সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৮৪ শতাংশ
রোগীর ভিড়ে হিমশিম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ
যশোরে আরো ১৬ রোগী হাসপাতালে ভর্তি
ফরিদপুরে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ৬১
মহসীন আহমেদ স্বপন : স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের ইতিহাসে চলতি বছর রাজধানীসহ সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৫০ হাজার ডেঙ্গু রোগী ভর্তির রেকর্ড গড়েছে। ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪২ হাজার ২৪৩ জন অর্থাৎ আক্রান্তদের ৮৪ শতাংশ সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে আজ ১৬ আগস্ট পর্যন্ত ৪৯ হাজার ৯৯৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছের ৪০ জন।
সরকারি পরিসংখ্যানে, রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত মাত্র ৪০টি ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগীয় হাসপাতালে ভর্তি রোগীকে এ হিসাবে দেখানো হয়। কিন্তু বাস্তবে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক গুণ বেশি! সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা মাত্র ৪০ জন বলা হলেও বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালের তথ্য অনুসারে এ সংখ্যা কমপক্ষে দ্বিগুণ।
তবে আশার কথা হলো ডেঙ্গু আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তি ৫০ হাজার রোগীর মধ্যে ইতোমধ্যেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪২ হাজার ২৪৩ জন অর্থাৎ আক্রান্তদের ৮৪ শতাংশ সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ডেঙ্গু আক্রান্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৭ হাজার ৭১৬ জন। তাদের মধ্যে রাজধানীর ৪০টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ১৫ জন এবং অন্যান্য বিভাগীয় হাসপাতালে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৭০১ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডাক্তার আয়শা আক্তার জানান, গতকাল ১৫ আগস্ট সকাল ৮টা থেকে আজ ১৬ আগস্ট সকাল ৮টা পর্যন্ত নতুন ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৭১৯ জন। তাদের মধ্যে ঢাকা শহরে আক্রান্ত ৭৫৯ ও বিভাগীয় শহরে আক্রান্ত ৯৬০ জন।
রোগীর ভিড়ে হিমশিম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ : দেশের বিভিন্নস্থানে প্রতিদিনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভিড় করছেন রোগীরা। রোগীর চাপে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। স্থান সংকুলান না হওয়ায় ওয়ার্ডের পাশপাশি কনফারেন্স রুম ও বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রংপুরে ক্রমেই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২৪ ঘন্টায় নতুন রোগী ভর্তি হন ২৬ জন। এ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১০২ জন।
যশোর জেলায় ৫৬৯ জন ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ৩৮৩ জন রোগীর মধ্যে ৩১৮ জন জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান। স্থান সংকুলান না হওয়ায় ওয়ার্ডের পাশপাশি কনফারেন্স রুম ও বারান্দায় রেখে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ২৯ জন। ডেঙ্গু সনাক্তকরণ কিট থাকলেও হাসপাতালে ব্লাড সেল কাউন্টার না থাকায় আক্রান্ত রোগীদের রক্তের সেল কাউন্ট করতে হচ্ছে বাইরের ক্লিনিকগুলোতে।
শুক্রবার সকালে নতুন দুজন রোগীসহ গাইবান্ধায় সদর হাসপাতালে বর্তমানে ১১ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। ডেঙ্গু আক্রান্তদের আলাদা কর্নার করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ময়মনসিংহ মেডিকেলে ১৯৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। বিপুল সংখ্যক রোগীর ব্যবস্থাপনায় হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে কিছুটা কমেছে। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২৯৯ জন রোগী।
ঠাকুরগাঁওয়ে এ পর্যন্ত ৯৮ জন ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হলেও বেশিরভাগই ঢাকা থেকে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে এসেছে। এ পর্যন্ত ঠাকুরগাঁওয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীসহ ৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
যশোরে আরও ১৬ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি : যশোরে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৬ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সব মিলিয়ে বর্তমানে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৬৫ ডেঙ্গু রোগী। যশোর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত যশোর জেলায় ৫৬৯ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে যশোর জেনারেল হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছেন ৩৮৩ জন। যার মধ্যে ৩১৮ জন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। প্রতিদিন রোগী বাড়ায় জায়গা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ওয়ার্ডের পাশাপাশি রোগীদের হাসপাতালের কনফারেন্স রুম ও বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। যশোর জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. ওবায়দুল কাদির উজ্জ্বল জানিয়েছেন, চিকিৎসকরা ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। তবে হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ কোনও ডেঙ্গু রোগী নেই।
ফরিদপুরে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ৬১ : ফরিদপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬১ জন। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩৬০ জন। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে ১১৮ জনকে। ২০ জুলাই থেকে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়ে ফরিদপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ১ হাজার ২৫ জন। এদের মধ্যে চিকিৎসায় সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫৪৪ জন। এদিকে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৪ জন, ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ১০, বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৪, আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ২, মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৪, ফরিদপুর ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন হাসপাতালে ৫ ও আরোগ্য সদন প্রাইভেট হাসপাতালে ২ জন। ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক জানান, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য সব হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া করা হয়েছে। রোগীর সংখ্যা না কমলেও চিকিৎসায় সুস্থ্য হওয়ার সংখ্যা অনেক বেশি। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে আতঙ্কিত না হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।