বড়লোকের বাজার

Uncategorized

হাতিরপুল


বিজ্ঞাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক : স্থানীয়দের কাছে হাতিরপুল বাজারের আরেক নাম ‘বড়লোকের বাজার’। ধনীরাই নাকি এখানে বাজার করতে আসেন। এ বাজারের অধিকাংশ পণ্যের দাম ঢাকার যে কোনও বাজারের চেয়ে বেশি। প্রায় সব পণ্যেই কেজিতে ১০-২০ টাকা বেশি নেন বিক্রেতারা। এমনকি কোনও পণ্য কেজিতে ৪০ টাকা বাড়তি দাম দিয়েও কিনতে দেখা গেছে। অথচ সরকারের খাতায় এই বাজারের অস্তিত্বই নেই। সিটি করপোরেশনের অনুমোদন ছাড়াই ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে বাজারটি।
হাতেগোনা কয়েকজন বিক্রেতা আছেন এই বাজারে। তাদের একজন খলিলুর রহমান। সবজি বিক্রি করেন তিনি। জানালেন, এই বাজারের কিছু বিশেষত্ব আছে। প্রথমত, এখানকার পণ্যের কোয়ালিটি ভালো। দ্বিতীয়ত, এখানে সব ধরনের পণ্য পাওয়া যায়। যারা আসেন তাদের অধিকাংশই ধনী। তিনি আরও বলেন, দাম বেশি জেনেই এখানে ক্রেতারা আসেন। তারা এখানকার নিয়মিত খদ্দের। এমনও ক্রেতা আছেন, যিনি মিরপুর থেকে গাড়ি নিয়ে এখানে আসেন বাজার করতে।
কারণ জানতে চাইলে খলিলুর জানান, অন্যান্য বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা কাওরানবাজারের পাইকারদের কাছ থেকে সকালে পণ্য কেনে। কিন্তু হাতিরপুল বাজারের ব্যবসায়ীরা একটু বেশি দাম দিয়ে রাত ৩টার আগেই বাছাই করে ভালো পণ্য নিয়ে আসে। অন্যান্য বাজারের চেয়ে সবজির কেজিতে ১০-২০ বা কখনও ৩০-৪০ টাকা বেশিতে বিক্রি করলেও লাভ তুলনামূলক কম।
তার দাবি, আড়ত থেকে বাছাই করে পণ্য কিনতে গেলে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি দিতে হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এ বাজারের নিয়মিত ক্রেতা। গ্রিনরোডসহ আশপাশের বাসিন্দারাও আসেন নিয়মিত। এমনকি গুলশান, বনানী থেকেও আসেন অনেকে।
প্রসঙ্গত, রাজধানীর অন্যান্য বাজারে যেখানে অধিকাংশ সবজি এখন ৫০ থেকে ৬০ টাকা, হাতিরপুল বাজারে সেটা ৮০ টাকার নিচে পাওয়া যাবে না। অন্য বাজারে পাকা টমেটোর দাম নেমে এসেছে ৭০-৮০ টাকায়। হাতিরপুল বাজারে এখনও বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায়। বরবটি ও গাজরও বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজিতে।
এক সবজি বিক্রেতার সহকারী আজিম উদ্দিন বললেন, এখানে ১০০ টাকার বেশি দামে তিন থেকে চার ধরনের সবজি বিক্রি হয়। ৯০ টাকায় বিক্রি হয় চার-পাঁচ রকম সবজি। বাকিসব গড়ে ৮০ টাকায়। অন্যান্য বাজারে ফুলকপি এখন ৩০-৪০ টাকা হলেও হাতিরপুল বাজারে সেটা ৫০ টাকা।
গ্রিনরোডের আবদুস সামাদ জানালেন, হাতিরপুল বাজারে টাটকা সবজি পাওয়া যায়। এ কারণে দাম বেশি জেনেও তিনি নিয়মিত আসেন।
মাছের বাজারে দেখা যায়, সব মাছের দাম তুলনামূলক বেশি। আর সেই বেশির পরিমাণটা নিদেনপক্ষে ১০০ টাকা। কিছু মাছে কেজিতে ২০০ টাকাও বেশি রাখছেন বিক্রেতারা। কারণ উল্লেখ করে রহমান আফিজ নামের এক মাছ বিক্রেতা বললেন, ‘এখানে টাকাওয়ালারা আসে মাছ কিনতে। বেশি দামে কেনা নিয়মিত ক্রেতারাই আসেন। এটা সবার জানা হয়ে গেছে যে নদী ও সাগরের ভালো মাছ এ বাজারে পাওয়া যায়।’
এই বাজারে গরুর মাংসের দাম অবশ্য ৬০০ টাকা। তবে মাংস ব্যবসায়ীদের দাবি, এখানকার মাংস অন্য যে কোনও বাজারের চেয়ে ভালো।
হাতিরপুল বাজারে প্রথম দফায় সকাল ৮টা থেকে ১২টা এবং রাত আটটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত বেচাকেনা চলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘দোকান ভাড়ার চেয়েও এখানে দিনে মাসোহারা বেশি দিতে হয়। যার কারণে কম দামে সবজি বেচা সম্ভব হয় না।’
পাশেই আছে কয়েকটি ফলের দোকান। সেখানেও যথারীতি দাম বেশি। ফল ব্যবসায়ীরা বলছেন, কম দামে ফল বিক্রির সুযোগ নেই। ক্রেতারা ভালোমানের ফল কিনতে পারছে। এখানে ১২ মাসই সব ধরনের ফল পাওয়া যায়।
এ প্রসঙ্গে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, পণ্যের গুণগত মান, দোকান ভাড়া ও পরিবহন খরচসহ বিভিন্ন কারণে সবজির দাম কম-বেশি হতে পারে। তবে বিক্রেতাদের অতিরিক্ত মুনাফার লোভ এবং সরকারি সংস্থার সঠিক মনিটরিংয়ের অভাবে অনেক সময় দামে হেরফের হয়।
এদিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচা, মালিবাগ, মগবাজার, গোপীবাগ ও মানিকনগর এলাকার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখনও বেশিরভাগ সবজি বিক্রি হচ্ছে গড়ে ৫০ টাকায়। বাধাকপি ৪০ টাকা ও ফুলকপি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেগুন ৫০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, গাজর ৮০-৯০ টাকা, করলা ৬০, মুলা ৩০, শসা ৪০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৫০, পেঁপে ৩০, শালগম ৫০, নতুন আলু ৪০, টমেটো ১২০, সিম ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়াও লাউ প্রতি পিস ৫০-৬০ টাকা ও এক হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। এদিকে ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায়। সোনালি মুরগির দাম এখন আকারভেদে ২৫০-২৭০ টাকা। লাল লেয়ার মুরগি আগের মতোই ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নতুন আলুর কেজি গত সপ্তাহের চেয়ে ১০ টাকা কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। পুরান আলু ৩০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৫ টাকা।