নিজস্ব প্রতিবেদক : ১৯৮৯ সালে প্রথমবারের মতো দেশে এইচআইভি এইডস ভাইরাসে সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। বর্তমানে দেশে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি। এদের মধ্যে চিকিৎসার আওতায় এসেছে ৮ হাজার ৭৬১ জন। দেশে নতুনভাবে এইচআইভি এইডস শনাক্ত হয়েছে ৭২৯ জনের শরীরে। এরমধ্যে ৭৬ শতাংশ পুরুষ ও নারী ২২ শতাংশ ও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী দুই শতাংশ। এ বছর ১৮৮ জন রোহিঙ্গার শরীরে এইডসের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এছাড়া গত এক বছরে ২০৫ জন এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি মারা গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের জাতীয় এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল (এনএএসসি) প্রোগ্রামের তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ১২ লাখ ৯১ হাজার ৬৯ জনের এইচআইভি এইডস শনাক্তকরণ পরীক্ষা হয়েছে। এর মাঝে দেশে গত ১ বছরে মোট এইচআইভি টেস্ট হয়েছে ৬ লাখ ২৮ হাজার ৩১২ জনের। এছাড়া ব্লাড স্ক্রিনিং করা হয়েছে আরও ৬ লাখ ৬২ হাজার ৭৫৭ জনের।
২০২০ সালে এ সংখ্যা ছিল প্রায় ১৩ লাখ ৩২ হাজার ৫৮৯।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে নতুনভাবে সংক্রমিত ৭২৯ জনের মধ্যে পুরুষ ৪২০ জন, নারী ২১০ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী ১২ জন। নতুনভাবে যাদের শরীরে এইডস সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে তাদের মধ্যে ২৬ শতাংশ (১৮৬ জন) সাধারণ জনগণ। এছাড়া দেশের বাইরে থেকে আসা ২০ শতাংশের (১৪৪ জন) মাঝে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ইনজেকশনের মাধ্যমে শিরায় মাদক গ্রহণকারী ৬১ জন (৮%), নারী যৌনকর্মী ১৭ জন (২%), সমকামী ৬৭ জন (৯%), পুরুষ যৌনকর্মী ৫৩ জন (৭%) ও ট্রান্সজেন্ডার ১৩ জনের (২%) মাঝে নতুনভাবে এইচআইভি ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
এনএএসসি প্রোগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, নতুনভাবে শনাক্তকৃতদের মাঝে ৬৩ শতাংশ তাদের শরীরের সংক্রমণের বিষয়ে জানে। এর মধ্যে ৭৭ শতাংশ চিকিৎসার আওতায় এসেছে। যারা চিকিৎসার আওতায় এসেছে তাদের মধ্যে ৯৩ শতাংশের ভাইরাসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হয়েছে।
‘৯৫-৯৫-৯৫ লক্ষ্যমাত্রা’ অর্জনের ক্ষেত্রে চলতি বছরের পরিসংখ্যান বিগত বছরগুলোর তুলনায় ভালো। ২০১৮ সালে দেশে ৫০ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৫২ শতাংশ এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ২০২০ সালে ৫৭ শতাংশের এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত করা হলেও ২০২১ সালে ৬৩ শতাংশের মাঝে এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়।
এনএএসসির তথ্য অনুযায়ী, ‘৯৫-৯৫-৯৫ লক্ষ্যমাত্রা’ অর্জনের ক্ষেত্রে ২০১৮ সালে ৬০ শতাংশ ও ২০১৯ সালে ৬৫ শতাংশ এইচআইভি এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসার আওতায় আনা হয়। ২০২০ সালে ৭৬ শতাংশ ও ২০২১ সালে ৭৭ শতাংশ এইচআইভি ভাইরাসে সংক্রমিতদের চিকিৎসার আওতায় আনা হয়। ২০১৯ সালে ৮৫ শতাংশের মাঝে ভাইরাসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছিল। ২০২০ সালে ৮৮ ও ২০২১ সালে ৯৩ শতাংশের মাঝে ভাইরাসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে।
