নিজস্ব প্রতিনিধি : রাজধানীর মিরপুর পলাশ নগরে ফেম ল্যাবরেটরীজ (আয়ু) এর কারখানায় ঔষধ তৈরির নামে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যাবহার করার এক গুরতর অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ অনুযায়ী ফেম ল্যাবরেটরীজ (আয়ু) এর বর্তমান মালিক ওবায়দুর রহমান কোন প্রকার হেকিম বা কবিরাজ না আয়ুর্বেদিক সিস্টেমের উপর তার কোন ডিগ্রি ও নেই।
তিনি ফেম ল্যাবরেটরীজ (আয়ু) এর পূর্বের মালিক খায়রুল বাশারের নিকট থেকে কোম্পানি টি ক্রয় করে বনে গেছেন স্বনাম ধন্য আয়ুর্বেদিক ঔষধ কোম্পানির গর্বীত মালিক।
এইতো সেদিনের কথা শেড ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) এর ম্যানেজার মার্কেটিং হিসেবে শেড ফার্মাসিউটিক্যাল (আয়ু) চাকুরী করেছেন মাত্র ৩ (তিন) বছর।
৩ বছর চাকুরী করা কালীন সময়ে শেড ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) এর মালিকের অগোচরেই কোম্পানির অর্থ নয়ছয় করে শেড ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু)র বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাত করে চাকুরী ছেড়ে দেন। তার কারনে শেড ফার্মাসিউটিক্যালস (আয়ু) এর কর্তৃপক্ষ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অপরদিকে সুচতুর ওবায়দুর রাতারাতি প্রায় অর্ধ কোটি টাকার বিনিময়ে ফেম ল্যাবরেটরীজ (আয়ু) এর লাইসেন্স খরিদ করে কারখানাটি শেওড়াপাড়ার জামতলা মসজিদ এলাকা থেকে মিরপুর পলাশ নগরে স্থানান্তরিত করে শুরু করেন ঔষধ তৈরির নামে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কেমিক্যাল যুক্ত ভেজাল ঔষধ তৈরি ও বাজারজাত ।
ফেম ল্যাবরেটরীজ ( আয়ূ) এর উৎপাদন লাইসেন্স নাম্বার আয়ু-১৪২, উক্ত কোম্পানির অনুমোদিত পদের সংখ্যা মাত্র ১৯ টি, এ তথ্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা।
উক্ত কোম্পানির অনুমোদিত পদের তালিকা ২১/১২/২০১৪ সালে তৈরি করা, তবে নতুন কোন ঔষধের অনুমোদন ফেম ল্যাবরেটরীজ (আয়ু) কর্তৃপক্ষ নিয়েছেন কিনা সে বিষয় কিছু জানা যায়নি।
ঔষধ ব্যাবসায়ীদের একটি সুত্রের দাবি ফেম ল্যাবরেটরীজ (আয়ু) এর অনুমোদিত ১৯ টি ঔষধের মধ্যে ফেম ভিট ( বলারিস্ট) ৪৫০ এম.এল সিরাপ, জাইফেম ( জিরাকারিস্ট) ৪৫০ এম.এল সিরাপ, বিলিভ ( আরগ্য বর্ধনি) ক্যাপসুল ৩০ টির পট,স্টিমু-৫ (যৌবন শতদল) ২৫০ এম.জি ক্যাপসুল ৩০ টির পট, রিজুভেনা (নিমবাদ্য চুর্ণ) প্রাকৃতিক এন্টি অক্সিডেন্ট ও ত্বক সুরক্ষা কারি ৩০টি ক্যাপসুল এর পট, লিউকোফেম (পত্রাঙসব) ১০০ এম. এল সিরাপ, অমৃতা (অমৃতারিস্ট) ৪৫০ এম. এল সিরাপ, বি-টিউন (সারিবাদ্যরিস্ট) ১০০ এম.এল সিরাপ, মেলপ্লাস (সঞ্জীবনি রসায়ন) শারিরীক শক্তির উৎস ৪৫০ এম.এল সিরাপ, ডায়াহারব ( বহুমুত্রক রস) ৩০ টি ক্যাপসুলের পট, ডিসেনজি (কুটজারিস্ট) ১০০ এম.এল সিরাপ, আমলা ফেম (আমলকি রসায়ন) ৪৫০ এম.এল সিরাপ, ব্রেথ ইজি ৫০০ এম.জি ক্যাপসুল যা হাপানি, এজমা ও শ্বাস তন্ত্রের প্রমোশক। ব্রেথ ইজি ক্যাপসুল এর নাম ২১/১২/২০১৪ এর তালিকায় উল্লেখ নাই যা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কর্তৃক তৈরিকৃত।
একটি সুত্র জানায়, ফেম ল্যাবরেটরীজ (আয়ু) এর উৎপাদিত ভিটামিন সিরাপ, ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল পাইকারী ব্যবসায়ীদের নিকট অনেক কম মুল্যে বিপনন করা হয় ফলে ফেম ল্যাবরেটরীজ (আয়ু) এর ভিটামিন সিরাপ, ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল ঔষধের পাইকারি ও খুচরা ফার্মেসীতে মুড়ি -মুড়কির মতো বিক্রি হচ্ছে।
সচেতন মহল এর দাবি ফেম ল্যাবরেটরীজ (আয়ু) এর উৎপাদিত যৌন উত্তেজক এবং ভিটামিন সিরাপ, ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল উক্ত কোম্পানির কারখানা বা বাজার থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরিক্ষার জন্য প্রেরণ করা হলে উক্ত কোম্পানির নিম্নমানের ঔষধ তৈরির বিষয় টা নিশ্চিত হওয়া যাবে।
ফেম ল্যাবরেটরীজ (আয়ু) এর বিষয়ে মিরপুরের দায়িত্বশীল ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মওদুদ আহমেদ কে অবগত করলে তিনি জানান, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের জনবল ও পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না থাকা সত্ত্বেও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা প্রানপন কাজ করে যাচ্ছে। ফেম ল্যাবরেটরীজ (আয়ু) এর কারখানা পরিদর্শন করে উক্ত কোম্পানির ঔষধের নমুনা পরিক্ষার জন্য ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে প্রেরণ করা হবে।
উক্ত কোম্পানির নথি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম এর সাথে কথা বললে তিনিও জানান, ফেম ল্যাবরেটরীজ (আয়ু) এর কারখানা পরিদর্শন ও উক্ত কোম্পানির ঔষধের নমুনা পরিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন এবং উক্ত বিষয়ে মওদুদ আহমেদ এর সাথে কথা বলবেন বলেও সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে বলেন।
ফেম ল্যাবরেটরীজ (আয়ু) এর মালিকের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বেপরোয়া ব্যবহার করেন এবং বলেন তার কারখানায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কোন কর্মকর্তার প্রবেশ করতে হলে তার অনুমতি ব্যাতিত প্রবেশ করতে পারবে না, নমুনা সংগ্রহ বা পরিক্ষা তো দুরের কথা! তিনি কি বানের জলে ভেসে এসেছেন? তাছাড়া সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে দেখে নেওয়ার ও হুমকি প্রদান করেন।