রেলপথে ভোগান্তি স্বস্তি নৌ ও সড়কে

অন্যান্য অর্থনীতি এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন ঢাকা বানিজ্য সারাদেশ

ঈদের ছুটি কাটিয়ে রাজধানীতে ফিরছে মানুষ

মহসীন আহমেদ স্বপন : ঈদুল আজহা ও জাতীয় শোকদিবসের ছুটি কাটিয়ে রাজধানী ফিরতে শুরু করেছে কর্মমুখী মানুষরা। রাজধানীকে আবারও ব্যস্ত করে তার চিরচেনা রূপে ফিরিয়ে আনতে রাজধানীমুখী এ মানুষের ঢল থাকবে আজ শনিবার পর্যন্ত। শুক্রবার ঢাকার গাবতলী, মহাখালী-সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ও এয়ারপোর্ট-কমলাপুর রেলস্টেশনে রাজধানীমুখী মানুষের চাপ লক্ষ্য করা যায়। প্রতিটি বাস ও ট্রেনের সবগুলো আসনই দখলে ছিল যাত্রীদের। যাত্রীর চাপে কিছু ট্রেনের শিডিউল ওলট-পালট হতে দেখা যায়। তবে ঢাকামুখী বাসগুলোতে দুর্ভোগ ছিল না ঢাকা ছাড়ার সময়ের মত। গোপালগঞ্জ থেকে ঈদের ছুটি কাটিয়ে রাজধানী আসা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হালিমা ইয়াসমিন বলেন, রোজার ঈদে ছুটি পাইনি। তাই এ ঈদে বাড়ি যাওয়ার আলাদা একটা আনন্দ ছিল। শনিবার থেকে অফিস খোলা। তাই গতকাল শুক্রবারই চলে আসলাম। বাবা-মা এখনো বাড়ি রয়ে গেছে। আমাকে চলে আসতে হলো। পথের ভোগান্তি কেমন ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, যাওয়ার সময়ের মত ছিল না। যাওয়ার সময় ফেরির জন্য ৮ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছিল। কিন্তু আসার সময় এক ঘণ্টার মধ্যেই ফেরি পেয়েছি। এছাড়াও পথে জ্যাম ছিল না সে রকম। অন্যদিকে সরকারি চাকরিজীবীদের রোববার থেকে অফিস শুরু হবে বলে শনিবারও রাজধানীমুখী যানবাহনগুলোতে যাত্রীদের চাপ থাকবে। কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার আমিনুল হক বলেন, শুক্রবার ও শনিবার দু’দিনই যাত্রীদের চাপ থাকবে। তবে অনেকে আবার পথে ভোগান্তির ভয়ে শুক্রবারই চলে এসেছেন। স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তা আনিস হোসেন বলেন, শনিবারও অনেক চাপ থাকবে। আবার আমার সহধর্মিনী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। তার শনিবার থেকেই অফিস। তাই জ্যামের চিন্তা ও সবমিলিয়ে গতকাল শুক্রবারই চলে এলাম। শনিবার একটু বিশ্রাম নিয়ে রোববার থেকে পুরোদমে অফিস করবো। রাজধানী ফেরত এসব মানুষরা আবারও মুখর করে তুলবেন ঢাকাকে। কর্মব্যস্ত ঢাকার চিরাচরিত রূপে আবারও দেখা যাবে শত বছরের ইতিহাস সমৃদ্ধ ঢাকাকে।
যাত্রীরা বলছেন, ঢাকা ছাড়তে মনে চায় না, আবার গেলে আসতেও মনে চায় না। খারাপও লাগে।
ফিরতি ট্রেনেও পোহাতে হয়েছে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার ভোগান্তি। যাত্রীরা বলছেন, চার ঘণ্টা দেরিতে এসে পৌঁছেছি।
তবে যানজট না থাকায় সড়ক পথে স্বস্তির কথা জানিয়েছেন যাত্রীরা। তারা বলেন, পরিবারের সবার সাথে ঈদ করে ফিরছি। তবে ভাড়া অনেক বেশি।
নৌ-পথেও নির্বিঘেœ ঢাকায় ফিরতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ।
লঞ্চে আসা মানুষ বলছে, লঞ্চে একটু স্বস্তিতে এসেছি। তবে দু’এক দিন গেলেই ভিড় বেড়ে যাবে। রোববার থেকেই পুরোদমে ফিরতে হবে কাজে। তাই শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনটিতে ঢাকা ফেরত মানুষের চাপ আরো বাড়বে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
যাত্রীদের চাপ কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়ায় : ঈদের ছুটি শেষে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুট হয়ে রাজধানীতে ফিরছেন পেশাজীবী ও কর্মজীবী মানুষ। প্রায় নয়দিন প্রিয়জনের সঙ্গে ছুটি কাটিয়ে ঢাকার উদ্দেশে নদী পাড়ি দিচ্ছেন যাত্রীরা।
শুক্রবার সকাল থেকেই বেলা বাড়ার সাথে সাথে প্রতিটি লঞ্চ, স্পিডবোট ও ফেরিতে অতিরিক্ত যাত্রী ও যানবাহনের চাপ দেখা গেছে। এদের বেশিরভাগই শ্রমজীবী ও কর্মজীবী মানুষ। তবে রোববার সরকারি অফিস খোলা থাকায় রাজধানীতে ফেরার জন্য পেশাজীবীরা অনেকে শনিবার রওনা হবেন।
শুক্রবার সকালে ঘাটে দেখা গেছে, যাত্রীরা দীর্ঘ সময় লাইন দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট কেটে লঞ্চ ও স্পিডবোটে উঠছেন। প্রতিবারের মতো এবারও যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তবে বিআইডব্লিউটিসি ও লঞ্চ মালিক সমিতির দাবি, সঠিক নিয়মেই কর্মস্থলমুখী যাত্রীদের পদ্মা নদী পার করা হচ্ছে।
এদিকে যাত্রী ও যানবাহনের অতিরিক্ত চাপের কথা মাথায় রেখে বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সার্বক্ষণিক কাজ করছে। এছাড়া যাত্রীসেবা নিবিঘœ করতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের একাধিক টিমও কাজ করছে।
মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ফেরি ঘাটের ব্যবস্থাপক আব্দুস সালাম জানান, দঞ্চিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ রাজধানী ঢাকার সাথে যাতায়াতের জন্য কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুট ব্যবহার করেন। ঈদে যাত্রী সেবায় ১৮টি ফেরি, ৮৭টি লঞ্চ, দেড় শতাধিক স্পিডবোট রাখা হয়েছে। এছাড়া ৩ শতাধিক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সার্বক্ষণিক কাজ করছেন।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *