ডিজেলের দাম বাড়ায় কৃষকের গুণতে হচ্ছে বাড়তি খরচ

বিশেষ প্রতিবেদন

ধান আমাদের দেশের জন্য যা প্রয়োজন, তার থেকে বেশি পরিমাণে উৎপাদন হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমরা কৃষককে পরামর্শ দিচ্ছি কিছু পানি সাশ্রয়ী ফসল আবাদের জন্য।
মো. সামসুল ওয়াদুদ
উপ-পরিচালক, নওগাঁর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর


বিজ্ঞাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক : আমন ঘরে তোলার পর নওগাঁর বরেন্দ্র মাঠগুলোতে চলছে বোরো ধান রোপণের প্রস্তুতি। কৃষকরা বলছেন, অতিরিক্ত খরচের বোঝা নিয়ে নামতে হচ্ছে জমিতে। ডিজেলের দাম বাড়ায় জেলার কৃষকদের প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা বাড়তি খরচ গুণতে হবে।
চাষিদের কর্মব্যস্ততায় সরব এখন বরেন্দ্রের মাঠগুলো। ধান চাষাবাদে এ অঞ্চলে বেড়েছে যান্ত্রিক মেশিনের ব্যবহার। পাওয়ার টিলারে মুহূর্তেই জমি প্রস্তত হলেও কৃষকের বাড়তি দুশ্চিন্তা ডিজেলের বাড়তি দর। কৃষকের ধানের উৎপাদন খরচ প্রতিবছরই বাড়ছে। গত মৌসুমে বোরো ধানের কেজি প্রতি উৎপাদন খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ টাকা। আর মণ প্রতি ধান উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয় ১ হাজার ৮০ টাকা। এবার সেচের খরচ বেড়ে যাওয়ায় আরেক দফা বাড়তি খরচের বোঝা কৃষকের ঘাড়ে।
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসাবে, বিঘা প্রতি সেচ ও চাষ দিতে ২০ লিটার ডিজেল দরকার পড়ে। লিটারের ডিজেলের মূল্য ১৫ টাকা বৃদ্ধিতে চলতি বোরো মৌসুমে বিঘে প্রতি কৃষকে অতিরিক্ত গুণতে হবে ৩০০ টাকা।
বাড়তি খরচ নিয়ে কৃষকরা জানিয়েছেন, আগে ৫ থেকে ৬ বিঘায় কাজ করতাম। বর্তমানে ৩ থেকে ৪ বিঘায় কাজ করতে আমরা হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি। এর খরচ অনেক বেশি হয়ে গেছে। ওষুধ, সার, ফসফরাস, তেল, পাম্প, হাল চাষ, কীটনাশক, লেবারের দাম বেশি। পটাশ ছিল ৭০০ টাকা বস্তা। সেটি এখন ৯০০ টাকা বস্তা। এগুলোর কারণে আমরা কুলিয়ে উঠতে পারছি না। বিঘা প্রতি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ পড়বে। এদিকে ধানের দাম তো বাড়ে নি। ধানের দাম যেটা সেটাই আছে। দুই বছর আগে ধান ছিল ১ হাজার টাকা মণ। বর্তমানেও তা ১ হাজার টাকা মণ।
জ্বালানি তেলের বাড়তি দরের সাথে উৎপাদিত ফসলের দাম নিশ্চিত করা না গেলে কৃষিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে মন্তব্য কৃষক নেতাদের। নওগাঁ জেলার বাসদ আহ্বায়ক মো. জয়নাল আবেদিন মুকুল বলেছেন, শতকরা ২৩ টাকা বেড়ে যাবে আর কি। কৃষিতে এর প্রভাবটি সরাসরি পড়বে। আমাদের দেশে প্রায় ৪০ লাখ মেট্রিক টন ডিজিলের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে ১৯ শতাংশ আমরা কৃষিতে ব্যবহার করি। আমরা ডিপ টিউবওয়েল, স্যালো টিউবওয়েল ও পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ করি। সেক্ষেত্রে জমির চাষে ও সেচে খরচ বাড়বে। এতে বিঘা প্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বাড়বে।
এবিষয়ে সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্টের কেন্দ্রিয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওয়াজেদ পারভেজ জানিয়েছেন, গত বছর ডিপ এবং স্যালো ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা বিঘা প্রতি সেচ করত, এবছর তা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করেছে। এদিকে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাশাপাশি এ বোরো মৌসুমে আবার প্রাকৃতিক বির্পযয় যেমন- শিলা বৃষ্টি ও ঝড় হতে পারে। একদিকে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে কৃষকের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে প্রাকৃতিক বির্পযয়ের আশঙ্কা থাকার কারণে তারা লোকসানের সম্মুখীন হতে পারে। পাশাপাশি কৃষক ন্যায্য মূল্যে থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এ অবস্থায় কৃষকদের খরচ সাশ্রয়ী ফসল চাষাবাদের পরামর্শ কৃষি বিভাগের। নওগাঁর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সামসুল ওয়াদুদ বলেছেন, ধান আমাদের দেশের জন্য যা প্রয়োজন, তার থেকে বেশি পরিমাণে উৎপাদন হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমরা কৃষককে পরামর্শ দিচ্ছি কিছু পানি সাশ্রয়ী ফসল আবাদের জন্য।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৮৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিঘা প্রতি অতিরিক্ত ৩০০ টাকা হিসাবে জেলার কৃষকদের প্রায় ৪৮ কোটি টাকা বাড়তি খরচ গুণতে হবে।