঁছাতেও ঝক্কি কম নয়। টিকিটের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে যাত্রীদের।
করোনার কারণে স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি বন্ধ থাকায় বাড়ে সংকট। টিটিদের কাছে থাকা জরিমানার কাগজকেই ব্যবহার করা হয় টিকিটের বিকল্প হিসেবে। যাত্রীচাপ সামাল দিতে সংযোজন করা হয় ৩৫টি অতিরিক্ত বগি।