মুক্তিযোদ্ধারা যে দলেরই হোক তারা সম্মান পাবেন

জাতীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : মুক্তিযোদ্ধারা যে দলেরই হোক না কেন তারা যথার্থ সম্মান পাবেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটি সময় মুক্তিযোদ্ধারা পরিচয় দিতে ভয় পেতেন। সেই মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান নিশ্চিত করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রোববার সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে যুক্ত হয়ে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর যোগদান বাংলাদেশের বিজয় ত্বরান্বিত করেছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অর্জিত স্বাধীনতা কখনো ব্যর্থ হতে পারে না বলে মন্তব্য করে তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। পৃথিবীর কোথাও মুক্তিযুদ্ধের বিজয়গাঁথাকে বিকৃৃত করা না হলেও বাংলাদেশে তা হয়েছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ই আগস্টের হত্যাকা-ের পর ঘাতকচক্র স্বাধীনতার চেতনাকে নস্যাৎ করতে চেয়েছিল।
এর আগে, বীরশ্রেষ্ঠসহ খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের উত্তরাধিকারীদের হাতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সম্মানী চেক ও উপহার তুলে দেন। এছাড়া সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর আট জন সদস্যকে ২০২০-২১ সালের শান্তিকালীন পদক দেয়া হয়।
এর আগে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সকালে ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।
এসময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন।
পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শিখা অনির্বাণের পরিদর্শন বইয়ে সাক্ষর করেন। এর আগে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে শিখা অনির্বাণে স্বাগত জানান তিন বাহিনীর প্রধান ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার।
এরপর সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল এবং বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান। এরপর তিন বাহিনীর প্রধানরা সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেন।
দেশের সব সেনানিবাস, নৌ ও বিমান বাহিনী ঘাঁটির মসজিদে ফজরের নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিনের কর্মসূচি।
সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণী দিয়েছেন।
রোববার ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ উপলক্ষে শনিবার দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছেন। এভাবে জাতির আস্থার প্রতীক হিসেবে গড়ে উঠেছে তারা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর একটি বিশেষ গৌরবময় দিন। আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অকুতোভয় সদস্যরা এ দিনে সম্মিলিতভাবে দখলদার বাহিনীকে পাল্টা আক্রমণ করেন। মুক্তিবাহিনী, বিভিন্ন আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যগণ ও দেশপ্রেমিক জনতা এই সমন্বিত আক্রমণে একতাবদ্ধ হন। দখলদার বাহিনী আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে ১৬ ডিসেম্বর আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি। ’
মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির অগ্রযাত্রা ও বিজয়ের স্মারক হিসেবে প্রতি বছর ২১ নভেম্বর ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ পালন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সব সদস্যকে দিবসটি উপলক্ষে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে এ দিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সব বীর শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং মাতৃভূমির জন্য জীবন উৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর সকল শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী, সাহসী এবং ঐন্দ্রজালিক নেতৃত্বে ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম ও ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মহান স্বাধীনতা অর্জন করে। জাতির পিতা স্বাধীনতার পর একটি আধুনিক ও চৌকস সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। সেনাবাহিনীর জন্য তিনি মিলিটারি একাডেমি, কম্বাইন্ড আর্মড স্কুল ও প্রতিটি কোরের জন্য ট্রেনিং স্কুলসহ আরও অনেক সামরিক প্রতিষ্ঠান এবং ইউনিট গঠন করেন। তিনি চট্টগ্রামে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ঘাঁটি ঈসা খাঁ উদ্বোধন করেন। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৎকালীন যুগোশ্লোভিয়া থেকে নৌবাহিনীর জন্য দুটি জাহাজ সংগ্রহ করা হয়। বিমান বাহিনীর জন্য তিনি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে সুপারসনিক মিগ-২১ জঙ্গি বিমানসহ হেলিকপ্টার, পরিবহন বিমান ও রাডার সংগ্রহ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা সেনা, নৌ এবং বিমান বাহিনীকে দেশে ও বিদেশে উন্নততর প্রশিক্ষণ প্রদানসহ আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করছি।
জাতির পিতার নির্দেশে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের উপযোগী ১৯৭৪ সালে প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতিমালার আলোকে ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এর আওতায় তিন বাহিনীর পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নের কার্যক্রমসমূহ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে।
তিনি আশা করেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশপ্রেম, পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাবেন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন।
প্রধানমন্ত্রী ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০২১’- এ গৃহীত সব কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।


বিজ্ঞাপন