তাপস চন্দ্র সরকার, (কুমিল্লা) : বিচার বিভাগের জন্য সুপ্রীমকোর্টের অধীন পৃথক সচিবালয় করাসহ নানাহ দাবীতে সারাদেশের ন্যায় বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী এসোসিয়েশন, কুমিল্লা জেলা শাখার আয়োজনে কর্মবিরতি পালিত হয়। সোমবার (৫ মে ২০২৫) সকাল সাড়ে ৯টা হতে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দুইঘন্টা কুমিল্লা আদালত প্রাঙ্গণে এ কর্মবিরতি পালিত হয়।

দাবি আদায়ের উদ্দেশ্য বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী এসোসিয়েশন কুমিল্লা জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নায়েব নাজির বিল্লাল হোসেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল এর বেঞ্চ সহকারী আব্দুল মতিন, বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী এসোসিয়েশন কুমিল্লা জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান ও মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ, জেলাজজ আদালতের স্টেনোগ্রাফার মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী এসোসিয়েশন কুমিল্লা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম, বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী এসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান, বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী এসোসিয়েশন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি ও সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম এর সদস্য মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন প্রমুখ। এতে সমাপনী ও দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন- কুমিল্লা জেলা জজ আদালতের নাজির জনাব মোঃ মুমিনুল ইসলাম।

এ সময় বক্তারা বলেন- বিচার বিভাগের জন্য সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় করে অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিচার বিভাগের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের আলোকে বেতনভাতা প্রদান এবং বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের অধীনে অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বিদ্যমান ব্লকপদ বিলুপ্ত করে যুগোপযোগী পদ সৃজনপূর্বক যোগ্যতা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতির সুযোগ রেখে স্বতন্ত্র নিয়োগবিধি প্রণয়ন করতে হবে।

বক্তারা আরও বলেন- ২০০৭ সালের ১লা নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হয়। বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর শুধু বিচারকগণের জন্য ৬টি গ্রেড রেখে পৃথক পে-স্কেলসহ নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়ন করা হলেও সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে ওই পে-স্কেলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
জুডিসিয়াল সার্ভিস পে-স্কেলের আলোকে বিচারকগণের বেতন-ভাতাদি প্রদেয় হলেও আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ বিচারকগণের সঙ্গে একই দপ্তরে কাজ করা সত্ত্বেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বেতন স্কেলের আলোকে বেতন-ভাতাদি পেয়ে থাকেন।
বিচারকগণের জন্য বিচারিক ভাতা, চৌকি ভাতা, দেওয়ানি আদালতের অবকাশকালীন ছুটি (ডিসেম্বর মাস) ফৌজদারি আদালতে দায়িত্ব পালনের জন্য এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অবকাশ ভাতা প্রদানের বিধান থাকলেও বিচার সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে অনুরূপ কোনো ভাতা প্রদান করা হয় না। এক কথায় বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পর বিচারকগণের জন্য যেসব সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে, বিপরীতে বঞ্চিত করা হয়েছে সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে।
এছাড়াও অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে বিচারক ব্যতিত আর কোনো প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদার পদ নেই। দ্বিতীয় শ্রেণির পদও খুবই নগণ্য। প্রতিটি জেলা জজশীপে উপজেলা ভিত্তিক আদালত থাকা সত্ত্বেও মাত্র ২টি করে দ্বিতীয় শ্রেণির (প্রশাসনিক কর্মকর্তা) পদ রয়েছে।
তাছাড়াও অন্যান্য দপ্তরে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে পদোন্নতির জন্য যেখানে ৫ থেকে ৭ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতায় পদোন্নতির সুযোগ আছে। সেখানে অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের কর্মচারীগণকে উক্ত পদের জন্য ২০/২২ বছর অপেক্ষা করতে হয়।
একটি জেলাতে জেলা জজ (১ম গ্রেডের) সর্বোচ্চ পদমর্যাদার কর্মকর্তা হলেও একমাত্র প্রশাসনিক কর্মকর্তা (১০ম গ্রেড) ব্যতিত অধীনন্ত সকলেই ১৩তম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারী।
পদোন্নতির ধারা উন্মোচনসহ নতুন পদ সৃজন না করায় অধিকাংশ কর্মচারীগণের পদোন্নতির সুযোগ একেবারেই রুদ্ধ। অনেক কর্মচারী পদোন্নতি ছাড়াই আক্ষেপ ও হতাশা নিয়ে একই পদে ৩৮/৪০ বছর চাকরি করেও পদোন্নতি বঞ্চিত থেকে অবসরে যাচ্ছেন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
সবশেষে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিচার বিভাগের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্বতন্ত্র নিয়োগবিধিসহ বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের বিদ্যমান ১ম থেকে ৬ষ্ঠ গ্রেডের পরবর্তী ৭ম থেকে ১২তম গ্রেডভুক্ত করে দীর্ঘদিনের বৈষম্য নিরসনের দাবি জানান বক্তারা।