‘গত একমাস ধরে অভিযান পরিচালনা করেছি। একই অপরাধ বারবার করায় ২৫টি বাস কোম্পানির রুট পারমিট বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।’
মো. সরওয়ার আলম, পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট), বিআরটিএ
নিজস্ব প্রতিবেদক : গণপরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধির পর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। কিন্তু ভাড়া নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত অভিযান মাস না পেরোতেই বন্ধ করে দেয় সংস্থাটি। এতে ফের নৈরাজ্য শুরু হয়েছে গণপরিবহন খাতে। নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।
বিআরটিএ সূত্র জানিয়েছে, ভাড়া-নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণে ঢাকা ও চট্টগ্রামে গত ৮ অক্টোবর থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে ঢাকা মহানগরে এক হাজার ৪০৮টি বাসকে ৫৭ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি একই অপরাধ বারবার করায় ২৫টি বাস কোম্পানির রুট পারমিট বাতিলের সুপারিশ করেছে বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা।
এ ছাড়া অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, রুট পারমিট না থাকাসহ নানা অপরাধে ৫৬টি বাসকে পাঠানো হয়েছে ডাম্পিংয়ে। পাঁচজন বাসচালককে বেপরোয়া গাড়ি চালানো ও সরকারি দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ায় দেওয়া হয়েছে কারাদ-। তবে এখন বন্ধ আছে অভিযান।
বিআরটিএ পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মো. সরওয়ার আলম বলেন, ‘গত একমাস ধরে অভিযান পরিচালনা করেছি। একই অপরাধ বারবার করায় ২৫টি বাস কোম্পানির রুট পারমিট বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।’
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৬ বার নিয়ম ভেঙেছে বসুমতি পরিবহন। রাইদা ভেঙেছে ১৩ বার, পরিস্থান ১১ বার, এমএম লাভলী ও অনাবিল ১০ বার, আলিফ ৯ বার, লাব্বাইক ৮ বার, তুরাগ, বলাকা ও স্বাধীন ৭ বার, প্রজাপতি, রজনীগন্ধা ও শিকড় ৬ বার, আকাশ আজমেরী, মনজিল, প্রভাতি ও বনশ্রী ভেঙেছে ৫ বার করে। এ ছাড়া আসমানী, প্রচেষ্টা, ভিক্টর, মিডলাইন, ডি লিংক, রাজধানী গুলিস্তান-গাজীপুর পরিবহন, ভিআইপি বাস ৩ বার করে অপরাধ করেছে।
বারবার নিয়ম ভাঙা বাস কোম্পানিগুলোর রুট পারমিট বাতিলের সুপারিশসহ আইনগত ব্যবস্থা নিতে রিজিওন্যাল ট্রান্সপোর্ট কমিটির (আরটিসি) কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানালেন মো. সরওয়ার।
অভিযানে প্রতিদিন বিআরটিএর ৮টি থেকে ১৪টি পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হতো। এর মাঝেও অনিয়ম চালিয়ে যেত পরিবহন মালিকরা। এখন অভিযান বন্ধ রেখেছে বিআরটিএ। এতে নৈরাজ্য আরও বেড়েছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির অভিযোগ, সরকারি তালিকানুযায়ী ভাড়া দিতে চাইলে যাত্রীদের অপমান-অপদস্থ করা হচ্ছে। দেদার চলছে সিটিং সার্ভিসও। বাসে ভাড়ার তালিকা প্রদর্শন না করে আগের ওয়েবিল অনুযায়ী যাত্রীর মাথা গুনে নেওয়া হচ্ছে তিন-চার গুণ বাড়তি ভাড়া।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সারা দেশ থেকে অভিযোগ পাচ্ছি। আমরা মরে করি বিআটিএকে জনগণের পাশে থাকা দরকার। তাছাড়া অভিযানের ফলে জনগণের কী উপকার হয়েছে বা হয়নি সেটার একটা প্রতিবেদনও করা উচিত বলে মনে করি।’
জানতে চাইলে মিরপুরের বাসিন্দা সামছুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযানের সময় ওয়েবিল মাঝে মধ্যে বন্ধ ছিল। এখন বিআরটিএর অভিযান দেখছি না। আবার ওয়েবিল শুরু হয়েছে। একটু প্রতিবাদ করলেই কটূক্তি শুনতে হচ্ছে। মিরপুর থেকে ফার্মগেট ১৫ টাকা ভাড়া হওয়ার কথা থাকলেও ৩০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।’
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে রাজি হননি বিআরটিএ’র নতুন চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘আমাদের মালিক সমিতির পক্ষ থেকে ৯টি টিম মনিটরিং করছে। কোনও পরিবহনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে পুলিশকে জানানো হচ্ছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী গণপরিবহনে হাফ ভাড়া কার্যকর করেছি।’