দেশে বর্তমানে এইচআইভি এইডস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি জানিয়ে প্রতিবেদনে জানানো হয়, চিকিৎসার আওতায় এসেছে মাত্র আট হাজার ৭৬১ জন। দেশে এ রোগে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১ হাজার ৫৮৮ জন।
নতুন আক্রান্তদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সসীমায় এইচআইভি সংক্রমণের মাত্রা বেশি পাওয়া গেছে। দেশে চলতি বছরে শনাক্ত হওয়া এইচআইভি পজিটিভ রোগীর মধ্যে বিবাহিতরাই সবচেয়ে বেশি। এদের সংখ্যা ৬০ দশমিক ৪৪ শতাংশ। অবিবাহিতদের সংখ্যা ২৯ দশমিক ২১ শতাংশ।
বাংলাদেশে চলতি বছর এইচআইভি পজিটিভ ৫৩ জন গর্ভবতী নারী সন্তান প্রসব করেছেন। নবজাতকদের ৪৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা এইচআইভি এইডস ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যায়নি। দেশে পিএমটিসিটি প্রোগ্রামের আওতায় এক লাখ ৯ হাজার ৮৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
সামগ্রিক বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ও টিবি-লেপ্রোসী ও এইডস/এসটিডি প্রোগামের লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. খুরশীদ আলম বলেন, গত ১ বছরে আক্রান্ত ৭২৯ জনের মধ্যে চিকিৎসা সেবার (এন্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি) আওতায় এসেছেন ৬৪২ জন। এইচআইভি টেস্টিং এবং চিকিৎসা (অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল ড্রাগ) সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দিচ্ছে সরকার। দেশব্যাপী ১১টি সরকারি হাসপাতাল থেকে এইডস আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা (এআরভি) পাচ্ছেন। এছাড়া দেশব্যাপী ২৮টি সরকারি হাসপাতালের এইচআইভি টেস্টিং সেন্টার থেকে বিনামূল্যে এইচআইভি টেস্ট করা হচ্ছে। এসব এইচআইভি টেস্টিং সেন্টারে যেকোনো ব্যক্তি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এইচআইভি টেস্ট করতে পারেন।
তিনি বলেন, দেশে সম্ভাব্য এইচআইভি আক্রান্ত ১৪ হাজার ব্যক্তির মধ্যে ৬৩ শতাংশ তাদের এইচআইভি স্ট্যাটাস জানেন। যারা তাদের এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানেন তাদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ চিকিৎসাসেবার (এআরটি) আওতায় আছেন। যারা চিকিৎসা (অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি) নিচ্ছেন তাদের ৯৩ শতাংশের ভাইরাল লোড নিয়ন্ত্রণে আছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ পিএমটিসিটি কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে। এছাড়া শিরায় মাদক গ্রহণকারী, নারী যৌনকর্মী, পুরুষ যৌনকর্মী/হিজড়াসহ সকল ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সমন্বয়ে দেশব্যাপী ড্রপ-ইন-সেন্টারের (ডিআইসি) মাধ্যমে এইচআইভি প্রতিরোধে কার্যক্রম চলমান রেখেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের জাতীয় এইডস/এসটিডি প্রোগ্রাম।
ডা. খুরশিদ বলেন, টিভিসি, ডকুমেন্টারিসহ অন্যান্য কার্যক্রমের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার কাজ চলমান আছে। পুলিশ ও কারাগারে এইচআইভি টেস্টিং কার্যক্রম অচিরেই শুরু হচ্ছে। ভবিষ্যতে এইচআইভি টেস্টিং কার্যক্রম সকল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সকল সদর হাসপাতালে সম্প্রসারণ করা হবে। একইসঙ্গে বিদেশফেরত প্রবাসীদের এইচআইভি টেস্টিংয়ের আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া হবে।