আমিনুর রহমান বাদশা : সাভারের সেইফকো ইউনানি লিঃ এর কর্তৃপক্ষ কোম্পানির কারখানায় জিএমপি (গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্রক্টিস) গাইডলাইন অনুসরণ না করার দায়ে কোম্পানির ম্যানুফ্যাকচার লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ খবর পাওয়া গেছে।

উক্ত অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের একটি পরিদর্শক দল সাভারের রাজাসন এলাকার সেইফকো ল্যাবরেটরীজ ইউনানি লিঃ এর কারখানায় আকস্মিক করে মহাপরিচালক এর নিকট পরিদর্শন এর প্রতিবেদন দাখিল করে।

উক্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী কারখানায় ঔষধ সামগ্রীর উতপাদন ও মান- নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউ এইচ ও) কর্তৃক প্রনিত জিএমপি ( গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্রাক্টিস) গাইড লাইন অনুসরণ করা হয় না বা ড্রাগ (কন্ট্রোল) অডিন্যান্স ১৯৮২ এর ১৫ (২) ধারা লংঘন করা করায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের স্মারক নাম্বার-ডিজিডিএ/ইউ-১০৪/০১২/১১৭৭৪, তারিখ ৪ নভেম্বর ২০২১ অনুযায়ী সেইফকো ল্যাবরেটরীজ ইউনানি লিঃ কে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
উক্ত কোম্পানি কর্তৃপক্ষ নোটিশের সন্তোষ জনক জবাব দিতে না পারায় দি ড্রাগ (কন্ট্রোল) অডিন্যান্স ১৯৮২ এর ১৫ (১) ধারা লংঘনের দায়ে দি ড্রাগ (কন্ট্রোল) অডিন্যান্স ১৯৮২ এর ১৫ (১) ধারা মোতাবেক সেইফকো ল্যাবরেটরীজ ইউনানি লিঃ এর উতপাদন লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
সাময়িক বাতিল কৃত অবস্থায় উক্ত কোম্পানি উক্ত লাইসেন্স এর আওতায় কোন প্রকার ঔষধ উতপাদন ও বাজারজাত করতে পারবেনা বলেও উক্ত অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয় ।
এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে উক্ত অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত অফিস আদেশের তারিখ – ১২ ডিসেম্বর ২০২১, স্মারক নাম্বার- ডিজিডিএ/ইউ-১০৪/০-১২/২৪৬৬০।
ঔষধ কোম্পানির সাথে সংশ্লিষ্ট একটি সুত্রের দাবি সেইফকো ল্যাবরেটরীজ ইউনানি লিঃ এর মালিক সবুর দীর্ঘদিন যাবত তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে ইউনানি ঔষধ তৈরি কালে কাঁচামাল হিসেবে বিভিন্ন প্রকার এলোপ্যাথিক ঔষধের কাঁচামাল ব্যবহার করে আসছে। উক্ত কোম্পানির গ্যাস্টিকের ঔষধ গ্যাসটোনা (ছুফফ হুমুজিন) ট্যাবলেটে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর নিষিদ্ধ রেনিটিডিন এর কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়েছে এবং উক্ত গ্যাসটোনা ট্যাবলেট এর গেটাপ হুবহু রেনিটিডিন এর মতো।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ২১/১২/২০০০ সালের প্রস্তুত কৃত সেইফকো ল্যাবরেটরীজ ইউনানি লিঃ এর অনুমোদিত ঔষধের তালিকা অনুযায়ী উক্ত কোম্পানির ৫৫ পদের ঔষধ সামগ্রীর উতপাদন ও বাজারজাত করার অনুমতি রয়েছে। তবে এসব ঔষধ সামগ্রীর উতপাদন কালে বাংলাদেশ ইউনানি ফর্মুলারি অনুযায়ী বনজ, ফলজাত ও ভেষজ ব্যাবহার করার নিয়ম থাকলেও সেয়াইফো ল্যাবরেটরীজ ইউনানি লিঃ এর মালিক ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ঔষধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ অনুযায়ী টেস্টিং ক্রাইটেরিয়া অনুসরণ না।
বরং নিজের খেয়াল খুশি মতো যৌন উত্তেজক ক্যাপসুল ট্যাবলেট ও সিরাপে সিলড্রেনাফিন সাইট্রেড, ট্রাডালাফিন সাইট্রেড, কেফেইন, আফিম উদবুদ্ধ অপিয়েট – অপিয়াম এর ব্যাবহার করার অভিযোগ উঠেছে।
ভিটামিন সিরাপ ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল এর উৎপাদন কালে ডেক্সামিথাসন, থিয়ভিট ও সিপ্রোহেপ্টাডিন ব্যাবহার করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
ইতোমধ্যে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কর্তৃক সেইফকো ল্যাবরেটরীজ ইউনানি লিঃ এর কারখানা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে কোম্পানিটি সিস গালা করেছে একাধিক বার।
র্যাব কর্তৃক ও অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে একাধিক বার মোটা অংকের অর্থ জরিমানা ও হয়েছে তারপরও চরিত্র পাল্টায় নাই সবুরের।
সবুর তার কোম্পানির উৎপাদিত ঔষধ সামগ্রীর লেবেল কার্টন এর অনুমোদনের ধার ধারেন না নিজের খেয়াল খুশি মতো লেবেল কার্টন বানিয়ে ঔষধ সামগ্রীর বাজারজাত করেন।
এছড়াও সবুর কোম্পানির যৌথ মালিকানার প্রলোভনে বিভিন্ন বেক্তির নিকট থেকে য়াতিয়ে নিয়েছে প্রায় কোটি টাকা। এবিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে দেনদরবার হয়েছে অনেকবার।
এসব বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্য ঔষধ শিল্প মালিকদের অনেকেই তাকে এড়িয়ে চলেন। সবুর অত্যন্ত ধুরন্ধর মিথ্যাশ্রয়ী লোক সে নিজেকে ক্যাসিনো সম্রাট সহ ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতাদের একান্ত কাছের লোক পরিচয় দিয়ে নিজেকে খুবই প্রভাবশালী বেক্তি হিসেবে পরিচিত করে তোলার চেষ্টা করেন।
এসকল বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বক্তব্য জানতে চাইলে তারা মুখ খুলতে নারাজ।
সেইফকো ল্যাবরেটরীজ ইউনানি লিঃ এর মালিকের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায় নাই ফলে তার কোম প্রকার বক্তব্য প্রকাশিত হলো না।