যশোরের ভবদহ অঞ্চলে বোরো চাষ অনিশ্চিত

অন্যান্য এইমাত্র

!! পাঁচ বছর আগেও ভবদহ অঞ্চলে ২৫ হাজার হেক্টরে বোরো আবাদ হতো।কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে এসব জমিতে বোরো আবাদ হচ্ছে না !!


বিজ্ঞাপন

সুমন হোসেন, অভয়নগর (যশোর)ঃ
যশোরের ভবদহ অঞ্চলে বোরো চাষে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এলাকার বিলগুলো জলাবদ্ধ থাকায় অন্তত ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা সম্ভব হবে না বলে অশঙ্কা করছেন সাধারন কৃষকরা।

জলাবদ্ধ বিল থেকে পানি অপসারণ করতে না পারলে এসব জমিতে ধান আবাদ করা সম্ভব হবে না জানিয়েছেন তারা। এ পরিস্থিতিতে বোরো আবাদ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন ভবদহ অঞ্চলের ৫০ হাজার কৃষক।

যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলা এবং খুলনার ডুমুরিয় ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ ভবদহ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। এই ভবদহ অঞ্চলে আনুমানিক ছোট-বড় ৫২টি বিল রয়েছে। মুক্তেশরী, শ্রী, টেকা ও হরী নদ-নদীর জোয়ার ভাটার সঙ্গে এসব বিলের পানি ওঠানামা করে।

কিন্তু পলি পড়ায় নদীগুলো নব্যতা হারিয়েছে। ফলে নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে না। এ অবস্থায় বর্ষা মৌসুমে বিলগুলোতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এ অবস্থায় গত ১৮ থেকে ২০ সেপ্টেম্বরের ভারী বৃষ্টিতে অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার অন্তত ১২০ টি গ্রাম তলিয়ে যায়।

অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা তিনটির ভবদহ অঞ্চলে কৃষক আছেন প্রায় ৫০ হাজার। ওই অঞ্চলে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হতো। ডিসেম্বল থেকে শুরু এপ্রিল পর্যন্ত বোরো মৌসুম। বোরোর বীজতলা তৈরীর সময় ১৫ ডিসেম্বও থেকে ১০ জানুয়ারী পর্যন্ত।

বোরো ধানের চারা রোপনের সময় ১ থেকে ৩১ জানুয়ারী পর্যন্ত। গত বছর ভবদহ অঞ্চলে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছিলো।বিল বোকড়, বিল খুকশিয়া, বিল কেদারিয়া, বিল কপালিয়া, বিল ডুমুর এবং বিল পায়রার ওপরের অংশে সেচ দিয়ে বোরো ধান চাষ করেছিলেন কৃষকেরা।

অভয়নগরের ভবদহ অঞ্চলে মোট আবাদী জমি আছে ৮ হাজার ৫শ’ ২৪ হেক্টর। তার মধ্যে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো গত বছর ৫ হাজার ৮শ’ ৯০ হেক্টর জমি। এবার এখনো কৃষি জমি জলাবদ্ধ রয়েছে ১ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমি।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভবদহ অঞ্চলের বিল বোকড়, বিল খুকশিয়া, বিল কেদারিয়া, বিল কপালিয়া, বিল ডুমুর, বিল গান্ধিমারি, বিল গজালমারি ও বিল পায়রায় শুধু পানি আর পানি। বিলের কোথাও কোনো ধান ক্ষেত নেই। বিলের পানিতে ভাসছে শাপলা।

অভয়নগর উপজেলার ডহর মশরহাটি গ্রামের কৃষক নির্মল বিশ্বাসের বিলে জমি আছে পাঁচ বিঘা। জমিতে তিনি বোরো চাষ করতেন।

জলাবদ্ধ থাকায় পাঁচ বছর ধরে তিনি তার জমিতে বোরো চাষ করতে পারেন নি। তিনি বলেন, বিলে শুধু জল আর জল। পাঁচ বছর ধরে একই অবস্থা। এবারের অবস্থা আরও খারাপ। এবার একটিও ধানের চারা লাগানোর মতো অবস্থা নেই। পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে আছি।

মনিরামপুর উপজেলার সুজাতপুর গ্রামের কৃষক প্রভাস বিশ্বাসের বিলে জমি আছে দেড় বিঘা। সব জমি জলাবদ্ধ। তিনি বলেন, এখোনো বিলে ছয়-সাত হাত জল। পাঁচ বছর ধরে কোনো ধানের মুখ চোখে দেখিনি। এবারও ধান হবে না। পরিবারে চার জন লোক। এবার মনে হয় না খেয়ে মরতে হবে আমাদের।

মনিরামপুর উপজেলার কৃষি কার্যালয়ে সূত্রে জানায়, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বোরো চাষের জমি প্রায় ১০ হাজার হেক্টর। উপজেলা কৃষি কর্মকতা আবুল হাসান বলেন, কয়েক বছর ধরে ভবদহ অঞ্চলের বিলগুলো জলাবদ্ধ থাকছে। এবারের অবস্থা আরও খারাপ। পানি নামছে না। এবার বিলগুলোতে বোরোর আবাদ হবে না।

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রণজিৎ বাওয়ালী বলেন, জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে টিআরএম’র (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট- জোয়ারাধার) কোনো বিকল্প নেই। বার বার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও টিআরএম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না।
জানতে চাইলে পাউবো যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তাওহীদুল ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানে বড় পরিসরে সেচের কার্যক্রম গ্রহন করা হচ্ছে। আট কিলোমিটার নদী খনন করা হবে। এতে পানির প্রবাহ সৃষ্টি হবে।